অতিরিক্ত চুল পড়ছে! আপনি একা নন, আজকাল চুল পড়া একটি সাধারণ সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। জীবনযাত্রার পরিবর্তন, দূষণ, মানসিক চাপ এবং অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাসের কারণে অনেকেই চুল পড়ার সমস্যায় ভুগছেন।
চুল পড়া একটি সাধারণ সমস্যা হলেও, এটি প্রতিরোধ করা সম্ভব। সঠিক যত্ন এবং পুষ্টি গ্রহণের মাধ্যমে চুলের স্বাস্থ্য ভালো রাখা যায়। প্রাকৃতিক উপায়, পুষ্টিকর খাদ্য এবং চিকিৎসার মাধ্যমে চুল পড়া বন্ধ করা সম্ভব। চুল পড়া বন্ধ করার এই উপায়গুলো অনুসরণ করলে, আপনার চুল হয়ে উঠবে মজবুত, স্বাস্থ্যকর এবং উজ্জ্বল।
চলুন জেনে নিই, কীভাবে আপনি সহজে এবং কার্যকরভাবে চুল পড়া বন্ধ করতে পারেন এবং চুলকে সুন্দর ও স্বাস্থ্যকর রাখতে পারেন।
আমলকির তেল
আমলকি চুলের জন্য অত্যন্ত উপকারী। এটি চুল পড়া কমাতে এবং চুলের গ্রোথ বাড়াতে সাহায্য করে। আমলকির তেল নিয়মিত চুলে মালিশ করলে চুল স্বাস্থ্যবান থাকবে। আমলকির শুকনো ফল নিয়ে তাদের গুঁড়ো করুন। এরপর, আমলকির গুঁড়া ২৫০ গ্রাম নিয়ে এতে ৫০০ মিলি নারকেল তেল মিশিয়ে মৃদু আঁচে কয়েক ঘণ্টা সিদ্ধ করুন। তারপর ঠান্ডা করে ছাঁকনি দিয়ে ছেঁকে নিন। সপ্তাহে দুই থেকে তিনবার আমলকির তেল মাথার ত্বকে ভালোভাবে মালিশ করুন। এটি চুলের গোড়া শক্তিশালী করে এবং চুল পড়া কমায়।
পেঁয়াজের রস
পেঁয়াজের রস চুলের যত্নে ব্যবহারের জন্য একটি অত্যন্ত জনপ্রিয় ও কার্যকরী প্রাকৃতিক উপাদান। পেঁয়াজে থাকা সালফার চুলের ফলিকলগুলোকে পুনর্জীবিত করে এবং চুলের বৃদ্ধি বাড়ায়। এছাড়াও, পেঁয়াজের রসে অ্যান্টিব্যাক্টেরিয়াল গুণ থাকায় এটি স্ক্যাল্প ইনফেকশন ও খুশকি প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। ২-৩টি মাঝারি আকারের পেঁয়াজ ছোট টুকরো করে কাটুন। একটি ব্লেন্ডারে টুকরোগুলো দিয়ে পিউরি বানান। পিউরিটি একটি ছাঁকনি বা মসলিন কাপড় দিয়ে চেপে চেপে রস বের করুন। পেঁয়াজের রসটি চুলের গোড়ায় সমানভাবে লাগান। মালিশ করে চুলের গোড়ায় ভালো করে রসটি মিশিয়ে দিন। প্রায় ২০-৩০ মিনিট চুলে রেখে দিন। এরপর ঠান্ডা পানি ও হালকা শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধুয়ে নিন।
ডিম ও মধুর মাস্ক
ডিম প্রোটিনের একটি ভালো উৎস এবং মধু ময়শ্চারাইজিং উপাদান। এই দুইটি একসাথে মিশিয়ে চুলের মাস্ক হিসেবে ব্যবহার করলে চুল মজবুত ও মসৃণ হয়। একটি ডিম ভালোভাবে ফেটে নিন এবং তাতে দুই চামচ মধু মিশিয়ে নিন। এই মিশ্রণটি চুলের গোড়া থেকে শুরু করে আগা পর্যন্ত লাগান। প্রায় ৩০ মিনিট ধরে রেখে দিন এবং তারপর হালকা শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
অ্যালোভেরা
অ্যালোভেরা চুলের স্ক্যাল্পে পুষ্টি যোগায় এবং খুশকি কমাতে সাহায্য করে। অ্যালোভেরা জেল চুলের গোড়ায় মালিশ করে কিছুক্ষণ পরে ধুয়ে ফেললে চুল সিল্কি ও শাইনি হয়। অ্যালোভেরা পাতা কেটে জেল বের করুন। চুলের গোড়ায় জেল লাগিয়ে সারা চুলে ছড়িয়ে দিন। ৪৫ মিনিট রাখার পর পরিষ্কার পানি দিয়ে ধুয়ে নিন।
মেথির বীজ
মেথির বীজ চুলের গ্রোথ বাড়ায় এবং স্ক্যাল্পের সমস্যা দূর করে। মেথির বীজ পানিতে ভিজিয়ে পেস্ট তৈরি করে চুলে লাগানো যেতে পারে।
