![উমরায় যে ১০ বিষয়ে সতর্ক থাকবেন](uploads/2023/12/21/1703128581.21-december-UG-01.jpg)
উমরা সফরে এমন কিছু বিষয় রয়েছে, এমন কিছু মুহূর্ত রয়েছে—যে বিষয়গুলোতে, যে সময়গুলোতে সতর্ক থাকা আবশ্যক। অন্যথা বিপদ ঘটতে পারে, নষ্ট হতে পারে উমরার আমল। সতর্ক থাকার বিষয় ও মুহূর্তগুলো হলো—
বিমানে
বিমান কর্তৃপক্ষের সার্বিক নিয়মকানুন মেনে চলুন। নির্ধারিত সিটে বসুন। কোনো কারণে যদি সিট পরিবর্তন করতে হয়, তাহলে সবাই বসার পর চেষ্টা করুন। অনেক সময় স্বামী-স্ত্রী বা নিকটাত্মীয়ের সিট অনেক দূরে ঠিক হয়ে যায়, সেক্ষেত্রে কেউ সিট পরিবর্তন করতে চাইলে সওয়াব অর্জনের মানসিকতা নিয়ে তাদের সহযোগিতা করা উচিত। কর্তৃপক্ষ নিয়মকানুনের কোনো লিস্ট দিলে সেটি পড়ুন। সিটবেল বাঁধাসহ ফ্লাইট সেফটির যে দিকনির্দেশনা প্রদান করা বা দেখানো হয়—তা মনোযোগ দিয়ে দেখুন বা পড়ুন এবং মান্য করুন। পাশের সিটের যাত্রীকে কোনোভাবেই কষ্ট দেবেন না বা বিরক্ত করবেন না। টয়লেট ব্যবহারে সতর্ক থাকুন। খাবার বুঝেশুনে খান এবং খাবার ছাড়া অন্য সব জিনিস যেমন, টাওয়াল, কম্বল, ইয়ারফোন, খাবারের পাত্র, গ্লাস—এগুলো নিয়ে যাবেন না। পান, জর্দা, গুল বা সিগারেট জাতীয় কিছু খাবেন না। কোনো কিছু না বুঝলে অভিজ্ঞ কারও সহযোগিতা নিন। বিমান নামার পর সম্পূর্ণভাবে থামলে নামার জন্য উঠুন। তড়িঘড়ি করে সিট ত্যাগ করবেন না। সারিবদ্ধভাবে শান্ত মেজাজে বিমান ত্যাগ করুন। কোনো প্রকারের তাড়াহুড়া বা আগে নামার প্রতিযোগিতা না করে নির্ধারিত বাসে চড়ে বিমানবন্দরে গমন করুন। বিমানে বিশেষভাবে চোখের হেফাজত করুন। টিভি/ইন্টারনেটে মুভি দেখা থেকে বিরত থাকুন। এ সময় বেশি বেশি তালবিয়া পাঠ করুন। দোয়া ও ইস্তিগফারে রত থাকুন।
ট্রানজিটে
ট্রানজিট সফরে ট্রানজিট দেশে বিভিন্ন বিমানে বিভিন্ন দেশের যাত্রী যাতায়াত করেন। সুতরাং সেখানে অবস্থানকালে চোখের হেফাজত করুন। কোনো কিছু কেনাকাটা করার ক্ষেত্রে সতর্ক থাকুন। মুয়াল্লিম বা অভিজ্ঞ মানুষের সঙ্গে পরামর্শ করুন। ওয়াক্তিয়া নামাজের সময় হলে সুবিধামতো স্থানে শরিয়া সমর্থিত পদ্ধতিতে নামাজ আদায় করুন।
পরিবহনে
একটি বিষয় জেনে রাখা ভালো, তা হলো—জেদ্দা বিমানবন্দর থেকে মক্কার হোটেলে যাওয়া, মক্কায় উমরা শেষে জিয়ারত করা, মক্কা থেকে মদিনায় যাওয়া এবং মদিনায় জিয়ারত করানোর জন্য সৌদি বিভিন্ন কোম্পানি তাদের নিয়ম-পদ্ধতি মোতাবেক গাড়ি প্রদান করে থাকেন। এখানে বাংলাদেশি এজেন্সির কোনো তত্ত্বাবধান বা কর্তৃত্ব থাকে না। সুতরাং গাড়ি আসতে কোনো প্রকার দেরি বা সমস্যা হলে ধৈর্যধারণ করুন। এজেন্সি মালিক বা মুয়াল্লিমের ওপর অযথা রাগ করবেন না। জেদ্দা বিমানবন্দরে নামার পর অনেক উমরাযাত্রী স্বস্তির ঢেঁকুর তুলে ঘোরাফেরা ও কেনাকানা শুরু করেন এবং এমনটা করতে গিয়ে দলবদ্ধতা ত্যাগ করেন। অনেক সময় অনেক যাত্রী হারিয়েও যান। এমনটা করা থেকে বিরত থাকুন।
হোটেলে
