![বর্ষার শুরুতেই যমুনাপাড়ে ভাঙন](uploads/2024/06/28/Jamalpur-Flood-1719546894.jpg)
‘নদী ভাঙতে ভাঙতে সব শ্যাষ হয়া গ্যাছে। স্কুল, মসজিদ, মাদ্রাসা, গ্রাম সব বিলীন হয়া গ্যাছে। আমাদের থাকার জায়গা নাই। সরকার এহন যদি কোনো পদক্ষেপ না নেয়, তাহলে আমাদের পাখির মতো উড়াল পাইরা বেড়াইতে হইব। আমাদের যদি থাকার জায়গা না থাকে, তাহলে আমরা সরকার দিয়া কী করমু? নেতা, চেয়ারম্যান, এমপি দিয়াই কী করমু?
কষ্ট আর আক্ষেপ নিয়ে এভাবেই বলছিলেন জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার চিকাজানি ইউনিয়নের যমুনা তীরবর্তী বরখাল এলাকার বাসিন্দা আমির হোসেন। যমুনার পাড়ে বসবাস করা এই দিনমজুরের বসতবাড়ি দুইবার ভাঙনের কবলে পড়েছে। এবারও তার বাড়ি ভাঙনের হুমকিতে রয়েছে। আমির হোসেনের সঙ্গে কণ্ঠ মিলিয়ে একই এলাকার বাসিন্দা তোতা মিয়া জানান, তার বাড়ি চারবার নদী ভাঙনের কবলে পড়েছে। গৃহবধূ আঙ্গুরি, বৃদ্ধা হাসনা বেগম জানান, নদী ভাঙনের কারণে তারা এখন নিঃস্ব। অন্য কোথাও আশ্রয় নেওয়া বা বাড়িঘর করার মতো সামর্থ্য তাদের নেই। তবুও তারা নদী পাড়েই বসবাস করতে চান। তাই ভাঙন প্রতিরোধে নদীর পাড়ে বাঁধ দেওয়ার দাবি তাদের।
জামালপুরে বর্ষার শুরুতেই পানি বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে দেওয়ানগঞ্জ, মাদারগঞ্জ, বকশীগঞ্জ, মেলান্দহ উপজেলায় যমুনা, ব্রহ্মপুত্র, জিঞ্জিরাম, দশানী, আলাইসহ অন্যান্য নদ-নদীতে ভাঙন দেখা দিয়েছে। পানি বৃদ্ধির কারণে গত দুই সপ্তাহের অব্যাহত ভাঙনে এরই মধ্যে বসতভিটা ও ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে।
প্রতিদিনই নদীগর্ভে বিলীন হচ্ছে বসতবাড়ি, ফসলি জমি ও অন্যান্য স্থাপনা। এসব এলাকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, মসজিদ, মাদ্রাসা, বিভিন্ন স্থাপনাসহ আরও অন্তত দশটি গ্রাম ভাঙনের হুমকিতে রয়েছে। গত দুই সপ্তাহে শতাধিক ঘরবাড়ি ভেঙে কয়েকশ পরিবার ভিটামাটি হারিয়েছে, বিলীন হয়েছে কয়েকশ একর ফসলি জমি। অনেকেই ভাঙনের হুমকিতে ঘরবাড়ি অন্যত্র সরিয়ে নিচ্ছেন। ভাঙনকবলিতরা পরিবার-পরিজন ও গবাদিপশু নিয়ে আশ্রয় নিয়েছে খোলা আকাশের নিচে অথবা অন্যের বাড়িতে। নদী ভাঙনের শিকার ক্ষতিগ্রস্তরা জানান, প্রতি বছর ভাঙন দেখা দিলেও সরকার কোনো পদক্ষেপ নেন না। তাই নদী শাসন ও ভাঙন প্রতিরোধে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের দাবি তাদের।
জামালপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম জানান, বর্ষা মৌসুমে পানি বৃদ্ধির কারণে জেলার বিভিন্ন নদ-নদীতে ভাঙন দেখা দিয়েছে। এরই মধ্যে বেশকিছু পয়েন্টে বালিভর্তি জিও ব্যাগ ডাম্পিং করা হচ্ছে। স্থায়ীভাবে ভাঙন প্রতিরোধে বাঁধ নির্মাণের জন্য তিনটি প্রকল্প দাখিল করা হয়েছে। বর্তমানে মাদারগঞ্জ উপজেলায় স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের একটি প্রকল্প চলমান রয়েছে। এ ছাড়াও একটি সমীক্ষা প্রকল্প রয়েছে, এসব প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে স্থায়ীভাবে নদী ভাঙন প্রতিরোধ সম্ভব হবে।