![‘স্বাধীনতাবিরোধীদের মনে ভারতবিদ্বেষ প্লেগ রোগের মতো বিরাজমান’](uploads/2023/12/06/1701873709.mustafa-jabbar.jpg)
‘একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধ তখনো শেষ হয়নি; বাঙালি বীর বিক্রমে লড়ছে পাকিস্তানি সেনাদের সঙ্গে। ডিসেম্বরের প্রথম ভাগেই বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চল শত্রুমুক্ত হতে শুরু করে। বাঙালি জেনে যায়, বিজয় আসন্ন। ঠিক তখন ৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেয় ভারত ও নেপাল।’
বাংলাদেশকে ভারতের কূটনৈতিক স্বীকৃতির ৫২তম বার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে এক আলোচনা সভায় ঐতিহাসিক সে দিনটিকে জাতীয় কূটনৈতিক দিবস ঘোষণার দাবি জানিয়েছেন রণাঙ্গণের বীর মুক্তিযোদ্ধারা।
বাঙালিদের মধ্যে ভারতবিদ্বেষ নিয়ে আলোচনার এক পর্বে বীর মুক্তিযোদ্ধারা বলেছেন, যারা একাত্তরের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধ বা বাঙালির বিজয় মেনে নিতে পারেননি তাদের মনে ভারতবিদ্বেষ ‘প্লেগ রোগের মতো বিরাজমান’।
বুধবার (৬ ডিসেম্বর) বিকেল ৩টার দিকে জাতীয় জাদুঘরের কবি সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে এ আলোচনা সভার আয়োজন করে একাত্তরের ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটি। অনুষ্ঠানে আলোচনার বিষয় ছিল ‘বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রীর পটভূমি’।
একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবিরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন ডাক, টেলিযোগাযোগ বিভাগের সাবেক মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার। বক্তব্য রাখেন মৌলবাদ ও সাম্প্রদায়িকতাবিরোধী দক্ষিণ এশীয় গণসম্মিলনের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক, নির্মূল কমিটির সহসভাপতি শহীদজায়া শ্যামলী নাসরিন চৌধুরী, বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিলের সাবেক চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) হেলাল মোর্শেদ খান (বীরবিক্রম), স্বাধীনতা মৈত্রী সম্মাননাপ্রাপ্ত বৃটিশ মানবাধিকার নেতা জুলিয়ান ফ্রান্সিস এবং ১৯৭১: গণহত্যা-নির্যাতন আর্কাইভ ও জাদুঘরের ট্রাস্টি সম্পাদক অধ্যাপক চৌধুরী শহীদ কাদের।
বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক বলেন, ‘যারা বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে মেনে নিতে পারেনি তাদের মনে ভারতবিদ্বেষ প্লেগ রোগের মতো বিরাজমান। মুক্তিযুদ্ধকালেও বেশ কিছু লোক স্বাধীনতার বিরোধিতা করেছিল। তাদের মধ্যে যারা এখনো জীবিত আছে এবং তাদের বংশধররা ভারতকে সহ্য করতে পারছে না শুধু একটি কারণে। তা হলো ভারত আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধে মুখ্য সহায়ক হিসেবে ভূমিকা রেখেছিল। পাকিস্তান ভেঙে স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয় হলো যখন তাদের বুকে তখন রক্তক্ষরণ হয়েছিল, এখনো হচ্ছে।’
মোস্তাফা জব্বার বলেন, ‘ডিসেম্বরে মুক্তিবাহিনীর সঙ্গে যৌথভাবে ভারতীয় মিত্রবাহিনীর বাংলাদেশ মুক্ত করার অভিযানে অংশ নেওয়াসহ প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ নানাভাবে বাংলাদেশের মুক্তি সংগ্রামে ভারত বন্ধু হয়ে পাশে দাঁড়িয়েছিল। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে ভারতের অধিকাংশ রাজনৈতিক দল এবং সাধারণ জনগণ তাদের সহানুভূতি এবং সমর্থন বেশ জোরালোভাবে প্রকাশ করেছে।’
শাহরিয়ার কবির বলেন, ‘বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের কালপঞ্জিতে অত্যন্ত স্মরণীয় দিন ৬ ডিসেম্বর। ১৯৭১ সালে এই দিনে ভারত ও ভূটান বাংলাদেশকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করে মুক্তিযুদ্ধের অবিস্মরণীয় বিজয় অনিবার্য করেছে।’
হেলাল মোর্শেদ খান বলেন, ‘বাংলাদেশের স্বাধীনতার ১০ দিন আগেই ভারত বাংলাদেশকে কূটনৈতিক স্বীকৃতি দেয় যা বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথম কূটনৈতিক সাফল্য। আমরা মুক্তিযোদ্ধারা চাই ৬ ডিসেম্বর জাতীয়ভাবে কূটনৈতিক দিবস হিসেবে পালন করা হোক।’
জয়ন্ত/সালমান/