ঢাকা ১৮ আষাঢ় ১৪৩১, মঙ্গলবার, ০২ জুলাই ২০২৪

বড়শি দিয়ে মাছ শিকারের বিধান

প্রকাশ: ২৯ জুন ২০২৪, ০৭:০০ পিএম
আপডেট: ২৯ জুন ২০২৪, ০৭:৩১ পিএম
বড়শি দিয়ে মাছ শিকারের বিধান
ইন্টারনেট থেকে সংগ্রহীত বড়শি দিয়ে শাছ শিকার করার কার্টুন

মাছ শিকারের অনেক পদ্ধতি রয়েছে। এর মধ্যে বড়শি দিয়ে মাছ ধরার পদ্ধতি বেশ পুরোনো। প্রশ্ন হলো, এভাবে মাছ ধরা শরিয়তসম্মত কিনা? অনেকে মনে করেন, বড়শি দিয়ে মাছ ধরা প্রতারণার শামিল। কিন্তু এটি প্রতারণার পর্যায়ে পড়ে না। কেননা প্রতারণার বিধান শুধু মানুষের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য, মাছ বা অন্য প্রাণীর ক্ষেত্রে নয়। মাছকে আল্লাহ মানুষের খাদ্য হিসেবে সৃষ্টি করেছেন। ‘তোমাদের জন্য সমুদ্রের শিকার ও তার খাদ্য হালাল করা হয়েছে, যাতে তা তোমাদের ও কাফেলার জন্য ভোগের উপকরণ হয়...।’ (সুরা মায়িদা, আয়াত: ৯৬)

আল্লাহ আরও বলেন, ‘দুটি দরিয়াও এক রকম নয়। একটি সুমিষ্ট, সুস্বাদু, সুপেয়; অন্যটি লবণাক্ত, বিস্বাদ। তথাপি তোমরা সকল (প্রকার পানি) থেকে তাজা গোশত আহার করো আর বের করো অলংকার; পরিধান করার জন্যে। তোমরা দেখতে পাও নৌযানগুলো ঢেউয়ের বুক চিরে চলাচল করে, যাতে তোমরা তাঁর অনুগ্রহ খোঁজ করতে পার, আর যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করো।’ (সুরা ফাতির, আয়াত: ১২)। পবিত্র কোরআনে এরশাদ হয়েছে, ‘আমি তোমাদেরকে যে রিজিক দান করেছি, তার মধ্যে পবিত্র বস্তুসমূহ ভক্ষণ করো।’ (সুরা বাকারা, আয়াত: ৫৭)

বড়শি দিয়ে মাছ ধরার ক্ষেত্রে কয়েকটি বিষয় লক্ষণীয়
এক. মাছকে আকর্ষণ করতে বড়শিতে টোপ হিসেবে বিভিন্ন কিছু ব্যবহার করা হয়। জীবিত ছোট মাছ, ব্যাঙ, পোকামাকড় বা অন্য কোনো প্রাণী গেঁথে পানিতে রাখা হয়। জীবিত প্রাণীকে এভাবে কষ্ট দেওয়া ইসলামসম্মত নয়। হাদিসে কোনো প্রাণী বেঁধে রেখে সেটিকে তীরের লক্ষ্যস্থল বানাতে নিষেধ করা হয়েছে। আনাস (রা.) বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) কোনো প্রাণী বেঁধে সেটিকে তীরের লক্ষ্যস্থল বানাতে নিষেধ করেছেন।’ (মুসলিম, হাদিস: ৪৮৯৯)

