![ঘোষণা নয়, পদক্ষেপ চান ফিলিস্তিনিরা](uploads/2024/05/26/Lead-1716692067.jpg)
জাতিসংঘের শীর্ষ আদালত রাফায় অভিযান বন্ধে নির্দেশ দিয়েছে ইসরায়েলকে। আন্তর্জাতিক দিক থেকে বিচার করলে এর গুরুত্ব অনেক। তবে ফিলিস্তিনিরা এখন আর এ রকম শব্দের ফুলঝুরি নয়, বাস্তবিক পদক্ষেপ চান- যা তাদের সংকটের মুখ থেকে সরিয়ে আনবে। যেমন- আন্তর্জাতিক ন্যায়বিচার আদালতের (আইসিজে) সালওয়া আল-মাসরি মনে করছেন, আদালতের রায়ে কোনো কাজ হবে না। তিনি বলেন, ‘সংঘাত শুধু বাড়ছেই।’ কথা ও কাজের ভিন্নতার বিষয়টি উল্লেখ করে মাসরি বলেন, ‘আমরা চাই এ সিদ্ধান্তগুলো মূলস্থানে প্রয়োগ করা হোক।’
মূলত আইসিজে কড়া ভাষায় ইসরায়েলকে অভিযান থামাতে বললেও, সে নির্দেশ বাস্তবায়নের মতো কোনো রাস্তা নেই তাদের হাতে। শুধু ইসরায়েল সে নির্দেশ মানলেই এ রায় কার্যকর হতে পারে। তবে আদালতে ইসরায়েলের উপস্থাপিত যুক্তি ও তাদের এ বিষয়ে যে অবস্থান, তা থেকে এটুকু স্পষ্ট যে সহসাই রাফায় যুদ্ধের অবসান হচ্ছে না।
ইসরায়েলের যুদ্ধকালীন মন্ত্রিসভার মন্ত্রী বেনি গ্যান্টজ জানিয়ে দিয়েছেন, জিম্মিদের ফিরিয়ে আনতে ও নিরাপত্তা নিশ্চিতে ইসরায়েল হামাসের বিরুদ্ধে তার ‘ন্যায্য ও প্রয়োজনীয়’ যুদ্ধ চালিয়ে যাবে।
গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলি ভূখণ্ডে হামলা চালায় হামাস। সে হামলায় মারা যায় প্রায় ১২০০ ইসরায়েলি। হামাস সঙ্গে করে প্রায় ২৫০ জিম্মিও নিয়ে আসে। পরে এর জেরে হামাসকে নির্মূলের লক্ষ্য নিয়ে যুদ্ধ ঘোষণা করে ইসরায়েল। কিন্তু যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর তাদের নির্বিচার হামলায় গোটা গাজা ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে, ফিলিস্তিনি মারা গেছেন ৩৫ হাজার ৮০০-এরও বেশি– যাদের বেশির ভাগ নারী, শিশু ও বয়োবৃদ্ধ। অন্যদিকে আহত হয়েছেন ৭১ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি।
সব মিলিয়ে গাজার বাসিন্দারা মানবিক বিপর্যয়ের সম্মুখীন হয়েছে। তারা কষ্ট করছেন ক্ষুধায়, তৃষ্ণায়। আহত হলে চিকিৎসার সুযোগটাও মিলছে না। নতুন করে তারা রাফায় অভিযান শুরু করার কারণে বাস্তুচ্যুত হয়েছে ৯ লাখেরও বেশি মানুষ।
ইসরায়েলি আক্রমণে চারবার বাস্তুচ্যুত হওয়া ফিলিস্তিনি শাবান আবদেল-রাওফ বলেন, ‘ইসরায়েল বিশ্ব নিয়ে মাথা ঘামায় না। তারা এমনভাবে কাজ করে যে তারা আইনের ঊর্ধ্বে, কারণ যুক্তরাষ্ট্রের প্রশাসন শাস্তির হাত থেকে তাদের রক্ষা করছে।’
আবদেল-রাওফ বলেন, ‘বিশ্ব এখনো ইসরায়েলিদের হাতে আমাদের এ হত্যাযজ্ঞ থামানোর জন্য প্রস্তুত নয়।’
চলতি মাসের শুরুতে হামাসের যোদ্ধাদের দোহাই দিয়ে রাফায় অভিযান শুরু করে ইসরায়েল। পরে গত সপ্তাহে দক্ষিণ আফ্রিকার আইনজীবীরা আইসিজেকে এ বিষয়ে জরুরি পদক্ষেপ নেওয়ার অনুরোধ জানান। হামাস এরই মধ্যে আইসিজের রায়কে স্বাগত জানিয়েছে। পাশাপাশি জানিয়েছে, এটি গাজা উপত্যকায় আগ্রাসন থামানোর জন্য, বিশেষ করে উত্তর গাজায় যে নৃশংস ও বিপজ্জনক অভিযান চলছে তা থামানোর জন্য যথেষ্ট নয়।
বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনি নাবিল দিয়াবের মন্তব্যও এক। তিনিও বলছেন, তাৎক্ষণিকভাবে যুদ্ধ থামবে এমন কিছু প্রয়োজন। দিয়াব বলেন, ‘আমাদের ঘোষণার দরকার নেই।’
গাজায় নিখোঁজ ১৩ হাজার
এদিকে, গাজায় ১৩ হাজারের বেশি মানুষের কোনো সন্ধান নেই। তারা বেঁচে আছেন, না মারা গেছেন- সে সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য নেই। এক রকম নিখোঁজ তারা।
বিবিসির প্রতিবেদন বলছে, এদের অনেকে হয়তো এখনো ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে আছেন। আবার মানবাধিকার সংস্থা বলছে, অনেকেই সম্ভবত ‘গুমের’ শিকার হয়েছেন। পুরো গাজা উপত্যকায় ধ্বংসাবশেষও জমেছে ব্যাপক।
জাতিসংঘের হিসাব বলছে, গাজা উপত্যকাজুড়ে যে পরিমাণ ধ্বংসাবশেষ জমা হয়েছে তার পরিমাণ হবে প্রায় তিন কোটি ৭০ লাখ টন। আর এর নিচে মৃতদেহের পাশাপাশি আরও প্রায় সাড়ে ৭ হাজার টন অবিস্ফোরিত গোলাবারুদ আছে, যা স্বেচ্ছাসেবক ও ত্রাণকর্মীদের জন্য আরেকটা হুমকি।
সিভিল ডিফেন্স জানিয়েছে, তারা তাদের কর্মী ও স্বেচ্ছাসেবকদের নিয়ে ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে চাপাপড়া শরীর উদ্ধারে কাজ করছেন, কিন্তু তাদের খুবই সাধারণ কিছু যন্ত্রপাতি আছে, যাতে প্রায়শই মৃতের শরীরের কাছে পৌঁছানোটা কঠিন হয়ে যায়।
এভাবে মৃতদেহ চাপা পড়ে থাকা নিয়েও দেখা দিয়েছে শঙ্কা। শরীর যদি নিচে ওভাবেই চাপা পড়ে থাকে, তা হলে সামনে গরম যখন আরও বাড়বে, তখন স্বাস্থ্যব্যবস্থার মারাত্মক অবনতি ঘটবে। সূত্র: রয়টার্স, বিবিসি