![‘হত্যার পরিকল্পনা বুঝতে পেয়ে বেরিয়ে যেতে চান এমপি আনার’](uploads/2024/06/27/MP_Anar-1719506465.jpg)
ঝিনাইদহ-৪ আসনের এমপি আনোয়ারুল আজীম আনার হত্যার পরিকল্পনা বুঝতে পেরে কলকাতার নিউ টাউনের সঞ্জিবা গার্ডেনের বাসা থেকে বেরিয়ে যেতে চেয়েছিলেন। কিন্তু ফয়সাল আলী তাকে পেছন থেকে টেনে চেতনানাশক ক্লোরোফর্ম মেশানো রুমাল দিয়ে মুখ চেপে ধরেন। তারপর অন্যদের সহযোগিতায় তাকে অজ্ঞান করে হত্যা করা হয়। এ-সংক্রান্ত মামলার অন্যতম আসামি ফয়সাল আলী ও মোস্তাফিজুর রহমানকে রিমান্ডে চাওয়ার আবেদনে ঘটনার এই বিবরণ দেন তদন্ত কর্মকর্তা। রিমান্ড আবেদন মঞ্জুর করে বৃহস্পতিবার (২৭ জুন) আদেশ দেন আদালত।
এদিন তাদের আদালতে হাজির করে ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করেন তদন্ত কর্মকর্তা। আবেদনের ওপর শুনানি নিয়ে আদালত তাদের ছয় দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। এর আগে গত বুধবার চট্টগ্রাম থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) সিনিয়র সহকারী কমিশনার মাহফুজুর রহমান বৃহস্পতিবার মামলার এই দুই আসামি ফয়সাল আলী ও মোস্তাফিজুর রহমানকে আদালতে হাজির করে রিমান্ড আবেদন করেন।
আবেদনে বলা হয়, আসামি শিমুল ভূঁইয়া ওরফে শিহাব ফজল মোহাম্মদ ভূঁইয়া ওরফে আমানুল্যা সাইদ আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। ওই জবানবন্দি পর্যালোচনা করে এবং তদন্তকালে জানা যায়, ভিকটিম আনোয়ারুল আজীম আনারকে অপহরণপূর্বক হত্যায় ঘাতক দলের প্রধান ভাড়াটে খুনি শিমুল ভূঁইয়ার কিলিং মিশনের সহযোগী ছিলেন আসামি ফয়সাল ও মোস্তাফিজুর। ফয়সাল, মোস্তাফিজ ও জিহাদকে নিয়েই শিমুল ভূঁইয়া কিলিং মিশন বাস্তবায়ন করেন।
আবেদনে উল্লেখ করা হয়, তদন্তকালে আরও জানা যায়, ঘাতক দলের প্রধান ভাড়াটে খুনি শিমুল ভূঁইয়া ও আক্তারুজ্জামান শাহীন পরিকল্পনা মোতাবেক ফয়সাল ও মোস্তাফিজকে বড় অঙ্কের অর্থ দেবেন বলে গত ২ মে বাংলাদেশ থেকে কলকাতায় নিয়ে হোটেলে রাখেন। তারপর হোটেল থেকে মোস্তাফিজ ১০ মে এবং ফয়সাল ১২ মে কলকাতার নিউ টাউনের সঞ্জিবা গার্ডেনের বাসায় ওঠেন। ভিকটিম সংসদ সদস্য আনার ১২ মে কলকাতায় যান এবং ১৩ মে আসামিদের প্রলোভনে পড়ে ফয়সাল ও শিমুল ভূঁইয়ার সঙ্গে সঞ্জিবা গার্ডেনের বাসায় যান। পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ঘাতক দলের প্রধান শিমুল ভূঁইয়ার নির্দেশে অন্য সদস্য ফয়সাল, মোস্তাফিজ ও জিহাদ এমপি আনারকে হত্যার কার্যক্রম শুরু করেন। বিষয়টি ভিকটিম বুঝতে পেরে বেরিয়ে যেতে চাইলে আসামি ফয়সাল ভিকটিমকে পেছন থেকে টেনে ধরে মুখে চেতনানাশক ক্লোরোফর্মমিশ্রিত রুমাল দিয়ে চেপে ধরেন এবং মোস্তাফিজ ও শিমুল ভূঁইয়াদের সহযোগিতায় অজ্ঞান করে ভিকটিমকে হত্যা করেন। হত্যা করার পর ভিকটিমের লাশ গুম করার উদ্দেশ্যে ঘাতক শিমুল ভূঁইয়ার নেতৃত্বে ও নির্দেশে ভিকটিমের লাশ কেটে হাড় থেকে মাংস আলাদা করে লাশ নিশ্চিহ্ন করে ফেলা হয়।