দুই. আল্লাহ সৃষ্টিজগতের প্রতিটি বস্তুকে মানুষের কল্যাণের জন্যই সৃষ্টি করেছেন। সুতরাং মানুষ তার প্রয়োজনে মাছ শিকার করতেই পারে। কিন্তু প্রয়োজন ছাড়া এমনিতে বড়শির ব্যবহার করে মাছকে কষ্ট দেওয়া বা অপচয়ের সুযোগ নেই। প্রয়োজন ছাড়া শুধু বিনোদনের জন্য বড়শি দিয়ে মাছ শিকার করা বৈধ নয়। কারণ এতে একদিকে নিষ্প্রয়োজনে আল্লাহর সৃষ্টিকে কষ্ট দেওয়া হয়, অন্যদিকে অপচয় হয়; ইসলামে দুটোই নিষিদ্ধ। তবে মাছ শিকার করে খাওয়া বা বিক্রয় করা অথবা অন্য কোনোভাবে উপকৃত হওয়াতে সমস্যা নেই। আল্লাহ বলেন, ‘এবং আহার করবে ও পান করবে। কিন্তু অপচয় করবে না। তিনি অপচয়কারীকে পছন্দ করেন না।’ (সুরা আরাফ, আয়াত: ৩১)

তিন. কোনো কোনো এলাকায় বড়শি দিয়ে মাছ শিকারের জন্য নির্দিষ্ট মূল্যে টিকিট ছাড়া হয়। কোথাও স্থায়ীভাবে টিকিটের বিনিময়ে বড়শি দিয়ে মাছ শিকারের ব্যবস্থা রয়েছে। টিকিট সংগ্রহকারীরা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত মাছ শিকার করে থাকে। যে যা শিকার করতে পারে সেটা তার হয়ে যায়। কেউ বেশি মাছ শিকার করতে পারে, কাউকে শূন্য হাতে ফিরতে হয়। মাছ শিকারের এমন পদ্ধতি শরিয়তসম্মত নয়। কারণ এতে কে কী পরিমাণ মাছ পাবে, তা অস্পষ্ট। ক্ষেত্রবিশেষে একেবারেই মাছ না পাওয়ারও আশঙ্কা রয়েছে। এটা এক ধরনের ধোঁকা ও প্রতারণা। আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, ‘পাথরের টুকরা নিক্ষেপের মাধ্যমে ক্রয়-বিক্রয় ও ধোঁকাপূর্ণ ক্রয়-বিক্রয় রাসুলুল্লাহ (সা.) নিষেধ করেছেন।’ (মুসলিম, হাদিস: ১৫১৩)

এ ছাড়া এতে জুয়া এবং লটারির সঙ্গেও সাদৃশ্যতা রয়েছে। কারণ এখানে সবাই টাকা দিলেও সবার মাছ পাওয়ার নিশ্চয়তা নেই। আবার কে কী পরিমাণ পাবে, তাও জানা নেই। মাছ না পেলে বা কম পেলে টাকা ফেরত পাওয়ার সুযোগ নেই। টিকিটের মূল্য থেকে বেশি মূল্যের মাছ পেলেও সমন্বয় নেই। ফলে কেউ বেশি পায়, কেউ কম পায়, আবার কেউ বঞ্চিত হয়। ইসলামে জুয়া ও লটারি হারাম। আল্লাহ বলেন, ‘হে বিশ্বাসীরা, মদ, জুয়া, মূর্তি ও ভাগ্যনির্ধারক তীর ঘৃণিত শয়তানি কাজ। তোমরা তা বর্জন করো, যাতে তোমরা সাফল্যমণ্ডিত হতে পার।’ (সুরা মায়েদা, আয়াত: ৯০) 
তবে পুকুরে এভাবে মাছ ধরার ব্যবস্থা করা যেতে পারে যে, শিকারি যা মাছ পাবে, তা মালিকের কাছ থেকে নির্ধারিত মূল্যে ক্রয় করে নেবে। মাছ না পেলে তো আর অসুবিধা থাকল না। বড়শি দিয়ে মাছ শিকারের যেমন বৈধতা রয়েছে, তেমনি এর অপব্যবহারে নিষেধাজ্ঞাও রয়েছে। 

