![বিমান টিকিটের যৌক্তিক দাম নির্ধারণ করতে হবে](uploads/2024/07/02/Editorial-1719896002.gif)
বিদেশি এয়ারলাইনসগুলোর বিপুল ডলার আটকে থাকা এবং সিন্ডিকেটের কারণে চাহিদা বাড়লে লাগামছাড়া হয়ে উঠছে বিমানের টিকিটের দাম। চাহিদা বাড়লে দাম বাড়বে, এটাই স্বাভাবিক। যদি সেটা কয়েক গুণ বেড়ে যায় তখন তা সবার নজরে পড়ে। বিমান টিকিটের বেলায় যাত্রীরা এমন পরিস্থিতির শিকার হয়েছেন সম্প্রতি। ৩০ হাজার টাকার টিকিট লাখ টাকায় কিনেও ফ্লাইট পাননি অনেকে। এর বড় উদাহরণ হলো মালয়েশিয়াগামী কর্মীরা।
বিদেশি এয়ারলাইনসের পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ রুটের টিকিটের দামও বাড়তি। বাংলাদেশের বিদেশি এয়ারলাইনসের টাকা আটকে থাকার ঘটনা এর আগেও ঘটেছে। গত বছরের জুনেও একবার পাওনা আদায়ের তাগিদ দিয়েছিল আইএটিএ। সে সময় সংস্থাটির বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছিল, প্রায় ২১৪ দশমিক ১ মিলিয়ন ডলার আটকা পড়েছে।
বিদেশে এয়ারলাইনসগুলোর বিপুল পরিমাণ ডলার আটকে থাকায় সামনের দিনগুলোতে এই ডলারের ভবিষ্যৎ মুনাফা ধরে দাম নির্ধারণ করায় বাংলাদেশ থেকে টিকিটের দাম আরও বাড়তে পারে। এমন শঙ্কা অ্যাভিয়েশন খাত-সংশ্লিষ্টদের। তারা বলছেন, এর মধ্যে কয়েকটি এয়ারলাইনস তাদের ফ্লাইট সংখ্যা কমিয়েছে। ফলে ভবিষ্যতে বিদেশযাত্রার ক্ষেত্রে নানা জটিলতায় পড়তে পারেন বাংলাদেশি যাত্রীরা।
গত এপ্রিলে এক বিজ্ঞপ্তিতে বৈশ্বিক এয়ারলাইনসগুলোর আন্তর্জাতিক জোট ইন্টারন্যাশনাল এয়ার ট্রান্সপোর্ট অ্যাসোসিয়েশন (আইএটিএ) জানায়, বাংলাদেশের বিদেশি এয়ারলাইনসগুলোর পাওনা প্রায় ৩২৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার আটকে আছে। অবিলম্বে এ অর্থ পরিশোধের তাগাদাও দিয়েছে সংস্থাটি। সংস্থাটির প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের সহসভাপতি ফিলিপ গোহকে উদ্ধৃত করে বলা হয়, বর্তমান পরিস্থিতিতে বিদেশি মুদ্রা ব্যবহারে কৌশলী হওয়া দেশগুলোর জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
এটি সরকারের জন্য একটা কঠিন চ্যালেঞ্জও। তবে সময়মতো এবং কার্যকর পদ্ধতিতে দেনা পরিশোধকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। বিমান সংযোগ হ্রাস ঠেকানো, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন, বিদেশি বিনিয়োগ এবং রপ্তানির সম্ভাবনাকে ঠিক রাখার জন্য এটি জরুরি।
অ্যাভিয়েশন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ পরিস্থিতি দীর্ঘস্থায়ী হলে বিদেশি এয়ারলাইনসগুলো বাংলাদেশ থেকে নতুন ফ্লাইট শুরু করার বিষয়ে আগ্রহ হারাবে। ডলার লেনদেনের এই পরিস্থিতির কারণে বাংলাদেশ সম্পর্কে বহির্বিশ্বে নেতিবাচক ধারণা তৈরি হবে। ভাবমূর্তি সংকটে পড়বে। বিদেশি এয়ারলাইনস যারা ভবিষ্যতে বাংলাদেশে অপারেট করতে চায়, ডলারের এই লেনদেন দেখে তারা নিরুৎসায়িত হবে।
বর্তমানে দেশে অ্যাভিয়েশন বাজারের ৮০ ভাগের নিয়ন্ত্রণই বিদেশি এয়ারলাইনসগুলোর হাতে। ফলে বিদেশি এয়ারলাইনসের টিকিটের দাম বেড়ে গেলে তা সামগ্রিকভাবে পুরো বাজারেই প্রভাব ফেলে। এতে সামনের দিনগুলোতে বেড়ে যেতে পারে আকাশ পথে ভ্রমণ ব্যয়।
বিমান পরিচালনা পর্ষদের সাবেক সদস্য ও অ্যাভিয়েশন বিশেষজ্ঞ কাজী ওয়াহেদুল আলম খবরের কাগজকে বলেন, বিমানের টিকিটের চাহিদার বিপরীতে আসন সংখ্যা বেশির ভাগ রুটেই কম রয়েছে। ফলে যখন চাহিদা একটু বেড়ে যায়, অর্থাৎ আসন আছে ১০০টি আর চাহিদা ১২০টি।
তখন এয়ারলাইনসগুলো টিকিটের দাম বাড়িয়ে দেয়। এই সুযোগে কিছু ট্রাভেল এজেন্সি টিকিটগুলো কিনে স্টক করে। পরে সেগুলো তারা অনেক বেশি দামে বিক্রি করে। এর পাশাপাশি দেশে যেভাবে ডলারের দাম বাড়ছে, তাতে সামনের দিনে টিকিটের দাম আরও বাড়তে পারে।
অ্যাভিয়েশন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিদেশি এয়ারলাইনস যারা এ দেশে পরিচালনা করছে কিন্তু মাসের পর মাস তারা টাকা ফেরত দিতে পারছে না। তারা স্বাভাবিকভাবে ক্ষতি পোষাতে নানামুখী চেষ্টা করবে। অভিযোগ রয়েছে, বিদেশি এয়ারলাইনসগুলো টিকিটের দাম বাড়িয়ে তাদের কস্ট অব ফান্ড সমন্বয় করছে। সামগ্রিকভাবে এতে দেশের ক্ষতি হচ্ছে।
এর ফলে বাংলাদেশ থেকে টাকা বিদেশে চলে যাচ্ছে অবৈধভাবে হুন্ডির মাধ্যমে। এই প্রবণতা রোধ করতে হবে। সিন্ডিকেটমুক্ত রাখতে হবে। বিমান টিকিটের যৌক্তিক দাম নির্ধারণ করতে হবে। যাতে সহজেই বিমানযাত্রীরা তাদের কাঙ্ক্ষিত টিকিট সংগ্রহ করতে পারে। বিদেশি এয়ারলাইনসগুলোর ব্যবসায়ী বিনিয়োগ পরিবেশ সহজ করতে হবে। এ ব্যাপারে সরকারকে যথাযথ ভূমিকা পালন করতে হবে।