![কুষ্টিয়া ও রাজবাড়ীতে বৃষ্টির আশায় বিশেষ নামাজ](uploads/2024/04/23/1713866697.10.-Kustia.jpg)
তীব্র দাবদাহ থেকে রক্ষা এবং বৃষ্টির প্রত্যাশায় কুষ্টিয়ার কুমারখালী ও রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দিতে বিশেষ নামাজ ‘ইস্তিসকার’ আদায় করা হয়েছে। গতকাল সোমবার সকাল পৌনে ৯টায় কুমারখালী উপজেলার যদুবয়রা ইউনিয়নের বল্লভপুর গ্রামের খড়িলার বিলে এবং দুপুর আড়াইটায় বালিয়াকান্দি উপজেলার বহরপুর ইউনিয়নের শহিদ নগর ঈদগাহ মাঠে এ নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। নামাজ শেষে বিশেষ মোনাজাতের আয়োজন করা হয়।
নামাজে আসা লোকজন জানান, কালবৈশাখী মৌসুমের প্রায় এক মাস হলেও বৃষ্টির দেখা নেই। নদী-নালা, খাল-বিল, পুকুর শুকিয়ে গেছে। পানির স্তর নেমে যাওয়ায় পানি উঠছে না অগভীর নলকূপ ও সেচ পাম্পে। তীব্র তাপপ্রবাহে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে উঠছে। মাঠে রোদে পুড়ে কৃষকের ফসল নষ্ট হচ্ছে। আম-লিচুর গুটি ঝরে পড়ছে। শ্রমজীবী মানুষ রোদে বেশিক্ষণ কাজ করতে পারছেন না। এমন পরিস্থিতিতে তারা বৃষ্টির জন্য সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনার আয়োজন করেছেন। নামাজে সবাইকে অংশ নেওয়ার জন্য আগে থেকেই মাইকে প্রচার করা হয়েছিল।
কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে খোলা আকাশের নিচে নামাজ শেষে মোনাজাত করেন স্থানীয়রা। এতে ইউনিয়নের বল্লভপুর, রসুলপুর, ভবানীপুর, জোতমোড়া ও বরইচারা গ্রামের দুই শতাধিক মানুষ অংশ নেন।
নামাজ ও মোনাজাত পরিচালনা করেন রসুলপুর মাদ্রাসার হেফজখানার শিক্ষক মাওলানা মুফতি নাসির উদ্দিন আল ফরিদী। আজ মঙ্গলবার ও আগামীকাল বুধবারও একই জায়গায় সকাল ৮টায় বৃষ্টির জন্য নামাজ ‘ইস্তিসকার’ অনুষ্ঠিত হবে বলে জানিয়েছেন আয়োজকরা।
সকালে খড়িলার বিলে গিয়ে দেখা গেছে, পাঞ্জাবি, শার্ট, টি-শার্ট, লুঙ্গি, গামছা, টুপি পরে জায়নামাজ, খেজুরের পাটি, গামছা নিয়ে নানা বয়সী মানুষ মাঠে হাজির হয়েছেন। হুজুর প্রথমে মুসল্লিদের উদ্দেশে নামাজের নিয়ম কানুন বলেন। এরপর সবাই দুই রাকাত নামাজ আদায় করেন। নামাজ শেষে দুই হাত তুলে সবাই প্রচণ্ড গরম, তীব্র দাবদাহ ও খরা থেকে রক্ষা পেতে এবং বৃষ্টির জন্য মোনাজাত করেন তারা।
এ সময় কৃষক মিরাজুল রহমান বলেন, ‘বৃষ্টি-বাদল নেই। খুব তাপ। কলে (টিউবওয়েলে) ও বোরিংয়ে পানি উঠছে না। খেত খোলা (ফসলের মাঠ) নষ্ট হচ্ছে। তাই বৃষ্টি চেয়ে নামাজের মধ্যে আল্লাহকে রাজি খুশি করানোর জন্য কান্নাকাটি করছি।’
রসুলপুর মাদ্রাসার হেফজখানার শিক্ষক মাওলানা মুফতি নাসির উদ্দিন আল ফরিদী বলেন, ‘কোরআন-হাসিদের আলোকে যতটুকু জানা গেছে, তা হলো মানুষের সৃষ্ট পাপের কারণে মহান আল্লাহ এমন অনাবৃষ্টি ও খরা দেন। বৃষ্টিপাত না হলে আমাদের প্রিয় নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) সাহাবিদের নিয়ে খোলা ময়দানে ইস্তিসকা নামাজ আদায় করতেন। সেজন্য আমরা মহান সৃষ্টিকর্তার কাছে পাপের তওবা করে এবং ক্ষমা চেয়ে দুই রাকাত নামাজ আদায় করে বৃষ্টির জন্য প্রার্থনা করছি।’
দহখোলা দক্ষিণ ভবানীপুর কওমি হাফেজিয়া মাদ্রাসার সহকারী শিক্ষক মাওলানা রাসেল মোল্লা জানান, ‘দীর্ঘদিন অনাবৃষ্টির কারণে মানুষ, পশুপাখি সবাই খুব কষ্টে আছেন। সেজন্য তারা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়েছেন। আগামী মঙ্গলবার ও বুধবার একই জায়গায় বৃষ্টির নামাজ অনুষ্ঠিত হবে।’
এদিকে রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দি উপজেলার বহরপুর ইউনিয়নের শহিদ নগর ঈদগাহ মাঠে দুই শতাধিক মুসল্লি এ বিশেষ নামাজে অংশ নেন। নামাজ শেষে অনাবৃষ্টি থেকে মুক্তির জন্য বিশেষ মোনাজাত পরিচালনা করেন বহরপুর হাট কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের ইমাম মুফতি সাইফুল ইসলাম মুহাদ্দিস।
নামাজ পড়তে আসা মো. তরিকুল হক বলেন, ‘গতকাল মসজিদে মাইকিং করা হয়েছে। বৃষ্টির জন্য শহিদ নগর ঈদগাহ মাঠে সালাতুল ইস্তিসকার নামাজ আদায় করা হবে। এ জন্য আমিসহ অনেকেই এখানে এসেছি। আল্লাহর কাছে বৃষ্টির জন্য কান্নাকাটি করেছি। আল্লাহ্ ইচ্ছা করলে আমাদের বৃষ্টি দেবেন। কয়েক বছর আগে বৃষ্টির জন্য আমরা নামাজ আদায় করেছিলাম। এরপরই বৃষ্টি হয়েছিল।’
প্রখর রোদ আর অসহ্য গরমকে উপেক্ষা করে বেলা ২টা থেকেই বিশেষ এই প্রার্থনার জন্য ঈদগাহ ময়দানে উপস্থিত হতে শুরু করেন মুসল্লিরা। নামাজ শেষে মোনাজাতে ইমাম সবার কৃতকর্মের জন্য মহান সৃষ্টিকর্তার কাছে ক্ষমা চান। সেই সঙ্গে তীব্র তাপপ্রবাহের কারণে পশুপাখিসহ সকল জীবের কষ্টের কথা তুলে ধরেন। এ সময় সবার চোখেই ছিল পানি। নিজেদের কৃতকর্মের ক্ষমা চেয়ে আল্লাহর কাছে বৃষ্টির জন্য প্রার্থনা করেন। এই নামাজ মঙ্গল ও বুধবার আরও দুই দিন একই জায়গাতে অনুষ্ঠিত হবে বলেও মাইকে জানানো হয়।