আসামিদের রিমান্ডে চাওয়া আবেদনে আরও বলা হয়, এমপি আনারকে অপহরণ ও হত্যাকাণ্ডের ঘটনা প্রকাশিত হলে আসামি ফয়সাল ও মোস্তাফিজ নিজেদের নাম, পরিচয় ও চেহারার আকৃতি পরিবর্তন করে বিভিন্ন স্থানে আত্মগোপন করেন। তদন্তকালে ঘটনার সঙ্গে তাদের সংশ্লিষ্টতা পাওয়ায় আসামি ফয়সাল ও মোস্তাফিজুরকে খুঁজে বের করা ও গ্রেপ্তারের চেষ্টা অব্যাহতভাবে চালিয়ে যাওয়া হয়। ডিবি ওয়ারী বিভাগের সংঘবদ্ধ অপরাধ ও গাড়ি চুরি প্রতিরোধ টিম সোর্স ও তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় জানতে পারে, আসামি ফয়সাল ও মোস্তাফিজ চট্টগ্রাম ও খাগড়াছড়ি জেলার পাহাড়ে অবস্থান করছেন। সেই সংবাদের ভিত্তিতে দুর্গম পাহাড়ি এলাকার বিভিন্ন জায়গায় অভিযান পরিচালনা করে গত ২৬ জুন চট্টগ্রাম জেলার ভোজপুর থানার শ্রীশ্রী মা পাতাল কালী মন্দির থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
এমপি আনারকে খুন করার উদ্দেশ্যে অপহরণের অভিযোগে এই মামলা করেন তার মেয়ে মুমতারিন ফেরদৌস ডরিন। গত ২২ মে রাজধানীর শেরেবাংলা নগর থানায় এই মামলা করেন তিনি।
মামলায় তিনি উল্লেখ করেন, “রাজধানীর মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ের বাসায় আমরা সপরিবারে বসবাস করি। ৯ মে রাত ৮টার দিকে আমার বাবা আনোয়ারুল আজীম আনার গ্রামের বাড়ি ঝিনাইদহ যাওয়ার উদ্দেশে যাত্রা করেন। ১১ মে বিকেল পৌনে ৫টার দিকে বাবার সঙ্গে ভিডিও কলে কথা বললে বাবার কথাবার্তা কিছুটা অসংলগ্ন মনে হয়। এরপর বাবার মোবাইল নম্বরে একাধিকবার কল দিলেও বন্ধ পাই। ১৩ মে বাবার ভারতীয় নম্বর থেকে উজির মামার হোয়াটসঅ্যাপে একটি খুদে বার্তা আসে। এতে লেখা ছিল, ‘আমি হঠাৎ করে দিল্লি যাচ্ছি, আমার সঙ্গে ভিআইপি রয়েছে। আমি অমিত সাহার কাজে নিউ টাউন যাচ্ছি। আমাকে ফোন দেওয়ার দরকার নাই। আমি পরে ফোন দেব।’ তা ছাড়া আরও কয়েকটি বার্তা আসে। খুদে বার্তাগুলো আমার বাবার মোবাইল ফোন ব্যবহার করে অপহরণকারীরা দিয়ে থাকতে পারে।”
ডরিন মামলায় আরও উল্লেখ করেন, ‘বিভিন্ন জায়গায় আমরা বাবার খোঁজ করতে থাকি। কোনো সন্ধান না পেয়ে তার বন্ধু গোপাল বিশ্বাস বাদী হয়ে ভারতীয় বারানগর পুলিশ স্টেশনে সাধারণ ডায়েরি করেন। এরপরও আমরা খোঁজাখুঁজি অব্যাহত রাখি। পরে বিভিন্ন গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জানতে পারি, অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিরা পূর্বপরিকল্পিতভাবে পরস্পর যোগসাজশে বাবাকে অপহরণ করেছে।’
উল্লেখ্য, বাংলাদেশের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনারকে হত্যার ঘটনায় ভারতে একটি হত্যা মামলা বিচারাধীন।