গণমাধ্যমকর্মীদের দেখে এভাবেই আহাজারি করছিলেন নিহত ইয়াছিনের মা/ খবরের কাগজ
কক্সবাজারে চুরির অপবাদে দুই জেলেকে ধরে রাতভর পিটিয়ে এবং বৈদ্যুতিক শক লাগিয়ে হত্যা মামলার এক মাস পেরিয়ে গেলেও এখনো কোনো কুলকিনারা হয়নি। উল্টো আসামি পক্ষের নির্যাতনের ভয়ে নিহতের স্বজনরা পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। এ ছাড়া সমঝোতার মাধ্যমে মামলা প্রত্যাহারের জন্য প্রভাবশালী মহল থেকে চাপ দেওয়া হচ্ছে বলে দাবি জেলে পরিবারগুলোর। তবে পুলিশ বলছে, মামলার রহস্য উদ্ঘাটনে তদন্ত অব্যাহত রয়েছে।
সরেজমিনে ঘুরে জানা গেছে, সদর উপজেলার খুরুশকুল ইউনিয়নের মনুপাড়ার আব্দুল খালেক ও কুলছুম নাহারের ছেলে ইয়াছিন আরাফাতকে হারিয়েছেন এক মাস পার হয়েছে। ছেলে হত্যার বিচার চেয়ে প্রতিদিনই আহাজারি করছেন তারা। গেল ১৭ মে আশ্রয়ণ প্রকল্পসংলগ্ন মৎস্য ঘের থেকে আব্দুল খালেক ও ইয়াছিন আরাফাতের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। তারা দুজনই ছিলেন জেলে। এরপর ১৯ মে, চুরির অপবাদে দুই জেলেকে ধরে নিয়ে রাতভর পিটিয়ে ও বৈদ্যুতিক শক লাগিয়ে হত্যার অভিযোগে ছয়জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন নিহত আব্দুল খালেকের বড় ভাই আবদুল মজিদ।
নিহত ইয়াছিন আরাফাতের মা কুলছুম নাহার খবরের কাগজকে বলেন, ‘আমার ছেলেই ছিল পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। ওকে হারিয়ে আমরা এখন দিশেহারা। আসামিরাও পাল্টা মামলা করেছে। আমরা এখন পালিয়ে আছি। বেঁচে থাকাই এখন কঠিন হয়ে পড়েছে।’
আরাফাতের স্বজন মোহাম্মদ আব্দুল ওয়াহাব বলেন, ‘চুরির শাস্তি কখনো মৃত্যু হতে পারে না। যদি তারা চুরি করে থাকত, বিচার করা যেত। দেশে আইন আদালত আছে। এভাবে পিটিয়ে মারার তো দরকার ছিল না। হত্যাকারীর শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।’
মামলার বাদী আব্দুল মজিদ খবরের কাগজকে বলেন, ‘এক মাস পার হয়ে গেছে। এখনো পুলিশ এ ঘটনার কোনো রহস্য উদঘাটন করতে পারেনি। তাদের তদন্ত নিয়েও ধোঁয়াশা রয়েছে। আমাদের দাবি, এমন প্রতিবেদন দেওয়া হোক যেন আসামিরা সর্বোচ্চ শাস্তি পায়।’
এদিকে দুই জেলের লাশ উদ্ধারের ঘটনার দিন ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী আসামিদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ভাংচুর করে। এ নিয়ে বাদীপক্ষের বিরুদ্ধে আসামিপক্ষের স্বজনরা আদালতে ভাংচুরের মামলা করেন। তবে মামলা প্রত্যাহারে হুমকি দেওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করে আসামিপক্ষের দাবি, তাদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে।
দুই জেলে হত্যা মামলার আসামি মোরশেদ আলম ওরফে কাজল বলেন, ‘কী কারণে আমাদের পরিবারের তিনজনকে আসামি করা হয়েছে তা আমাদের বোধগম্য নয়। আমাদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে।’
তবে পুলিশ বলছে, হত্যা মামলার রহস্য উদঘাটন এবং আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মিজানুর রহমান বলেন, দুই জেলে হত্যাকাণ্ডে মামলা হওয়ার পর দুই আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বাকিদের গ্রেপ্তারে পুলিশ অভিযান অব্যাহত রেখেছে। একই সঙ্গে হত্যার কারণ অনুসন্ধান চালাচ্ছে পুলিশ।