রাতে মেথির বীজ ভিজিয়ে রাখুন। পরদিন পানি ঝরিয়ে বীজগুলো ব্লেন্ডারে পিষে নিন। পেস্ট চুলের গোড়ায় ভালোভাবে লাগিয়ে ১ ঘণ্টা পর্যন্ত রেখে দিন। পরে শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে নিন।
নারকেল তেল
নারকেল তেল চুলের জন্য একটি প্রাচীন উপায়। এটি চুলের গোড়ায় পুষ্টি দেয় এবং চুল পড়া কমাতে সাহায্য করে। চুলের গোড়ায় নারকেল তেল মালিশ করে নিয়মিত গরম পানির স্টিম দেওয়া উচিত। নারকেল তেল গরম করুন যাতে তেল সহ্য করা যায় তবে খুব গরম না হয়। গরম তেলটি চুলের গোড়ায় ভালোভাবে মালিশ করুন। তোয়ালে দিয়ে মাথা ঢেকে রাখুন যাতে তাপ বজায় থাকে। ১-২ ঘণ্টা পর হালকা শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
গ্রিন টি
গ্রিন টি অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে ভরপুর, যা চুলের স্ক্যাল্পের স্বাস্থ্য বজায় রাখতে সাহায্য করে। ঠান্ডা গ্রিন টি চুলের গোড়ায় লাগানো যেতে পারে। এজন্য প্রয়োজন একটি গ্রিন টি ব্যাগ বা অল্প পরিমাণ গ্রিন টি পাতা। ২ কাপ পানিতে ২-৩টি গ্রিন টি ব্যাগ বা সমপরিমাণ শুকনো পাতা দিয়ে ৫-১০ মিনিট ফুটিয়ে নিন। এরপর পানি ঠান্ডা করুন। শ্যাম্পু করার পর চুল ভালোভাবে ধুয়ে নিন। এরপর গ্রিন টির ঠান্ডা পানি দিয়ে চুলের গোড়ায় ভালোভাবে লাগান। প্রায় ৫ মিনিট চুলে রেখে দিন এবং এরপর পরিষ্কার পানি দিয়ে ধুয়ে নিন।
নিম পাতা
নিম পাতা তার অ্যান্টিফাঙ্গাল, অ্যান্টিব্যাক্টেরিয়াল এবং অ্যান্টি-ইনফ্লামেটরি গুণাবলীর জন্য পরিচিত, যা চুল এবং স্ক্যাল্পের স্বাস্থ্য উন্নত করতে অত্যন্ত কার্যকর। নিম পাতার রস চুলের গোড়াকে মজবুত করে এবং চুলের বৃদ্ধি বাড়ায়, এছাড়াও এটি খুশকি দূর করতে সাহায্য করে।
অলিভ অয়েল, জিরা ও মধু
১/৪ কাপ অলিভ অয়েলে ১ চা চামচ জিরা ভিজিয়ে রাখুন ৫ ঘণ্টা। এরপর মিশ্রণটি ছেঁকে তেল আলাদা করে নিন। তেলে খানিকটা মধু মিশিয়ে চুলের গোড়ায় ম্যাসাজ করুন। ৩০ মিনিট পর শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে একদিন ব্যবহার করলে কাজ হবে দ্রুত।
দই
২ চামচ দইয়ের সঙ্গে ১ চামচ মধু এবং ১ চামচ লেবুর রস নিয়ে ভাল করে মিশিয়ে নিন। যখন দেখবেন প্রতিটি উপাদান ঠিক মতো মিশে গেছে, তখন মিশ্রনটা ভাল করে চুলে লাগিয়ে কম করে ৩০ মিনিট রেখে দিন। সময় হয়ে গেলে চুলটা ঠাণ্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এমনটা সপ্তাহে একবার করলেই দেখবেন চুল পড়ার হার কমতে শুরু করেছে।
নারকেল দুধ
এক কাপ নারকেল দুধ নিয়ে ধীরে ধীরে স্কাল্পে লাগান। তারপর একটা টাওয়াল দিয়ে মাথাটা ঢাকা দিয়ে কম করে ২০ মিনিট রেখে ভাল করে চুলটা ধুয়ে ফেলুন। এমনটা সপ্তাহে কয়েকবার করলেই দেখবেন চুল পড়া কমতে শুরু করবে। কারণ নারকেল দুধে উপস্থিত ভিটামিন ই, চুলের অন্দরে ময়েসশ্চারাইজারের ঘাটতি দূর করে। ফলে চুল পড়ার হার কমে যায়।
বিটরুট
এতে থাকা পটাশিয়াম, প্রোটিন, ভিটামিন বি এবং সি নানাভাবে চুল পড়া কমাতে সাহায্য করে থাকে। এক্ষেত্রে পরিমাণ মতো বিটরুট নিয়ে পানিতে ফেলে সেদ্ধ করে নিতে হবে। তারপর বিটরুট গুঁড়ো করে নিয়ে মেথির সঙ্গে মিশিয়ে স্কাল্পে লাগালেই কেল্লাফতে! কারণ এই মিশ্রনটি ২০ মিনিট মাথায় লাগিয়ে রাখলে চুল পড়ার হার একেবারে কমে যায়। প্রসঙ্গত, সপ্তাহে তিনবার এমনভাবে চুলের পরিচর্যা করতে হবে।