![৪ উপজেলায় কোথাও পানি নেই](uploads/2024/04/26/1714102352.Rajbari-Water-Cricies-Story.jpg)
সোমবার সকাল সাড়ে ৮টা। রাজবাড়ীর পাংশা উপজেলার আন্দুলিয়া মাঠে কয়েকজন শ্রমিককে মাটি খুঁড়তে দেখা যায়। পাশেই দাঁড়িয়ে ছিলেন জমির মালিক আব্দুস সালাম। কেন গর্ত খুড়ছেন জিজ্ঞেস করলে বলেন, ‘শ্যালোমেশিনে পানি উঠছে না। তাই ১২ ফুট গর্ত করে পানি উঠানোর চেষ্টা করছি!’ প্রায় একই চিত্র কালুখালী উপজেলার মদাপুর ইউনিয়নের দামকুদিয়া গ্রামে। ওই এলাকার প্রতিটি বাড়িতেই নলকূপ রয়েছে। তবে কোনোটি দিয়েই পানি ওঠে না। গ্রামের পাশেই গান্ধিমারা বাজার। সেখানে থাকা সব নলকূপ অকেজো পড়ে আছে।
রাজবাড়ীর চার উপজেলায় (সদর, কালুখালী, বালিয়াকান্দি ও পাংশা) পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। পানির স্তর ২৫ ফুটের বেশি নিচে নেমে যাওয়ার এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। অনেক এলাকায় টিউবওয়েলে পানি ওঠা একেবারে বন্ধ হয়ে গেছে। দীর্ঘক্ষণ চাপার পর কোথাও পানি উঠলেও তার পরিমাণ খুবই সামান্য। এক জগ পানি ভর্তি করতে হাঁপিয়ে যেতে হয়। এ ছাড়া দুপুর বেলা একদম পানি থাকে না। পুকুরসহ বিভিন্ন জলাশয় শুকিয়ে যাওয়ায় সংকট তীব্র হয়েছে। ফসলি জমিতে সেচ দেওয়া যাচ্ছে না। অনেক জমির পাট পানির অভাবে মারা যাচ্ছে। স্থানীয়রা বলছেন, দেড় মাস ধরে তারা এ সমস্যার সম্মুখীন হয়েছেন। এতে গৃহস্থালির কাজের পাশাপাশি ফসলের খেতে সেচ দেওয়া যাচ্ছে না। পানির জন্য অনেকেই টিউবওয়েলের সঙ্গে বৈদ্যুতিক মোটর বসিয়েছেন। তবে বিকল্প কিছু নেই জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট দপ্তর থেকে। শুধু ‘বৃষ্টির অপেক্ষায়’ থাকতে বলা হয়েছে।
সদর উপজেলার বানিবহ গ্রামের গৃহবধূ দীপালি শীল বলেন, ‘ফাল্গুন মাসের শেষদিকে নলকূপে খুবই কম পানি উঠত। তখন আমরা মোটর বসিয়েছিলাম। ১৫ দিন ধরে মোটরেও পানি উঠছে না। বাড়িতে দুটি গরু আছে। সংসারের সব কাজের জন্য পানি দরকার।’
বালিয়াকান্দিতে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলা শহরের সব নলকূপই নষ্ট। গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় উপজেলা প্রশাসন থেকে সাব মার্সেবল মোটর বসানো হয়েছে। ওই মোটর থেকে সবাই পানি সংগ্রহ করছেন। এ ছাড়া বহরপুর, নবাবপুর, ইসলামপুর, জঙ্গল ইউনিয়নেও একই অবস্থা। বালিয়াকান্দি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘কয়েক বছর ধরেই পানির সংকট দেখা দিয়েছে। তবে এ বছর একটু বেশি। নলকূপে পানি একদমই উঠতে চায় না। নদী-নালাতেও পানি নেই।’
ওই উপজেলার দামুকদিয়া গ্রামের গৃহবধূ মমতাজ বেগম বলেন, ‘পুকুর, খাল কোথাও পানি নেই। আমাদের নলকূপই ভরসা। এই পানি দিয়েই আমাদের গোসল খাওয়া-দাওয়া করতে হয়। পানির অভাবের কারণে আমার দুইটা গরু বিক্রি করে দিয়েছি। সংসারে পাঁচজন মানুষ। এত পানি তুলতে পারি না। অনেক সময় ভাতের চাল একবার ধুয়েই রান্না করি।’
একই গ্রামের ফুলবানু বেগম বলেন, ‘বছরের এই সময় আমরা ধান সিদ্ধ করে রাখি। কিন্তু পানির অভাবে এবার পারিনি। গরুর গোসল করাতে পারি না। মাঝে মাঝে মনে হয় মরুভূমিতে বাস করছি।’
পাংশা উপজেলার আন্দুলিয়া গ্রামের কৃষক ময়েন উদ্দিন বলেন, ‘মাঠে ১২ ফুট গর্ত করে সেখানে শ্যালোমেশিন বসিয়ে দুইবার পাট খেতে সেচ দিয়েছি। এখন জমি ফেটে চৌচির। শ্যালোমেশিনেও পানি উঠছে না। শিগগিরই বৃষ্টি না হলে সব পাট মরে যাবে।’
একই উপজেলার বহলাডাঙ্গা গ্রামের কৃষক আব্দুস সালাম বলেন, ‘বাড়িতে হাজার চেষ্টা করলেও দুপুরে নলকূপে পানি ওঠে না। খুব ভোরে পানি তুলে রাখি। পাটখেতের অবস্থা খুবই খারাপ। বৃষ্টি না হলে সর্বস্বান্ত হয়ে যাব।’
রাজবাড়ী জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী আবু জাকারিয়া বলেন, ‘সদর, পাংশা, বালিয়াকান্দি ও কালুখালি এই চার উপজেলায় গ্রীষ্মকালে পানির স্তর ২৫ ফুটের নিচে নেমে যায়। তখন হাতে তোলা নলকূপে আর পানি ওঠে না।’
আপাতত বৃষ্টির জন্য অপেক্ষার বিকল্প নেই জানিয়ে এই কর্মকর্তা বলেন, ‘বৃষ্টি হলে পানির স্তর উপরে উঠে আসবে। তখন এ সমস্যার সমাধান হবে। সব নলকূপেই তখন পানি আসবে। সে পর্যন্ত অপেক্ষা করা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই।’