ঢাকা ১৮ আষাঢ় ১৪৩১, মঙ্গলবার, ০২ জুলাই ২০২৪

বিয়ের যত কল্যাণ

প্রকাশ: ২৯ জুন ২০২৪, ০৯:০০ এএম
আপডেট: ২৯ জুন ২০২৪, ০৯:৫১ এএম
বিয়ের যত কল্যাণ
প্রতীকী ছবি

বিয়ে আল্লাহতায়ালার বিশেষ নেয়ামত এবং রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর গুরুত্বপূর্ণ সুন্নাহ। বিয়ের মাধ্যমে মানুষ চারিত্রিক অবক্ষয় থেকে বাঁচতে পারে, আদর্শ পরিবার গঠন করতে পারে, জৈবিক চাহিদা পূরণ করতে পারে এবং মানসিক প্রশান্তি অর্জন করতে পারে। আল্লাহ বলেন, ‘তাঁর নিদর্শনসমূহের মধ্যে অন্যতম হলো, তিনি তোমাদের জন্য তোমাদের মধ্য থেকে সৃষ্টি করেছেন তোমাদের জীবনসঙ্গিনী, যাতে তোমরা তাদের কাছে গিয়ে প্রশান্তি লাভ করতে পারো এবং তিনি তোমাদের পরস্পরের মধ্যে সৃষ্টি করে দিয়েছেন মাওয়াদ্দাহ এবং রহমাহ তথা ভালোবাসা এবং দয়া।’ (সুরা রুম, আয়াত: ২১)
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা বিয়ে করো। কিয়ামতের দিন আমি তোমাদের মাধ্যমে উম্মতের সংখ্যাধিক্যের ব্যাপারে গর্ব করবো।’ (সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকি, ৭/৭৮)। এখানে বিয়ের কয়েকটি কল্যাণকর দিক নিয়ে আলোচনা করা হলো


মানবজাতির সংরক্ষণ: পৃথিবীতে বিয়েই হলো মানবজাতি সংরক্ষণের একমাত্র বৈধ উপায়। পবিত্র কোরআনে এরশাদ হয়েছে, ‘আল্লাহ তোমাদের স্বজাতির মধ্য থেকেই তোমাদের জোড়া সৃষ্টি করেছেন আর তোমাদের জন্য তোমাদের জোড়া থেকে পুত্র-পৌত্রাদি বানিয়েছেন আর তোমাদেরকে উৎকৃষ্ট রিজিক দিয়েছেন...।’ (সুরা নাহল, আয়াত: ৭২)
আরেক আয়াতে আল্লাহ বলেন, ‘আমি আপনার আগে অনেক নবি-রাসুল পাঠিয়েছি। আমি তাদের দান করেছি স্ত্রী-সন্তান।’ (সুরা রাদ, আয়াত: ৩৮)

চারিত্রিক পবিত্রতা রক্ষা হয়: বিবাহের মাধ্যমে চারিত্রিক পবিত্রতা রক্ষা হয়। জীবনের বাঁকে বাঁকে শয়তানের পেতে রাখা নানা ফাঁদ থেকে বেঁচে থাকা যায়। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যখন আল্লাহর কোনো বান্দা বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়, তখন তার অর্ধেক দ্বীন পূর্ণ হয়ে যায়। এরপর বাকি অর্ধেকের ব্যাপারে আল্লাহকে ভয় করা তার দায়িত্ব হয়ে পড়ে।’ (সিলসিলাতুস সহিহাহ, ৬২৫) 

রাসুলুল্লাহ (সা.) আরও  বলেছেন, ‘হে যুবসমাজ, তোমাদের উচিত হলো বিবাহ করা। বিবাহ দৃষ্টি অবনত রাখে এবং লজ্জাস্থানের হেফাজত করে। তবে কারও বিবাহের সামর্থ্য না থাকলে, তার উচিত রোজা রাখা। রোজা যৌনশক্তি দমন করে রাখে।’ (তিরমিজি, ১০৮১)


