বিশ্বের সবচেয়ে কম বয়সী সিরিজ বইয়ের লেখক হিসেবে মাত্র ৯ বছর বয়সে সে পেয়েছে গিনেস বুক অব অ্যাওয়ার্ড। একই বছরে ইংল্যান্ড থেকে পেয়েছে প্রিন্সেস ডায়ানা অ্যাওয়ার্ড। এ ছাড়া আরও অনেক অর্জনে তার ঝুলি ভরপুর। বলছিলাম, ঋতুরাজ ভৌমিকের কথা।
তার আত্মপ্রকাশ হয় বাবা শুভাশীষ ভৌমিকের হাত ধরে। মাত্র ছয় বছর বয়সে বাবার সঙ্গে তার গানের হাতেখড়ি। ‘বাপকা বেটা’ নামে একটা ফেসবুক পেজ আছে তাদের। সেখানে সব কার্যক্রম তারা পোস্ট করতে থাকেন। ২০১৯ সালে তাদের জনপ্রিয়তার শুরু সেখান থেকেই। করোনা মহামারির সময় ঘরে বসে তারা একের পর এক গান করেছেন। সেসব গান শেয়ার করেছেন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। তাদের বাপ-বেটা জুটিকে সবাই সাদরে গ্রহণ করেছিলেন।
২০২২ সালের বইমেলায় যখন ঋতুরাজের বয়স মাত্র ৮ বছর, তখন তার প্রথম বই প্রকাশিত হয়। এ পর্যন্ত তার প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা ৪টি। বইগুলোর নাম গুডউইল ফ্যাক্টরি, গুডউইল ফ্যাক্টরি-২, অ্যারাউন্ড দ্যা ওয়ার্ল্ড পার্ট-১ এবং অ্যারাউন্ড দ্য ওয়ার্ল্ড পার্ট-২। গুডউইল ফ্যাক্টরি এবং গুডউইল ফ্যাক্টরি-২ এ দুটি বইয়ে ঋতুরাজ তুলে ধরেছে এমন কিছু গল্প, যা সমাজে ছোটদের মূল্যবোধ গড়ে তুলতে সাহায্য করবে। চারপাশের সবকিছু পর্যবেক্ষণ করে এবং পরিবারের কাছ থেকে সুন্দর শিক্ষা পেয়ে সে পেয়েছে এমন কিছু লেখার অনুপ্রেরণা। অ্যারাউন্ড দ্য ওয়ার্ল্ড পার্ট-১ এবং অ্যারাউন্ড দ্য ওয়ার্ল্ড পার্ট-২ বই দুটি ভ্রমণের ওপর লেখা, যা একই সঙ্গে শিক্ষনীয়। ঋতুরাজ এখন পর্যন্ত বেশ কিছু দেশ ভ্রমণ করেছে। সেসব দেশ ঘুরে যা যা শিখতে পেরেছে, ভ্রমণকাহিনির মাধ্যমে তা তুলে ধরার চেষ্টা করেছে। ছোটরা বই দুটি পড়ে যেমন অনেককিছু শিখতে পারবে, তেমনই ভ্রমণেও উৎসাহিত হবে।
ঋতুরাজের বয়স এখন ১১ বছর। সে ক্লাস ৫ শেষ করেছে অস্ট্রেলিয়ান ইন্টারন্যাশনাল স্কুল থেকে। এ বয়সেই তার চিন্তার জগৎ, মূল্যবোধ অবাক করে দেয় চারপাশের মানুষকে। সে সবসময় পিছিয়ে পড়া শিশুদের নিয়ে ভাবে। তার মা-বাবা খুব কাছ থেকে সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের জীবনযাপন দেখিয়েছেন তাকে। অনুভব করতে শিখিয়েছেন তাদের না পাওয়া কিংবা দুঃখগুলোকে। তাদের দারিদ্র্যে নিপীড়িত জীবন তাকে ভীষণভাবে নাড়া দিয়ে যায়। সমাজের প্রান্তিক মানুষদের জন্য কিছু করার ইচ্ছা তার সেখান থেকেই জন্মে। তার লেখা বইগুলো থেকে উপার্জিত সব অর্থ সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের পড়াশোনার জন্য ব্যয় হয়। পাশাপাশি ‘আমরাও পড়তে চাই’ নামক এক ক্যাম্পেইনে তার অনুরোধে অনেক মানুষ সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের পাশে দাঁড়ায়। এত ছোট বয়সে এই মানবতামূলক কাজে যুক্ত থাকার জন্য ঋতুরাজকে প্রিন্সেস ডায়ানার মতো সম্মানজনক অ্যাওয়ার্ড দেওয়া হয়।
পিছিয়ে পড়া শিশুদের নিয়ে যেমন তার ভাবনার অন্ত নেই, তেমনই সময়ের সঙ্গে সঙ্গে নিজেকে কীভাবে আরও উপযোগী করে তোলা যায়, তা নিয়েও চেষ্টার কোনো কমতি নেই তার। পড়াশোনা আর লেখালিখি ছাড়াও নিজেকে নানানভাবে ছড়িয়ে দিতে চায় সে। নিজের মেধাকে চাষাবাদ করে ফলাতে চায় সোনার ফসল। ফুটবল খেলা খুব পছন্দ করে ঋতুরাজ। Growing Up নামে একটা ক্লাবে খেলে সে।
গিটার বাজাতে ভীষণ ভালোবাসে। গিটার বাজিয়ে অনেক গানই করেছে ঋতুরাজ। তবে এ পর্যন্ত তার মৌলিক গানের সংখ্যা ৩টি। যা ফেসবুক, ইউটিউব, স্পটিফাইসহ ২০০টির বেশি প্ল্যাটফর্মে রিলিজ হয়। গানগুলো প্রায় ৭০-৮০ লাখ মানুষ শুনেছে এবং বেশ কয়েকটি স্কুলে ছোটদের এই গানগুলো শেখানো হয়।
গিনিস বুক অব ওয়ার্ল্ড অ্যাওয়ার্ড, প্রিন্সেস ডায়ানা অ্যাওয়ার্ড ছাড়াও ঋতুরাজ তার নানামুখী কার্যক্রমের জন্য শেখ রাসেল পদক, দ্য ডেইলি স্টার ওটিটি অ্যান্ড ডিজিটাল কনটেন্ট অ্যাওয়ার্ড, বাংলা অলিম্পিয়াড অ্যাওয়ার্ড, বিডি ট্যালেন্ট বেস্ট চাইল্ড অ্যাওয়ার্ড এবং UNDP SDG অ্যাওয়ার্ড পেয়েছে। তার বইয়ের অভাবনীয় সাড়া তাকে এনে দিয়েছে রকমারি বেস্ট সেলার অ্যাওয়ার্ড।
জাহ্নবী