![বন্যায় বিক্রি বেড়েছে ডিঙি নৌকার](uploads/2024/06/25/flood-1719305881.jpg)
হবিগঞ্জের হাওরগুলো এখন পানিতে টইটুম্বুর। এই সময়টাতে হাওরপাড়ের মানুষের জীবন-জীবিকার প্রধান সঙ্গী নৌকা। দৈনন্দিন নানা কাজে প্রতিটি পরিবারেই ডিঙি নৌকা এখন অপরিহার্য বাহন।
বর্তমানে ছোট এই ডিঙি নৌকার কয়েকগুণ চাহিদা বাড়িয়েছে সিলেট অঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতি। ফলে হবিগঞ্জের বাজারগুলোতে ব্যাপকভাবে বিক্রি হচ্ছে ডিঙি। এমনকি সিলেটের পাইকাররাও হবিগঞ্জ থেকে নৌকা নিয়ে যাচ্ছেন।
জেলার হাওর অঞ্চলীয় পাঁচ উপজেলা নবীগঞ্জ, বাহুবল, বানিয়াচং, আজমিরীগঞ্জ ও লাখাইয়ের বিভিন্ন জায়গায় বসেছে নৌকার হাট। একইসঙ্গে নৌকা বানাতে এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন কারিগররা। দিন কিংবা রাত, সমান তালে নৌকা বানাতে হচ্ছে কারিগরদের।
বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা যায়, কাঠের মানভেদে ২০-২৪ ফুটের প্রতিটি নৌকা বিক্রি হচ্ছে সাড়ে চার হাজার থেকে ছয় হাজার টাকায়।
বিক্রেতারা জানান, গত এক সপ্তাহ ধরে প্রতিদিন জেলার বিভিন্ন বাজরে ১০০-১৫০টি ডিঙি নৌকা বিক্রি হচ্ছে। এমন চাহিদা থাকবে আগামী এক মাস। যেখানে ডিঙি নৌকাকে ঘিরে ব্যবসা হবে প্রায় দেড় কোটি টাকার বেশি।
ক্রেতাদের অভিযোগ, বন্যার কারণে নৌকার চাহিদা বাড়ায় হঠাৎ করেই বিক্রেতারা দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন। এতে নিম্ন আয়ের মানুষেরা নৌকা কিনতে হিমশিম খাচ্ছেন।
ফেঞ্চুগঞ্জ থেকে হবিগঞ্জের নবীগঞ্জে ডিঙি কিনতে যাওয়া ফরিদ মিয়া খবরের কাগজকে বলেন, ‘বন্যার কারণে ফেঞ্চুগঞ্জের অধিকাংশ জায়গা পানিতে তলিয়ে গেছে। মানুষ ঘর থেকে বের হতে পারছেন না। তাই নৌকার চাহিদা বেড়েছে। দুইদিন আগেও ২০টি নৌকা নিয়ে গেছি। আজ আবার আসছি। তবে বাজারে এখন নৌকা খুব বেশি পাওয়া যাচ্ছে না।’
ইনাতগঞ্জ থেকে নৌকা কিনতে আসা আফজাল মিয়া বলেন, ‘বন্যায় চারপাশ ডুবে গেছে। ঘর থেকে বের হওয়ার কোনো সুযোগ নাই। তাই নৌকা কিনতে আসছি। নৌকা ছাড়া কোনো গতি নাই। নৌকার দাম একটু বেশি। বিক্রেতারাও দাম ছাড়ছেন না।’
একই এলাকার আরেক ক্রেতা হায়দার আলী বলেন, ‘আমাদের ভাটির মানুষের বর্ষায় নৌকা খুবই দরকার। এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় যাইতে নৌকার দরকার। গরুর জন্য পেনা (কচুরিপানা) কাটতে হয়। আরও নানা কাজে আমাদের নৌকা লাগে। তাই নৌকা কিনতে আইছি।’
তবে বিক্রেতারা বলছেন, নৌকা তৈরির উপকরণ কাঠ ও লোহার দাম বেড়েছে। সেই সঙ্গে বেড়েছে শ্রমিকের মজুরি। যে কারণে বিক্রি বাড়লেও লাভের পরিমাণ সীমিত।
নবীগঞ্জ শহরের হাসপাতাল এলাকার নৌকা বিক্রেতা ঝন্টু দাস বলেন, ‘বাজারে নৌকা নাই। বন্যার কারণে চাহিদা বেড়েছে কয়েকগুণ। যে কারণে দাম একটু বেশি। এ ছাড়া আগে কাঠের দাম ছিল ২৫০ টাকা ফুট, এখন এটি ৪০০ টাকা। শ্রমিকের মজুরি ছিল ৫০০ টাকা, সেটি এখন ৮০০ টাকা। তাহলে নৌকার দামতো কিছু বাড়বেই।’
আরেক বিক্রেতা অরুণ কুমার বলেন, ‘দাম যে খুব বেশি বেড়েছে তা নয়। প্রতিটি নৌকায় ২০০-৩০০ টাকা বেড়েছে। আমরা সীমিত লাভে নৌকাগুলো বিক্রি করে দিচ্ছি। কারণ সবাই এখন বিপদে আছে, তাদের হাতে টাকা-পয়সা নেই। এটাতো আমাদের বিবেচনা করতে হবে। আবার কাঠ, লোহা, শ্রমিকের মজুরি বাড়ার কারণে আমাদেরও কিছু করার নেই।’
কাজল সরকার/পপি/অমিয়/