ঢাকা ১২ শ্রাবণ ১৪৩১, শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪

ফুলপরীদের মেয়ে

প্রকাশ: ০৩ জুন ২০২৪, ০১:২২ পিএম
আপডেট: ০৩ জুন ২০২৪, ০১:২৩ পিএম
ফুলপরীদের মেয়ে
অলংকরণ: নাজমুল আলম মাসুম

মন ভালো নেই ফুলপরীদের। অনেকদিন হলো গাছে আর ফুল ফুটছে না। ফুল ফুটবেই বা কীভাবে, জীবনই তো টিকছে না। কোনোরকমে বেঁচে আছে ওরা। গন্ধরাজ, কামিনী আর মাধবীলতার গাছগুলোতে কুঁড়ি আসারও লক্ষণ নেই। গোলাপ গাছগুলো শুকিয়ে কাঠ হয়েছে বেশ আগেই। ফুল না ফুটলে মন ভালো থাকে না ফুলপরীদের। ফুলের গন্ধ নাকে এলেই চনমনে হয়ে ওঠে সবার মন। বাগানে ফুল ফুটলে খুশিতে তাধিন তাধিন নাচে ফুলপরীদের ছোট্ট ছেলেমেয়েরা। এজন্যই তো ওরা ফুলপরী!

ফুল কেন ফুটছে না? বৃষ্টিরা যে অভিমান করে আছে। প্রচণ্ড দাবদাহ চলছে। খুব কষ্ট হচ্ছে বনের পশুপাখিদের। আকাশে ডানা মেললেই হাঁপিয়ে উঠছে পাখি, শুকিয়ে আসছে গলা। মাঠের সবুজ ঘাস-লতা শুকিয়ে হলুদ হচ্ছে। উড়ছে ধুলো। সবার মতো মন খারাপ করে আছে সব ফুলপরী। সেদিন তো খুব ভোরে গন্ধরাজের কাছে এগিয়ে এল ফুলপরীদের ছোট্টমোট্ট এক মেয়ে। মেয়েটার নাম ফুলন্দী। গন্ধরাজের সবুজ পাতা ছুঁয়ে বলল, 
-কবে তোমার ফুল ফুটবে গো দিদা?
-নিজেই বাঁচি না আবার ফুল ফোটাব কোত্থেকে। রুক্ষ মেজাজে বলল গন্ধরাজ। 
-কেন গো দিদা? 
-এই পুচকে মেয়ে, তুমি কি কিছুই বোঝ না? দেখছ না শুকনো জমিন কেমন করে পানির জন্য হাহাকার করছে। ভেজা জমিন ছাড়া আমরা ভালো থাকি কী করে? কতদিন হলো বৃষ্টি হয় না, দেখেছ? 
-ও আচ্ছা, এই কথা? তাহলে আমি আজই মেঘপরীদের বলব বৃষ্টি নামাতে। দেখ বৃষ্টি হবে। ভীষণ বৃষ্টি। টুপটাপ বৃষ্টি, ঝমঝম বৃষ্টি। দেখ, তোমার পাতার গায়ে জমা ধুলো ধুয়ে যাবে। শুকনো মাটি ভিজে যাবে। পাখিদের ডানা ধুয়ে যাবে। কচুর পাতাগুলো দুলে উঠবে। শীতল হয়ে উঠবে বাতাস।
-হা হা হা। দেখা যাক কী হয়। একটু অবজ্ঞার স্বরে বলল গন্ধরাজ। 