মাছ আল্লাহতায়ালার দেওয়া বিশেষ এক নিয়ামত। এটা জবাই করতে হয় না, মরার পরও খাওয়া যায় এবং ইহরাম অবস্থায়ও মাছ শিকার করা জায়েজ বা বৈধ। বিভিন্ন দেশে বিভন্নভাবে মাছ শিকার করা হয়। আধুনিক যন্ত্রপাতি, দেশীয় সরঞ্জাম ব্যবহার এবং বিভিন্ন কলাকৌশল প্রয়োগ হয় এক্ষেত্রে। তবে বড়শির ব্যবহার করে মাছ শিকার করা পরিচিত ও সহজ পদ্ধতি। জীবনের সব ক্ষেত্রেই ইসলামের নির্দেশনা ও বিধান রয়েছে। এর উদ্দেশ্য হলো এ বিধান মানার মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টির পথে এগিয়ে চলা। আমাদের উচিত, বড়শি দিয়ে মাছ শিকার করার ক্ষেত্রে ইসলাম প্রদত্ত বিধান অনুসরণ করা।

লেখক: আলেম ও মাদরাসা শিক্ষক

সন্তানের ভালোর জন্য দোয়া

প্রকাশ: ০২ জুলাই ২০২৪, ০৭:০০ পিএম
আপডেট: ০২ জুলাই ২০২৪, ০৭:২০ পিএম
সন্তানের ভালোর জন্য দোয়া
পিতা-মাতার সঙ্গে সন্তান। কার্টুন ছবি

সন্তান আল্লাহর পক্ষ থেকে বিশেষ নেয়ামত। নেক সন্তান আল্লাহর পক্ষ থেকে বান্দার প্রতি মহান দান। আর সন্তান জন্মদানে পিতা-মাতার ভূমিকাই মুখ্য। তাই সন্তান লালন-পালন ও তাদের জন্য কল্যাণ কামনায় দোয়া করার দায়িত্বও পিতা-মাতার। সন্তান যদি নেককার হয়, তা হলে পিতা-মাতার রয়েছে অপরিসীম সদকায়ে জারিয়ার সওয়াব। এক আয়াতে সন্তানকে পার্থিব জীবনের অলংকারও বলা হয়েছে, ‘ধন, সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি পার্থিব জীবনের অলংকার।’ (সুরা কাহাফ, আয়াত: ৪৬)

সন্তানের জন্য পিতা-মাতার দোয়া আল্লাহ অবশ্যই কবুল করেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তিনটি দোয়া অবশ্যই কবুল হয়, এতে কোনো সন্দেহ নাই। ১. নির্যাতিতের দোয়া, ২. মুসাফিরের দোয়া এবং (৩) সন্তানের জন্য পিতা-মাতার দোয়া।’ (আবু দাউদ, হাদিস: ১৫৩৬)  

সন্তানের জন্য পিতা-মাতা কী দোয়া করবে
পিতা-মাতার কাছে সন্তান সব সময় দোয়ার হকদার। তাদের উচিত সন্তানের জন্য সব সময় কল্যাণের দোয়া করা। সন্তান পৃথিবীতে ভূমিষ্ঠ হওয়ার আগে পিতা-মাতার বেশি বেশি এই দোয়া করা উচিত—

বাংলা উচ্চারণ: ‘রাব্বি হাবলি মিল্লাদুনকা জুররিয়াতান তাইয়িবাহ, ইন্নাকা সামিউদ দোয়া।’

বাংলা অর্থ: হে আমাদের প্রতিপালক, তোমার পক্ষ থেকে আমাকে পূতপবিত্র সন্তান দান করো। নিশ্চয়ই তুমি প্রার্থনা কবুলকারী।’ (সুরা আলে ইমরান, আয়াত: ৩৮) 

সন্তান যখন ভূমিষ্ঠ হবে তখন প্রত্যহ এই দোয়া পাঠ করা উচিত—

বাংলা উচ্চারণ: ‘রাব্বিজ আলনি মুকিমাস সালাতি, ওয়া মিন জুররিয়াতি, রাব্বানা ওয়া তাকাব্বাল দোয়া।’

বাংলা অর্থ: হে আমার প্রতিপালক, আমাকে নামাজ আদায়কারী করুন এবং আমার বংশধরদের মধ্য থেকেও। হে আমার প্রতিপালক, আমার প্রার্থনা কবুল করুন।’ (সুরা ইবরাহিম, আয়াত: ৪০) 

সন্তান যখন প্রাপ্তবয়ষ্ক হবে তখন তার কল্যাণ কামনার্থে এই দোয়া বেশি বেশি  পাঠ করা যেতে পারে—