উমরাকারীদের হোটেল ব্যবহার সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা থাকতে হবে। অধিকাংশ গ্রামের মানুষ বাথরুমের হাইকমড ব্যবহার জানেন না। গরম ও ঠান্ডা পানি আসার ট্যাপ ব্যবহারেও ভুল করেন। দরজা লক কিংবা খোলার ব্যাপারেও অনেকে অনভিজ্ঞ। এ ব্যাপারগুলো ভালোভাবে জেনে নেওয়ার। এছাড়া মক্কা-মদিনায় অবস্থানকালে হোটেল কার্ড সঙ্গে রাখুন। কোনো কারণে হারিয়ে গেলে যাতে, কার্ড দেখিয়ে কারো সহযোগিতা নিয়ে ফিরে আসা সম্ভব হয়।
খাবারে
কোম্পানি বা এজেন্সির মাধ্যমে খাবারের ব্যবস্থা করলে তেমন চিন্তা থাকে না। খাবারে সমস্যা হলে তাদের অবহিত করুন। খাবার নিজের দায়িত্বে থাকলে মক্কা-মদিনায় বাংলাদেশি খাবারের হোটেল রয়েছে, সেখানে খেতে পারেন। অভিজ্ঞদের পরামর্শ নিন। খাবারের স্বাদের ব্যাপারে অনেকের অভিযোগ থাকে; এক্ষেত্রে তেমন কিছু করার নেই। কারণ মাছ-মাংস অনেকদিন ফ্রিজিং করে রাখার কারণে প্রকৃত স্বাদ নষ্ট হয়ে যায়। যাত্রা পথে আপনার হ্যান্ডব্যাগে রাখা শুকনা খাবার অথবা খেজুর গ্রহণ করুন। বিমানবন্দর থেকে খাবার-পানীয় ক্রয় করে খেতে পারেন। তবে সেখানকার খাবার-পানীয় খুব উচ্চমূল্যের হয়ে থাকে।
কেনাকাটায়
আতর, সুরমা, তাসবিহ, জায়নামাজ, বিভিন্ন ধরনের বোরকা ও পাঞ্জাবি এগুলো মক্কা-মদিনার হোটেলের আশপাশেই পাওয়া যায়। বড় আকারে শপিং করলে পাইকারি মার্কেটগুলোতে যেতে পারেন। কিনতে চাইলে জেদ্দার মার্কেট থেকেও কেনাকাটা করা যায়। আপনি কতটুকু পরিমাণ বা কত কেজি মালামাল বিমানে আনতে পারেবন সেই হিসেবে মোথায় রেখে কেনাকাটা করুন।
স্বর্ণে
স্বর্ণ বেশি নিতে চাইলে প্রথমে দেখতে হবে কোথায় সস্তা পাওয়া যায়। অনেক সময় দেখা যায় জেদ্দাতে কিংবা মক্বা-মদিনার বিভিন্ন মার্কেটে সস্তা পাওয়া যায়। দরদাম করে বুঝেশুনে স্বর্ণ কিনুন। অবশ্যই স্বর্ণ ক্রয় করার মানি রশিদ সংরক্ষণ করুন এবং বিমানবন্দরে প্রদর্শন করে অতিরিক্ত হলে কর প্রদান করুন। পরিচিত অনেক মানুষ স্বর্ণের বার নিতে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করেন এবং বলে থাকেন এতটুকু এতকুটু নিলে সমস্যা হবে না। যথা সম্ভব এসব অফার এড়িয়ে চলুন।
জমজমের পানি
দেশে ফেরার সময় উমরাযাত্রীরা শুধু পাঁচ লিটার জমজমের পানির বোতল সঙ্গে নিতে পারবেন। লাগেজের ভেতর পানির বোতল নিতে পারবেন না; বরং বিমানে নিজেদের সঙ্গে বোতল রাখতে হবে। জমজমের পানির বোতল বিমানবন্দর থেকে ক্রয় করতে হবে, বিমানের নির্দষ্ট কাউন্টারে জমা দিন। আন্তর্জাতিক ফ্লাইটে জমজমের পানির বোতল বহনের অনুমতির জন্য নুসুক অ্যাপের মাধ্যমে নিবন্ধনের প্রমাণ দেখাতে হয়।
হাজরে আসওয়াদ চুম্বনে
আপনার চুম্বন বা স্পর্শের চেষ্টার ফলে যেন অন্য কোনো মুমিন বান্দার ক্ষতি না হয়। ধাক্কাধাক্কির ফলে কেউ যেন কারও ওপর হুমড়ি খেয়ে না পড়ে। নারীরা এ স্থানে বিশেষভাবে সতর্ক থাকুন।
মক্কা-মদিনায় অবস্থানকালে
মক্কা-মদিনায় অবস্থানকালে নিজের পরিচিতি কার্ড, ভিসা ও পাসপোর্টের মূল কপি কিংবা ফটোকপি সব সময় সঙ্গে রাখুন। বিশেষ করে হোটেলের কার্ড সব সময় সাথে রাখবেন। গ্রুপের সঙ্গে আসলে দলবেঁধে চলাফেরা করবেন। কোনো অবস্থাতেই একাকী ঘুরতে যাবেন না। মুয়াল্লিমের পরামর্শ মেনে সফর করলে সফর সহজ হবে।
লেখক: পুলিশ কমিশনার, রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