ফিরে এসে মন খারাপ করে মায়ের পাশে শুয়ে পড়ল ফুলন্দী। আজ অনেক দূর থেকে কিছু ঝরা সুগন্ধি ফুল এনেছিল মা ফুলপরী। ফুলের ঘ্রাণ শুঁকে বেশ তরতাজা হয়ে উঠল সে। আকাশের দিকে খানিক তাকিয়ে রইল, কখন মেঘপরীদের দেখা মিলবে। 
সন্ধ্যা ছুঁইছুঁই। একখণ্ড হালকা মেঘ উড়ে যাচ্ছিল দূর থেকে। ফুলন্দী চিৎকার দিয়ে এগিয়ে গেল। হাত উঁচিয়ে বলল,  
-দাঁ-ড়া-ও গো মেঘপরী খালা। তোমার সঙ্গে কথা আছে। আমার মনে অনেক ব্যথা জমে আছে। 
-কী কথা শুনি? থামল মেঘপরী। 
-কতদিন হলো আমাদের এখানে বৃষ্টি ঝরাও না। কী যে কষ্টে আছি। পুকুরে পানি নেই, মাটি বের হয়ে আছে। গাছের পাতা শুকিয়ে যাচ্ছে। আর ফুল ফুটছে না। প্রচণ্ড গরমে পশুপাখি হাঁসফাঁস করছে। এতটা পাষাণ কেন তুমি, শুনি?
-এই ফুলপরীদের সোনামেয়ে। এতই যখন তোমার ফুলের দরকার তো উঠে এসো মেঘের ডানায়। তোমাকে ফুলের দেশে নিয়ে যাই, দেখবে হাজারো ফুল ফুটে আছে ওখানে। যাবে? 
-ইশ! আমি কেন অন্যের কাছে যাই! তুমি বরং এখানেই বৃষ্টি ঝরাও। কী সুন্দর আমাদের কামিনী ফুলের ঘ্রাণ! আহ্লাদি কণ্ঠে বলল ফুলপরীদের মেয়ে ফুলন্দী। 
-তোমাদের এখানে তো বৃষ্টি নামার কথা নেই গো মিষ্টি মেয়ে। আমরা যাব দূরে, অ-নে-ক দূরে। হিজল, তমাল আর বেগুনি জারুল ফুলের বনে। ঝুমকো জবা, হাসনাহেনা, শিউলি, বেলি আর রজনীগন্ধার গ্রামে। দেখছ না আমরা কেমন ছুটছি। 
-আমাদের প্রতি বুঝি তোমাদের অনেক অভিমান? গোমড়া মুখে বলল ফুলন্দী।
-হা হা হা। তোমাদের প্রতি অভিমান করব কেন গো পাগলি মেয়ে। আমাদের যত ক্ষোভ মানুষের ওপর।
-মানুষের ওপর? 
-হ্যাঁ গো হ্যাঁ। দেখছ না মানুষ দিন দিন কেমন পাষাণ হয়ে উঠছে। নির্বিচারে গাছ কেটে ফেলছে। বন উজাড় করছে। নদী-নালা মেরে ফেলছে। আমরা কেন অতটা দয়া দেখাতে যাব? 
-তা তো ঠিক বলেছ মেঘপরী খালা, কিন্তু বৃষ্টি না ঝরালে আমরাও যে বিপদে পড়ি।
-এতই যখন প্রয়োজন তখন মানুষের কাছে গিয়ে বল। মানুষ যেভাবে কল-কারখানা, রাস্তাঘাট তৈরি করছে, সেভাবে গাছপালাও লাগাতে হবে। গাছ ছাড়া পৃথিবী ভালো থাকবে? 
-তা তো ঠিক, একদম ঠিক কথা। মাথা নাড়ল ফুলন্দী।
-আচ্ছা তুমি যখন এত করে বলছ, কাল তোমাদের এখানে বৃষ্টি ঝরবে। আমি আজই বৃষ্টিরাজকে বলব। খুশি তো? এখন তাহলে যাই, সাগর থেকে পানি আনতে হবে না!

মায়ের কোলে ফিরে এল ফুলন্দী। রাতে ভালো ঘুম হয়নি। সত্যিই কাল বৃষ্টি নামবে! একসময় ঘুমিয়ে পড়ল সে। রাতে ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে স্বপ্নের রাজ্যে হারিয়ে গেল ফুলন্দী। টুকটুকে ফুটফুটে এক মানুষের মেয়ে সে। বাবা-মা আদর করে তাকে পরী নামেই ডাকে। দুই কানে ঝুমকো জবা আর খোঁপায় টুকটুকে লাল গোলাপ গুঁজে বাবা তাকে রোজ সাজিয়ে দেয়। ছোট্ট সুন্দর ছায়াঢাকা গ্রাম তার। দুই পাশে বয়ে চালেছে নদী। বাবার খেতের বেগুনডালে টুনটুনি চুইচুই করে ডাকে। বেগুনি রঙের ফুলে বসে প্রজাপতি। ওদের দেখে ছড়া কাটতে থাকে পরী- 

প্রজাপতি প্রজাপতি 
কোথায় তোমার ঘর, 
আমার ভয়ে কাঁপছ তুমি?
অমন থরথর! 
আমায় তুমি দাও না ছুঁয়ে
ভাবছ কেন পর।

ঘুম ভেঙেই দেখে সকাল হয়েছে। আকাশের দিকে তাকিয়ে মন ভালো হয় ফুলন্দীর। দূর-দূরান্ত থেকে উড়ে আসা মেঘ কালো রঙে ছেয়ে যায়। হঠাৎ উড়ে আসে মেঘরাজ। গুড়ুম গুড়ুম শব্দ হয়। ঝমঝমিয়ে শুরু হয় বৃষ্টি। বৃষ্টিতে ভিজে যায় মাঠ-ঘাট, ফসলের খেত। হাজারো ফুলের গাছ সতেজ হয়। পরীমেয়ে ফুলন্দী ছুঁয়ে দেখে গন্ধরাজের পাতা। এখন অপেক্ষার পালা, আর মাত্র কদিন পরেই ফুটবে নানান রঙের ফুল।