বাংলা উচ্চারণ: ‘রাব্বানা লিয়ুকিমুস সালাতা, ফাজআল আফইদাতাম মিনান নাসি, তাহওয়ি ইলাইহিম ওয়ারজুকহুম মিনাস সামারাতি, লা আল্লাহুম ইয়াশকুরুন।’

বাংলা অর্থ: হে আমার প্রতিপালক, তারা (সন্তান-সন্ততি) যাতে নামাজ প্রতিষ্ঠা করে। কাজেই তুমি মানুষের অন্তরকে তাদের প্রতি অনুরাগী করে দাও। আর ফল-ফলাদি দিয়ে তাদের জীবিকার ব্যবস্থা করো; যাতে তারা (আল্লাহতায়ালার) শুকরিয়া আদায় করতে পারে।’ (সুরা ইবরাহিম, আয়াত: ৩৭)

লেখক: আলেম ও মাদরাসা শিক্ষক

 

যেসব কারণে অজু ভেঙে যায়

প্রকাশ: ০২ জুলাই ২০২৪, ০৯:২২ এএম
আপডেট: ০২ জুলাই ২০২৪, ০৯:২৪ এএম
যেসব কারণে অজু ভেঙে যায়
ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত অজুরত এক মুসল্লির ছবি।

প্রাপ্তবয়স্ক নারী-পুরুষের ওপর পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ। নামাজের জন্য অজু করতে হয়। অজু ছাড়া নামাজ হবে না। নামাজ ছাড়াও ইসলামে বেশ কিছু কাজ রয়েছে, যেগুলোর জন্য অজু থাকা আবশ্যক। অজু ভঙ্গের সাতটি কারণ রয়েছে, সেগুলো এখানে তুলে ধরা হলো—

  • পায়খানা ও পেশাবের রাস্তা দিয়ে কোনো কিছু বের হওয়া। যেমন বায়ু, পেশাব-পায়খানা, পোকা ইত্যাদি। (হেদায়া: ১/৭)। পবিত্র কোরআনে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘তোমাদের কেউ প্রসাব-পায়খানা সেরে আসলে (নামাজ পড়তে পবিত্রতা অর্জন করে নাও)।’ (সুরা মায়িদা, আয়াত : ০৬)। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘শরীর থেকে যা কিছু বের হয়, তার কারণে অজু ভেঙে যায়...।’ (সুনানে কুবরা লিল বায়হাকি, হাদিস: ৫৬৮)
  • রক্ত, পুঁজ বা পানি বের হয়ে গড়িয়ে পড়া। (হেদায়া : ১/১০)। আবদুল্লাহ বিন উমর (রা.)-এর যখন নাক দিয়ে রক্ত ঝড়তো, তখন তিনি ফিরে গিয়ে অজু করে নিতেন। (মুয়াত্তা মালেক, হাদি: ১১০)
  • মুখ ভরে বমি করা। আয়েশা (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তির বমি হয় অথবা নাক দিয়ে রক্ত ঝরে বা মজি (সহবারের আগে বের হওয়া সাদা পানি) বের হয়, তাহলে ফিরে গিয়ে অজু করে নেবে।’ (ইবনে মাজাহ, হাদিস: ১২২১)
  • থুথুর সঙ্গে রক্তের ভাগ সমান বা বেশি হওয়া। হাসান বসরি (রহ.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি তার থুথুতে রক্ত দেখে তাহলে থুথুতে রক্ত প্রবল না হলে তার ওপর অজু করা আবশ্যক হয় না।’ (মুসান্নাফ ইবনে আবি শাইবা, হাদিস: ১৩৩০)
  • চিৎ বা কাত হয়ে হেলান দিয়ে ঘুম যাওয়া। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘সিজদা অবস্থায় ঘুমালে অজু ভঙ্গ হয় না, তবে চিৎ হয়ে শুয়ে পড়লে ভেঙে যাবে, কেননা চিৎ বা কাৎ হয়ে শুয়ে পড়লে শরীর ঢিলে হয়ে যায়।’ (ফলে বাতকর্ম হয়ে যাবার সম্ভাবনা রয়েছে) (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস: ২৩১৫)
  • পাগল, মাতাল বা অচেতন হলে। হাম্মাদ (রহ.) বলেন, যখন পাগল ব্যক্তি সুস্থ্ হয়, তখন নামাজের জন্য তার অজু করতে হবে। (মুসান্নাফ আব্দুর রাজ্জাক, হাদিস: ৪৯৩)
  • নামাজে উচ্চৈঃস্বরে হাসি দিলে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি নামাজে উচ্চৈঃস্বরে হাসে, সে ব্যক্তি অজু ও নামাজ পুনরায় আদায় করবে।’ (দারা কুতনি, হাদিস: ৬১২)

