আল্লাহতায়ালা মানবজাতিকে তাঁর ইবাদতের জন্য সৃষ্টি করেছেন। মুমিনের উচিত, প্রতিটি মুহূর্ত ইবাদতে কাটানো। ফরজ নামাজের পর হাদিসে বর্ণিত আমলগুলো করা অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এর প্রভাবে জীবন কল্যাণময় ও বরকতময় হয়ে ওঠে। নামাজের পর যেসব আমল করা যেতে পারে তা হলো—
আয়াতুল কুরসি পাঠ করা
আবু উমামা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি প্রত্যেক ফরজ নামাজের পর আয়াতুল কুরসি পাঠ করবে, তার জান্নাতে প্রবেশের পথে মৃত্যু ছাড়া আর কোনো বাধা থাকবে না।’ (নাসায়ি, হাদিস: ৯৪৪৮)
আয়াতুল কুরসির বাংলা উচ্চারণ
আল্লাহু লা ইলাহা ইল্লা হুওয়াল হাইয়ুল কাইয়ুম। লা তা খুজুহু সিনাতুউ ওয়ালা নাউম। লাহু মা ফিস সামা ওয়াতি ওয়ামা ফিল আরদ। মান জাল্লাজি ইয়াশ ফাউ ইনদাহু ইল্লা বি ইজনিহি, ইয়া লামু মা বাইনা আইদিহিম ওয়ামা খালফাহুম, ওয়ালা ইউ হিতুনা বিশাই ইম মিন ইলমিহি ইল্লা বিমা শা আ, ওয়াসিয়া কুরসি ইউহুস সামা ওয়াতি ওয়াল আরদ, ওয়ালা ইয়াউ দুহু হিফজুহুমা ওয়াহুয়াল আলি ইয়ুল আজিম।
আয়াতুল কুরসির বাংলা অর্থ
আল্লাহ ছাড়া অন্য কোনো উপাস্য নেই, তিনি জীবিত, সব কিছুর ধারক। তাঁকে তন্দ্রাও স্পর্শ করতে পারে না এবং নিদ্রাও নয়। আসমান ও জমিনে যা কিছু রয়েছে, সবই তাঁর। কে আছ এমন যে সুপারিশ করবে তাঁর কাছে তাঁর অনুমতি ছাড়া? দৃষ্টির সামনে কিংবা পেছনে যা কিছু রয়েছে, সে সবই তিনি জানেন। তাঁর জ্ঞানসীমা থেকে তারা কোনো কিছুকেই পরিবেষ্টিত করতে পারে না, কিন্তু যতটুকু তিনি ইচ্ছা করেন। তাঁর কুরসি (সিংহাসন) সমস্ত আসমান ও জমিনকে পরিবেষ্টিত করে আছে। আর সেগুলোকে ধারণ করা তাঁর পক্ষে কঠিন নয়। তিনিই সর্বোচ্চ এবং সর্বাপেক্ষা মহান।
তাসবিহে ফাতেমি পড়া
আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি প্রত্যেক নামাজের পর ৩৩ বার সুবহানাল্লাহ, ৩৩ বার আলহামদুলিল্লাহ, ৩৩ বার আল্লাহু আকবার পাঠ করবে, এভাবে তার সমষ্টি ৯৯ হওয়ার পর, সে শততম বার ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু, লা শারিকালাহু, লাহুল মুলকু, ওয়ালাহুল হামদু, ওয়া হুয়া আলা কুল্লি শাইন কাদির’ পড়বে, তার গুনাহ সমুদ্রের ফেনা পরিমাণ হলেও আল্লাহতায়ালা তাকে ক্ষমা করে দেবেন।’ (মুসলিম, হাদিস: ১২৩৯)
আসতাগফিরুল্লাহ পাঠ করা
রাসুলুল্লাহ (সা.) প্রত্যেক ফরজ নামাজ শেষে ৩ বার আসতাগফিরুল্লাহ বলতেন।’ (মুসলিম, হাদিস: ১২২২)
দোয়া পড়া
আয়েশা (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) নামাজের সালামের পর এই দোয়া বলতেন—
বাংলা উচ্চারণ: ‘আল্লাহুম্মা আনতাস সালাম, ওয়া মিনকাস সালাম, তাবারকতা ইয়া জাল জালালি ওয়াল ইকরাম।’
বাংলা অর্থ: হে আল্লাহ, আপনি সব অপূর্ণতা থেকে মুক্ত। আপনার কাছে আমরা সব অকল্যাণ থেকে মুক্তি চাই। (দুনিয়া ও আখেরাতে) আপনি (কল্যাণ) বৃদ্ধি করুন, হে সম্মান ও বড়ত্বের অধিকারী।’ (আবু দাউদ, হাদিস: ১৫১২)
'আল্লাহুম্মা আজিরনি মিনান নার' পড়া
হাদিসে আছে, যে ব্যক্তি ফজর ও মাগরিব নামাজের পর সাতবার আল্লাহুম্মা আজিরনি মিনান নার পড়বে, সেদিন বা সে রাতে মারা গেলে আল্লাহ তাকে জাহান্নাম থেকে রক্ষা করবেন। (আবু দাউদ, হাদিস: ৫০৮০)
দোয়া
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি সকাল-সন্ধ্যা তিনবার এই দোয়া পাঠ করবে, কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাকে সন্তুষ্ট করবেন।’ (তিরমিজি, হাদিস: ৩৩৮৯)। দোয়াটি হলো—
বাংলা উচ্চারণ: রাদিতু বিল্লাহি রব্বাও, ওয়া বিল ইসলামি দ্বীনাও, ওয়া বি মুহাম্মাদি নাবিইয়া।’
বাংলা অর্থ: আমি আল্লাহকে রব হিসেবে, ইসলামকে দ্বীন হিসেবে ও মুহাম্মাদ (সা.)-কে নবি হিসেবে পেয়ে সন্তুষ্ট।
মুয়াজ ইবনে জাবাল (রা.)-কে একদিন রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, ‘হে মুয়াজ, ফরজ নামাজগুলোর পর এ দোয়া পাঠ করো—
বাংলা উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা আ ইন্নি আলা জিকরিকা, ওয়া শুকরিকা ওয়া হুসনি ইবাদাতিক।’
বাংলা অর্থ: হে আল্লাহ, আমাকে আপনার জিকির ও শোকর আদায় করার তাওফিক দিন এবং উত্তমরূপে আপনার ইবাদত করার তাওফিক দান করুন।’ (মুসলিম, হাদিস: ৩৯)
লেখক: মুহাদ্দিস, জামিয়া কাশেফুল উলুম মাদরাসা, মধুপুর