/আবরার জাহিন

 

আমরা আঁকি

প্রকাশ: ০৫ জুলাই ২০২৪, ০৫:২১ পিএম
আপডেট: ০৫ জুলাই ২০২৪, ০৫:২১ পিএম
আমরা আঁকি

দেবনীল চেীধুরী
কেজি ওয়ানৎ স্কলার্সহোম প্রিপারেটরি
পাঠানটুলা, সিলেট।
/আবরার জাহিন

 

আমরা আঁকি

প্রকাশ: ০৫ জুলাই ২০২৪, ০৫:১৯ পিএম
আপডেট: ০৫ জুলাই ২০২৪, ০৫:১৯ পিএম
আমরা আঁকি

নাজিবাহ ইবনাত প্রান্তি
নবম শ্রেণি 
আটি পাঁচদোনা উচ্চ বিদ্যালয়
কেরানীগঞ্জ, ঢাকা

/আবরার জাহিন

নীল সাগরের তিমি

প্রকাশ: ০৫ জুলাই ২০২৪, ০৫:১৩ পিএম
আপডেট: ০৫ জুলাই ২০২৪, ০৫:১৩ পিএম
নীল সাগরের তিমি

ইউরোপের একটি ছবির মতো সুন্দর দেশ নরওয়ে। মানুষগুলো ছিমছাম, নির্ভেজাল ও হাসিখুশি। নরওয়ের রয়েছে বিশাল সমুদ্র উপকূল। এ দেশের অনেক মানুষ তাই মাছ ধরে। এজন্য নরওয়েকে জেলেদের দেশ বলা হয়।

নরওয়ের খোলা সাগরে ভেসে বেড়ায় ঝাঁকে ঝাঁকে তিমির দল। মাঝে মাঝে উপকূলে ঢু দিয়ে যায়। তারা সমুদ্রে খেলা করে। অবাক করার মতো হলেও এটা সত্যি যে, তারা গানও গায়। সে গান অন্য তিমিরাও শুনতে পায় বহু বহু  দূর থেকে। বিজ্ঞানীরা তো এ-কথাও বলেন যে, তিমিদের নিজস্ব ভাষাও আছে। তারা সে ভাষায় নিজেদের মধ্যে কথাও বলে। আর যখন তখন সমুদ্রের বুকে ডিগবাজি খায়। 9তিমিরা দল বেঁধে চলে। অবাক করার মতো কথা হলো, তাদের পরিবারও আছে। মা তিমি তার সন্তানকে পনেরো বছর পর্যন্ত নিজের কাছে রাখে। তার পর ছেড়ে দেয় স্বাধীনভাবে জীবনযাপন করার জন্য।

তো আমাদের এ গল্পের তিমি শিশুটির নাম অ্যাবে। তার মা সিলোনি তাকে খুব আদর করত। খুব ভালোবাসত। কিন্তু যখন অ্যাবের বয়স পনেরো হয়ে গেল, তখন তার মা সিলোনি তাকে স্বাধীন করে দিল। সত্যি সত্যিই, সিলোনি এটা চায়নি। কিন্তু সমাজের নিয়ম বলে কথা! তাই ছেলেকে না ছেড়ে তার উপায় ছিল না। অ্যাবে কয়েকদিন কান্না করতে করতে সমুদ্রে ভেসে বেড়াল। ধীরে ধীরে সমুদ্রের নানা রকম মাছ ও সামুদ্রিক প্রাণীর সঙ্গে তার পরিচয় ও বন্ধুত্ব হয়ে গেল। তাদের সঙ্গে ভেসে বেড়িয়ে, গল্প করে তার সময় ভালোই কাটতে লাগল। ভালো লাগল সমুদ্রের প্রাণীদের সঙ্গে খেলা করতে। এমনি করতে করতে একদিন একটা রে-ফিসের সঙ্গে সাঁতরাতে সাঁতরাতে সে চলে এল নরওয়ের সমুদ্র উপকূলের খুব কাছে। সেখানে নরওয়ের রাজা হ্যানসনের রাজকীয় জাহাজ এমভি মার্টিনা নোঙর করা ছিল। রাজা এই জাহাজে চড়ে তার ভীষণ অসুস্থ ছেলে হ্যানসনকে নিয়ে ইংল্যান্ডে যাবেন উন্নত চিকিৎসা করাতে।