লেখক: আলেম ও অনুবাদক

 

রুকু থেকে ওঠার দোয়া

প্রকাশ: ০১ জুলাই ২০২৪, ০৭:০০ পিএম
আপডেট: ০১ জুলাই ২০২৪, ০৭:২৮ পিএম
রুকু থেকে ওঠার দোয়া
নামাজে রুকু করছেন এক মুসল্লি। ছবি : ইন্টারনেট

ঈমানের পর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত নামাজ। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘আমাদের এবং কাফেরদের মধ্যে পার্থক্যকারী আমল নামাজ। যে নামাজ ছেড়ে দিল সে কুফরি করল।’ (নাসায়ি, ৪৬৩)

অন্য হাদিসে জাবের (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘কুফর ও ঈমানের মধ্যে পার্থক্য হলো নামাজ ত্যাগ করা।’ (তিরমিজি, ২৬১৮)

নামাজের অন্যতম কাজ হলো রুকু। আল্লাহর রাসুল (সা.) রুকুতে গেলে এই দোয়া পড়তেন—

سُبْحَانَ رَبِّيَ الْعَظِيْمِ

বাংলা উচ্চারণ: সুবহানা রাব্বিয়াল আজিম।

বাংলা অর্থ: আমি আমার মহান প্রভুর পবিত্রতা বর্ণনা করছি। 

দোয়াটি তিনবার বা ততোধিক (পাঁচ/সাতবার) পড়া ভালো।

আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সা.) আরেকটি দোয়া পড়তেন— 

سبحانك اللهمّ ربنا وبحمدك اللهمّ اغفر لي

বাংলা উচ্চারণ: সুবহানাকা আল্লাহুম্মা রাব্বানা ওয়া বিহামদিকা; আল্লাহুম্মাগ ফিরলি।

বাংলা অর্থ: হে আল্লাহ, হে আমাদের প্রতিপালক, আমি আপনার প্রশংসাসহ পবিত্রতা ঘোষণা করছি। হে আল্লাহ, আমাকে ক্ষমা করে দিন। (বুখারি, হাদিস: ৭৬১; মুসলিম, হাদিস: ৪৮৪)

রুকু থেকে ওঠার দোয়া

سمع الله لمن حمده

বাংলা উচ্চারণ: সামিআল্লাহু লিমান হামিদাহ্।

বাংলা অর্থ: সে আল্লাহ শ্রবণ করেছেন, যাঁর জন্য প্রশংসা করা হয়েছে।

রুকু থেকে ওঠার পরের দোয়া
রুকু থেকে উঠে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে পড়ার দোয়া

ربنا ولك الحمد

বাংলা উচ্চারণ: রাব্বানা ওয়া লাকাল হামদ। 

বাংলা অর্থ: হে আমাদের প্রতিপালক, তোমার জন্যই সমস্ত প্রশংসা।

এ ছাড়াও আরও একটি দোয়ার কথা পাওয়া যায়। আবদুল্লাহ বিন আবি আওফা (রা.) রাসুলুল্লাহ (সা.) থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলতেন—

