চিত্রনায়িকা পরীমনির সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্কের জেরে এবার চাকরি হারাচ্ছেন ঝিনাইদহ জেলার ইন-সার্ভিস ট্রেনিং সেন্টারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার গোলাম সাকলায়েন। তিনি তখন ঢাকা মেট্রোপলিটন গুলশান গোয়েন্দা পুলিশের এডিসির দায়িত্বে ছিলেন। মামলার তদন্তকালে পরীমনির বাসায় নিয়মিত রাত্রিযাপন এবং স্ত্রীর অবর্তমানে তাকে রাজারবাগের বাসায় নিয়ে ১৭ ঘণ্টা অবস্থানের প্রমাণ মিলেছে সাকলায়েনের বিরুদ্ধে। এরপর গত ১৩ জুন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের শৃঙ্খলা-২ শাখার উপসচিব পারভীন জুঁই স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে ‘গুরুদণ্ড’ হিসেবে সাকলায়েনকে চাকরি থেকে ‘বাধ্যতামূলক অবসর প্রদান’ বিষয়ে সরকারি কর্ম কমিশন সচিবালয়ের সচিবকে অনুরোধ জানানো হয়েছে। মঙ্গলবার (২৫ জুন) বিষয়টি গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের চিঠিতে বলা হয়, ডিবি গুলশান বিভাগের এডিসি থাকার সময় নায়িকা পরীমনির সঙ্গে সাকলায়েনের পরিচয় ও যোগাযোগ শুরু হয়। এরই ধারাবাহিকতায় তিনি নায়িকা পরীমনির বাসায় নিয়মিত রাত্রিযাপন করতে শুরু করেন। পুলিশ অধিদপ্তরের এলআইসি শাখা থেকে দেওয়া তার ফোনের সিডিআর বিশ্লেষণ অনুযায়ী, ২০২১ সালের ৪ জুলাই থেকে ৪ আগস্ট পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে (দিনে ও রাতে) নায়িকা পরীমনির বাসায় অবস্থান করেছেন তিনি।
ওই আদেশে বলা হয়, মোবাইলের ফরেনসিক রিপোর্ট দেখে এর প্রমাণ পাওয়া যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ২০২১ সালের ৯ জুন সাভার থানার বোট ক্লাবে ধর্ষণচেষ্টা ও শারীরিক নির্যাতনের অভিযোগে ১৪ জুন ক্লাব নেতা ব্যবসায়ী নাসির উদ্দিন মাহমুদের বিরুদ্ধে মামলা করেন পরীমনি। পরে রাজধানীর উত্তরার একটি বাসা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার সঙ্গে আরও কয়েকজন সহযোগীকে গ্রেপ্তার করা হয়।
সাকলায়েন ওই মামলার তদন্ত তদারক কর্মকর্তা ছিলেন। তদন্তের জেরে পরীমনিকে গোয়েন্দা কার্যালয়ে ডেকে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করা হয়। এ সময় দুজনের পরিচয় হয় ও যোগাযোগ শুরু হয়। পরীমনির বাসায় নিয়মিত যাতায়াত শুরু করেন সাকলায়েন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রের তথ্যানুযায়ী, পরীমনি সাকলায়েনের রাজারবাগের মধুমতি ভবনের বাসায় প্রায় ১৭ ঘণ্টা অবস্থান করেন।
পরীমনির সঙ্গে সম্পর্কের অভিযোগ উঠায় সাকলায়েনকে বদলি করা হয়েছিল এবং তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছিল।
মডেল পিয়াকেও ভুগিয়েছিলেন পরীকাণ্ডের সেই সাকলায়েন
এই ঘটনার পর এবার সাকলায়েনের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ আনলেন মডেল ও অভিনেত্রী পিয়া জান্নাতুল। ‘চাকরি হারাচ্ছেন সাকলায়েন’ এমন খবর প্রকাশের পর গতকাল ফেসবুকে এক পোস্টে তিনি লিখেছেন, এই সেই ব্যক্তি (গোলাম সাকলায়েন) যিনি আব্বার এফআর টাওয়ার মামলায় ডিবি থেকে দায়িত্বপ্রাপ্ত ছিলেন। প্রায় ৬-৭ দিন আমি আর আম্মা প্রতিদিনই আব্বাকে দেখতে ডিবি অফিসে যেতাম। এই সেই ব্যক্তি, যিনি প্রতারণামূলকভাবে এবং জোরপূর্বক সিআরপিসির ১৬৪ ধারার অধীনে জবানবন্দির জন্য জোরপূর্বক আব্বার সম্মতি নেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন।
পিয়া আরও লিখেছেন, আমি আব্বাকে সম্মতি না দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলাম, কারণ তিনি এ ঘটনায় মোটেও জড়িত ছিলেন না। কিন্তু আমি ডিবি অফিসে পৌঁছার আগেই তিনি (সাকলায়েন) আব্বার কাছ থেকে লিখিত বক্তব্য নিয়ে পরদিন আদালতে জমা দেন। এসব বিষয়ে হস্তক্ষেপের জন্য তিনি আমার ওপর ক্ষিপ্ত হন এবং আব্বাকে আর আমাকে চুপ থাকতে বলেন। অথচ তার জানা ছিল না, আমি চুপ থাকার জন্য জন্মগ্রহণ করিনি।
তিনি লিখেছেন, ‘যে দিন তিনি এফআর টাওয়ারের অগ্নিকাণ্ডের জন্য জমির মালিক হিসেবে আব্বাকে গ্রেপ্তার করেছিলেন, আব্বা তখন এতটাই অসুস্থ ছিলেন যে তাকে হাসপাতালে যেতে হয়েছিল। তখন আব্বার বয়স ছিল ৭৭ বছরের বেশি!’ যাই হোক, তিনি আমাদের বলেছিলেন, আজকে আমার ছেলের স্কুলের অনুষ্ঠান, এমন একটা বড় দিনেও এখানে এসেছি আমার দায়িত্ব পালনের জন্য।
এই পুলিশ কর্মকর্তা সম্পর্কে পিয়া বলেন, আমার দেখা মতে, এই সাকলায়েন লোকটি অত্যন্ত তীক্ষ্ণ, প্রতিভাবান এবং ধূর্ত। কিন্তু একটা ভুল তার সবকিছু তছনছ করে দিল! যদিও আমরা মানুষের অপকর্মের জন্য তাদের ক্ষমা করে দিই, কিন্তু প্রকৃতি এবং সর্বশক্তিমান সব সময় রয়েছেন সঠিক বিচার করার জন্য।