যশোর সরকারি মাইকেল মধুসূদন (এমএম) কলেজে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহীন চাকলাদারের অনুসারী ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা শক্তির মহড়া দিয়েছেন।
বৃহস্পতিবার (২৭ জুন) দুপুরে ক্যাম্পাসে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে ছাত্র ও তরুণ প্রজন্মকে উজ্জীবিত করার প্রচার মিছিলের’ নামে তারা এ মহড়া দেন।
এদিকে ক্যাম্পাস ও হল দখল নিয়ে ছাত্রলীগের দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছে। বড় ধরনের সহিংসতার আশঙ্কাও করছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। এমনকি এদিন অনার্স চতুর্থ বর্ষের ফাইনাল পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের মহড়া ও স্লোগানে সাধারণ শিক্ষার্থীদের মাঝে সৃষ্টি হয় আতঙ্ক।
এ বিষয়ে কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আবু বক্কর সিদ্দিকী বলেন, ‘কলেজ ক্যাম্পাসে কেউ পরিবেশ নষ্ট করলে তাদের কারও ছাড় নেই।’
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, জেলা আওয়ামী লীগের উপদপ্তর সম্পাদক এবং জেলা ছাত্রলীগের সভাপতির নেতৃত্বে পুরো ক্যাম্পাসে মহড়া দেন নেতা-কর্মীরা। এর আগে গত ২৩ জুন স্থানীয় সংসদ সদস্য কাজী নাবিল আহমেদের অনুসারী ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের হটিয়ে কলেজের শহিদ আসাদ হল দখলে নেন শাহীন অনুসারীরা। ছাত্রাবাসটি দেড় বছর ধরে নাবিল অনুসারীদের দখলে ছিল। ফলে ক্যাম্পাসে এতদিন আধিপত্য বিস্তার বা কোনো কর্মসূচি পালন করতে পারেননি শাহীন অনুসারীরা। হল দখলের চার দিন পর শাহীন অনুসারীরা নেতা-কর্মীদের সমাগম ঘটিয়ে শক্তির মহড়া দেখাল বলে মনে করছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
নেতা-কর্মীরা জানিয়েছেন, যশোর জেলা আওয়ামী লীগ দুটি গ্রুপে বিভক্ত। একটি পক্ষের নেতৃত্ব দেন শাহীন চাকলাদার। অন্যটির নাবিল আহমেদ। জেলার রাজনীতির গ্রুপিংয়ের মতো ক্যাম্পাসেও এই দুই শীর্ষ নেতার অনুসারীদের রাজনীতি বলয় রয়েছে। বিভিন্ন সময়ে ছাত্রলীগের দুই পক্ষের নৈরাজ্য, হল দখল, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড, হানাহানি, মাদকসেবনের কারণে সম্প্রতি কলেজ ছাত্রলীগের কমিটি বিলুপ্ত করা হয়েছে।
ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শাহীন অনুসারীরা এতদিন যারা ক্যাম্পাসমুখী ছিলেন না, হল দখলে নেওয়ার পর থেকে তারা ক্যাম্পাসে সবর্দা অবস্থান করছেন। হলের সামনে বা ক্যাম্পাসে তারা স্লোগান দিয়ে জড়ো হয়ে মহড়া দিচ্ছেন। সেই ধারাবাহিকতায় বৃহস্পতিবার সকাল থেকে অবস্থান নেন শাহীন অনুসারী হিসেবে পরিচিত ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে কলেজের শহিদ আসাদ হলের আবাসিক হলের শিক্ষার্থী ও শেখ হাসিনা ছাত্রী হলের শিক্ষার্থীদের নিয়ে মহড়া দেন ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে ছাত্র ও তরুণ প্রজন্মকে উজ্জীবিত করার প্রচার মিছিলের নামে এই কর্মসূচি পালিত হলেও মূলত এটি ছিল শাহীন অনুসারীদের শক্তির মহড়া বলে মনে করছেন শিক্ষার্থীরা। শহিদ আসাদ হল থেকে এই মিছিল শুরু হয়ে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে ভাস্কর্যের সামনে সংক্ষিপ্ত সমাবেশের মাধ্যমে শেষ হয়।
সংক্ষিপ্ত সমাবেশে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা বলেন, ‘এমএম কলেজের মাটি ছাত্রলীগের ঘাঁটি। যার নিন্ত্রয়ণকর্তা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক। এই ক্যাম্পাসে কেউ বিশৃঙ্খলা করতে এলে তাদের ছাড় দেবেন না ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। এই কলেজের শিক্ষার্থীরাই ছাত্রলীগের রাজনীতি করবেন। কোনো অছাত্র-বহিরাগতদের এই ক্যাম্পাসে জায়গা দেওয়া হবে না।’
জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি সালাউদ্দিন কবির পিয়াসের মুঠোফোনে কয়েক দফা যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। আর জেলা আওয়ামী লীগের উপদপ্তর সম্পাদক ওহিদুল ইসলাম তরফদার বলেন, ‘স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে ছাত্র ও তরুণ প্রজন্মকে উজ্জীবিত করার প্রচার মিছিল করেছি। কোনো মহড়া দেওয়া হয়নি।’
তিনি বলেন, ‘এমএম কলেজে ছাত্রলীগের কোনো কমিটি নেই। অছাত্র-বহিরাগতরা ছাত্রলীগের নাম-পরিচয় বহন করে হল দখলে রেখেছিল। আমরা সরাসরি বলেছি, এই কলেজের শিক্ষার্থীরাই ছাত্রলীগের রাজনীতি করবে। এখান থেকে আগামী নেতৃত্ব গড়ে তোলা হবে। ক্যাম্পাসে অপরাজনীতিদের জায়গা নেই।’
কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আবু বক্কর সিদ্দিকী বলেন, ‘কলেজে কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটেনি। ছাত্রলীগের একটি পক্ষ কর্মসূচি করেছে। তবে ক্যাম্পাসে কেউ পরিবেশ নষ্ট করলে ছাড় নেই।’