اللهُمَّ لَكَ الْحَمْدُ مِلْءُ السَّمَاءِ ، وَمِلْءُ الْأَرْضِ ، وَمِلْءُ مَا شِئْتَ مِنْ شَيْءٍ بَعْدُ ، اللهُمَّ طَهِّرْنِي بِالثَّلْجِ وَالْبَرَدِ وَالْمَاءِ الْبَارِدِ ، اللهُمَّ طَهِّرْنِي مِنَ الذُّنُوبِ وَالْخَطَايَا كَمَا يُنَقَّى الثَّوْبُ الْأَبْيَضُ مِنَ الْوَسَخِ

বাংলা উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা লাকাল হামদু মিলউস সামায়ি, ওয়া মিলউল আরজি, ওয়া মিলউ মা শিতা মিন শায়ইন বাদু। আল্লাহুম্মা তাহহিরনি বিসসালজি ওয়াল বারাদি, ওয়াল মা য়িল বারিদি; আল্লাহুম্মা তাহহিরনি মিনাজ জুনুবি ওয়াল খাতায়া, কামা য়ুনাক্কিস সাওবুল আবয়াদু মিনাল ওয়াসাখ।

বাংলা অর্থ: হে আল্লাহ, আপনার প্রশংসা আসমান পূর্ণ করে, জমিন পূর্ণ করে, আর এর পরে যা পূর্ণ করা আপনার ইচ্ছা তা পূর্ণ করে। হে আল্লাহ, আমাকে পবিত্র করুন বরফ দিয়ে, শিলা দিয়ে এবং ঠান্ডা পানি দিয়ে। হে আল্লাহ, আমাকে গুনাহ ও ভুল-ভ্রান্তি থেকে পবিত্র করুন যেভাবে সাদা কাপড়কে ময়লা থেকে নির্মল করা হয়। (মুসলিম, হাদিস: ৪৭৬)

লেখক: আলেম ও অনুবাদক

 

ফরজ নামাজের পর রাসুলুল্লাহ (সা.) যেসব দোয়া পড়তেন

প্রকাশ: ০১ জুলাই ২০২৪, ০৯:০০ এএম
আপডেট: ০১ জুলাই ২০২৪, ১১:০৮ এএম
ফরজ নামাজের পর রাসুলুল্লাহ (সা.) যেসব দোয়া পড়তেন
মসজিদে নববি, মদিনা, সৌদি আরব। ছবি : ইসলামিক আর্কিটেকচারাল হেরিটেজ ডাটাবেস

আল্লাহতায়ালা মানবজাতিকে তাঁর ইবাদতের জন্য সৃষ্টি করেছেন। মুমিনের উচিত, প্রতিটি মুহূর্ত ইবাদতে কাটানো। ফরজ নামাজের পর হাদিসে বর্ণিত আমলগুলো করা অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এর প্রভাবে জীবন কল্যাণময় ও বরকতময় হয়ে ওঠে। নামাজের পর যেসব আমল করা যেতে পারে তা হলো—

আয়াতুল কুরসি পাঠ করা 
আবু উমামা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি প্রত্যেক ফরজ নামাজের পর আয়াতুল কুরসি পাঠ করবে, তার জান্নাতে প্রবেশের পথে মৃত্যু ছাড়া আর কোনো বাধা থাকবে না।’ (নাসায়ি, হাদিস: ৯৪৪৮)

আয়াতুল কুরসির বাংলা উচ্চারণ
আল্লাহু লা ইলাহা ইল্লা হুওয়াল হাইয়ুল কাইয়ুম। লা তা খুজুহু সিনাতুউ ওয়ালা নাউম। লাহু মা ফিস সামা ওয়াতি ওয়ামা ফিল আরদ। মান জাল্লাজি ইয়াশ ফাউ ইনদাহু ইল্লা বি ইজনিহি, ইয়া লামু মা বাইনা আইদিহিম ওয়ামা খালফাহুম, ওয়ালা ইউ হিতুনা বিশাই ইম মিন ইলমিহি ইল্লা বিমা শা আ, ওয়াসিয়া কুরসি ইউহুস সামা ওয়াতি ওয়াল আরদ, ওয়ালা ইয়াউ দুহু হিফজুহুমা ওয়াহুয়াল আলি ইয়ুল আজিম।