জাহাজটি এক সপ্তাহের মধ্যেই রওনা হবে। ছোট্ট তিমি অ্যাবে আগে কখনো জাহাজ দেখেনি। সে বিস্মিত হলো। আনন্দে সে বড় করে দম নিয়ে সমুদ্রে ডুব দিল, একটু পরেই ভুস করে ভেসে উঠে আকাশের দিকে লাফ দিল পানি ছিটাতে ছিটাতে। তখন অ্যাবেকে মনে হচ্ছিল একটা উড়ন্ত পানির ফোয়ারা। রাজপুত্র হ্যানসন তখন জাহাজের খোলা ডেকে দাঁড়িয়ে ছিল। খালাসিরা ছোটাছুটি করে জাহাজে প্রয়োজনীয় মালপত্র ওঠাচ্ছিল। হ্যানসন তিমিটাকে দেখে ফেলল আর ওকে খুব ভালোবেসে ফেলল। সে তিমিটার উদ্দেশে গান গেয়ে উঠল। গানটা কিন্তু ছোট্ট তিমি অ্যাবের খুব ভালো লাগল। সে প্রতিদিন রাজপুত্র হ্যানসনের সঙ্গে দেখা করতে আসতে লাগল।

একদিন রাজার সেনাপতি রবরয় তিমিটিকে দেখে ফেলল। সে হারপুন গান দিয়ে তিমিটির দিকে গুলি ছুড়ল। ছোট্ট তিমির চারপাশে রক্তে লাল হয়ে গেল পানি। ধীরে ধীরে সে সমুদ্রে তলিয়ে গেল। রাজপুত্র হ্যানসন ডেক থেকে সবকিছু দেখে চিৎকার করে সমুদ্রে দিল ঝাঁপ। সে সাঁতার জানত না, তাই সেও সমুদ্রে তলিয়ে গেল।

সমুদ্রে স্কুবা ডাইভার পাঠিয়ে অনেক খোঁজাখুঁজি করেও রাজপুত্রকে আর পাওয়া গেল না। শোনা যায় আজও নরওয়ের জেলেরা যখন সমুদ্রে মাছ ধরতে যায়, তখন তারা কখনো কখনো রাজপুত্রের করুন কণ্ঠের গান শোনে। জেলেদের মন তখন রাজপুত্রের কথা ভেবে বিষণ্ন হয়ে ওঠে।

/আবরার জাহিন

বৃষ্টিঝরা দিনে

প্রকাশ: ০৫ জুলাই ২০২৪, ০৫:১১ পিএম
আপডেট: ০৫ জুলাই ২০২৪, ০৫:১১ পিএম
বৃষ্টিঝরা দিনে
ছবি: সংগৃহীত

মেঘ গুরগুর ডাকছে দেয়া
আকাশ কালো করে,
ঠাণ্ডা হাওয়ার ডানায় চড়ে
নামল বৃষ্টি জোরে।
তা-ধিন তা-ধিন সোনাব্যাঙে
নাচছে খালে বিলে,
ঘ্যাঙর ঘ্যাঙর ভাঙা সুরেই
ডাকছে সবাই মিলে।
শিশু-কিশোর উঠোনজুড়ে
করছে লুটোপুটি,
কেউবা বিলে বড়শি পেতে
ধরছে ট্যাংরা পুঁটি।
কদম ফুলের পাপড়ি মেলে
বর্ষা ওঠে হেসে,
নদী-নালা পায় ফিরে প্রাণ
রূপসী বাংলাদেশে।

বাদলা দিনে

প্রকাশ: ০৫ জুলাই ২০২৪, ০৫:০৯ পিএম
আপডেট: ০৫ জুলাই ২০২৪, ০৫:০৯ পিএম
বাদলা দিনে
ছবি: সংগৃহীত

ঝুপঝুপাঝুপ বৃষ্টি ঝরে 
ভরেছে ওই ঝিল,
শব্দ ঢেউয়ের ছলাৎ ছলাৎ 
নদী ও খালবিল!

জলের নাচন দেখবে খোকন 
ভাল্লাগে না ঘরে,
টইটম্বুর ডোবা পুকুর
জল থইথই করে!

বাদলা দিনে করতে মানা
এমন ছোটাছুটি,
ওই দেখো মা জলে ভাসে 
টেংরা, বেলে, পুঁটি!

শুনব না আজ কোনো বাধা 
ধরব মাগুর কই,
ধুম পড়েছে বিলের মাঝে
মাছ ধরার হইচই!