আয়াতুল কুরসির বাংলা অর্থ
আল্লাহ ছাড়া অন্য কোনো উপাস্য নেই, তিনি জীবিত, সব কিছুর ধারক। তাঁকে তন্দ্রাও স্পর্শ করতে পারে না এবং নিদ্রাও নয়। আসমান ও জমিনে যা কিছু রয়েছে, সবই তাঁর। কে আছ এমন যে সুপারিশ করবে তাঁর কাছে তাঁর অনুমতি ছাড়া? দৃষ্টির সামনে কিংবা পেছনে যা কিছু রয়েছে, সে সবই তিনি জানেন। তাঁর জ্ঞানসীমা থেকে তারা কোনো কিছুকেই পরিবেষ্টিত করতে পারে না, কিন্তু যতটুকু তিনি ইচ্ছা করেন। তাঁর কুরসি (সিংহাসন) সমস্ত আসমান ও জমিনকে পরিবেষ্টিত করে আছে। আর সেগুলোকে ধারণ করা তাঁর পক্ষে কঠিন নয়। তিনিই সর্বোচ্চ এবং সর্বাপেক্ষা মহান।

তাসবিহে ফাতেমি পড়া
আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি প্রত্যেক নামাজের পর ৩৩ বার সুবহানাল্লাহ, ৩৩ বার আলহামদুলিল্লাহ, ৩৩ বার আল্লাহু আকবার পাঠ করবে, এভাবে তার সমষ্টি ৯৯ হওয়ার পর, সে শততম বার ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু, লা শারিকালাহু, লাহুল মুলকু, ওয়ালাহুল হামদু,  ওয়া হুয়া আলা কুল্লি শাইন কাদির’ পড়বে, তার গুনাহ সমুদ্রের ফেনা পরিমাণ হলেও আল্লাহতায়ালা তাকে ক্ষমা করে দেবেন।’ (মুসলিম, হাদিস: ১২৩৯)

আসতাগফিরুল্লাহ পাঠ করা
রাসুলুল্লাহ (সা.) প্রত্যেক ফরজ নামাজ শেষে ৩ বার আসতাগফিরুল্লাহ বলতেন।’ (মুসলিম, হাদিস: ১২২২)

দোয়া পড়া
আয়েশা (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) নামাজের সালামের পর এই দোয়া বলতেন—

বাংলা উচ্চারণ: ‘আল্লাহুম্মা আনতাস সালাম, ওয়া মিনকাস সালাম, তাবারকতা ইয়া জাল জালালি ওয়াল ইকরাম।’ 

বাংলা অর্থ: হে আল্লাহ, আপনি সব অপূর্ণতা থেকে মুক্ত। আপনার কাছে আমরা সব অকল্যাণ থেকে মুক্তি চাই। (দুনিয়া ও আখেরাতে) আপনি (কল্যাণ) বৃদ্ধি করুন, হে সম্মান ও বড়ত্বের অধিকারী।’ (আবু দাউদ, হাদিস: ১৫১২)

'আল্লাহুম্মা আজিরনি মিনান নার' পড়া
হাদিসে আছে, যে ব্যক্তি ফজর ও মাগরিব নামাজের পর সাতবার আল্লাহুম্মা আজিরনি মিনান নার পড়বে, সেদিন বা সে রাতে মারা গেলে আল্লাহ তাকে জাহান্নাম থেকে রক্ষা করবেন। (আবু দাউদ, হাদিস: ৫০৮০)

দোয়া
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি সকাল-সন্ধ্যা তিনবার এই দোয়া পাঠ করবে, কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাকে সন্তুষ্ট করবেন।’ (তিরমিজি, হাদিস: ৩৩৮৯)। দোয়াটি হলো—

বাংলা উচ্চারণ: রাদিতু বিল্লাহি রব্বাও, ওয়া বিল ইসলামি দ্বীনাও, ওয়া বি মুহাম্মাদি নাবিইয়া।’ 

বাংলা অর্থ: আমি আল্লাহকে রব হিসেবে, ইসলামকে দ্বীন হিসেবে ও মুহাম্মাদ (সা.)-কে নবি হিসেবে পেয়ে সন্তুষ্ট।

মুয়াজ ইবনে জাবাল (রা.)-কে একদিন রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, ‘হে মুয়াজ, ফরজ নামাজগুলোর পর এ দোয়া পাঠ করো—

বাংলা উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা আ ইন্নি আলা জিকরিকা, ওয়া শুকরিকা ওয়া হুসনি ইবাদাতিক।’ 

বাংলা অর্থ: হে আল্লাহ, আমাকে আপনার জিকির ও শোকর আদায় করার তাওফিক দিন এবং উত্তমরূপে আপনার ইবাদত করার তাওফিক দান করুন।’ (মুসলিম, হাদিস: ৩৯)

লেখক: মুহাদ্দিস, জামিয়া কাশেফুল উলুম মাদরাসা, মধুপুর

 

‘লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক’ উচ্চারণ ও অর্থ, কখন পড়া হয়?

প্রকাশ: ৩০ জুন ২০২৪, ০৭:০০ পিএম
আপডেট: ০১ জুলাই ২০২৪, ১১:০৮ এএম
‘লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক’ উচ্চারণ ও অর্থ, কখন পড়া হয়?
মক্কার মসজিদুল হারামে নামাজ পড়ছেন মুসল্লিরা। ছবি : হজ ও ওমরা মন্ত্রণালয়

হজ ও ওমরার সঙ্গে সম্পৃক্ত এক বিশেষ আমল হলো তালবিয়া। হাজিরা হজের ইহরাম বাঁধার সময় থেকে জামরাতুল আকাবায় পাথর নিক্ষেপের আগ পর্যন্ত সময়টায় তালবিয়া পড়েন। তবে কঙ্কর নিক্ষেপের আগমুহূর্তে তালবিয়া পড়া শেষ করতে হয়। আর ওমরা পালনকারীদের ইমরাম বাঁধার পর থেকে তালবিয়া পড়া শুরু করে এবং বায়তুল্লাহর তাওয়াফ শুরু করার আগে তালবিয়া পড়া শেষ করতে হয়।

তালবিয়া

لَبَّيْكَ اَللَّهُمَّ لَبَّيْكَ، لَبَّيْكَ لا شَرِيْكَ لَكَ لَبَّيْكَ، إِنَّ الْحَمْدَ وَالنِّعْمَةَ لَكَ وَالْمُلْكَ، لا شَرِيْكَ لَكَ

তালবিয়ার বাংলা উচ্চারণ 
লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক, লাব্বাইকা লা শারিকা লাকা লাব্বাইক, ইন্নাল হামদা ওয়ান নিমাতা লাকা ওয়াল মুলক, লা শারিকা লাক।

তালবিয়ার বাংলা অর্থ
আমি উপস্থিত হে আল্লাহ, আমি উপস্থিত, আপনার ডাকে সাড়া দিতে আমি হাজির। আপনার কোনো অংশীদার নেই। নিঃসন্দেহে সমস্ত প্রশংসা ও সম্পদরাজি আপনার এবং একচ্ছত্র আধিপত্য আপনার। আপনার কোনো অংশীদার নেই।’ (বুখারি, হাদিস: ১৫৪৯; মুসলিম, হাদিস: ২৮১১)

পুরুষ উচ্চৈঃস্বরে তালবিয়া পাঠ করবেন এবং নারীরা পড়বেন নিম্নস্বরে। (মানাসিক, পৃষ্ঠা: ১০০, আদ্দুররুল মুখতার, পৃষ্ঠা: ৪৮৪)। সাইব ইবনে ইয়াজিদ (রা) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘আমার কাছে জিবরাইল (আ.) এসে বললেন, আমি যেন আমার সাহাবিদের উচ্চৈঃস্বরে তালবিয়া পাঠের নির্দেশ দিই।’ (তিরমিজি, হাদিস: ১/১৭১)

আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, নারীরা উচ্চৈঃস্বরে তালবিয়া পাঠ করবেন না। (মুসান্নাফ ইবনে আবি শায়বা, হাদিস: ১৪৮৮২)

লেখক: আলেম ও মাদরাসা শিক্ষক