মনের স্থিরতা ও প্রশান্তি অর্জন: পবিত্র কোরআনে এরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা তাদের কাছে গিয়ে প্রশান্তি লাভ করতে পারো।’ (সুরা রুম, আয়াত: ২১)। এটাও বিয়ের একটা বিশেষ সফলতা যে, বিয়ে মানবমননে প্রশান্তি আনে। সুস্থ চেতনাবোধ জাগ্রত করে। দায়িত্ববোধ শিক্ষা দেয়। এ ব্যাপারে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘পৃথিবীই হলো ভোগের সামগ্রী। পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ ভোগের সামগ্রী হলো সৎ জীবনসঙ্গিনী।’ (মুসলিম, ১৪৬৭)
আরেক হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সা.) সৌভাগ্যের চার সোপানের কথা উল্লেখ করেছেন। সেখানে প্রথমে বলেছেন, ‘নেককার স্ত্রী।’ (সহিহুত তারগিব, ২৫৭৬)

জৈবিক চাহিদা পূরণ: জৈবিক চাহিদা মানবজীবনের একটা স্বাভাবিক চাহিদা। একটা নির্দিষ্ট বয়সে পৌঁছানোর পরে প্রত্যেক সুস্থ মানুষ এই চাহিদা অনুভব করেন। এটা রাব্বুল আলামিনেরই সৃষ্টি এবং তিনিই এই চাহিদা পূরণের বৈধ পন্থা মানুষকে বলে দিয়েছেন। পৃথিবীতে যারা যখনই এই চাহিদার বিরুদ্ধে গেছে, তারা লাঞ্ছিত হয়েছে, অপদস্থ হয়েছে, ধিক্কৃত হয়েছে। 
যেমন খ্রিষ্টানরা বহুবার বিভিন্ন শ্রেণির খ্রিষ্টানদের জৈবিক চাহিদা পূরণে নিষেজ্ঞাধা জারি করেছে। ফলে হয়েছে কী? সময়ে সময়ে তাদের চার্চগুলোতে যৌন নিপীড়নের ঘটনা ঘটেছে। ইন্টারনেটে সার্চ করলে এখনো শত শত প্রমাণ পাওয়া যাবে।
একবার সাহাবিগণের একটি দল রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে খাসি হয়ে যাওয়ার আবদার করেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) তাদেরকে এ ব্যাপারে স্পষ্টভাবে নিষেধ করেন। আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, ‘আমরা রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সঙ্গে জিহাদে অংশ নিতাম, কিন্তু আমাদের কোনো সম্পদ ছিল না। 

সুতরাং আমরা রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে বললাম, আমরা কী খাসি হয়ে যাব? তিনি আমাদেরকে খাসি হতে নিষেধ করলেন এবং কোনো নারীর সাথে একটা কাপড়ের বিনিময়ে হলেও বিবাহ করার অনুমতি দিলেন এবং আমাদেরকে এই আয়াত পাঠ করে শোনালেন, হে মুমিনগণ! আল্লাহতায়ালা যে পবিত্র জিনিসগুলো তোমাদের জন্য হালাল করেছেন, তোমরা তা হারাম করো না এবং সীমা লঙ্ঘন করো না। আল্লাহ সীমা লঙ্ঘনকারীদের পছন্দ করেন না।’

স্বামী-স্ত্রী একে অপরকে যে আল্লাহতায়ালা জৈবিক চাহিদা পূরণের সহযোগী বানিয়েছেন, এ ব্যাপারে তো কোরআন মাজিদে এবং হাদিসে নববিতে অনেক বর্ণনা রয়েছে। এখানে শুধু একটা আয়াত উল্লেখ করা হলো। 
আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘স্ত্রীগণ তোমাদের পোশাকস্বরূপ এবং তোমরা তাদের পোশাকস্বরূপ।’ (সুরা বাকারা, আয়াত: ১৮৭) এই আয়াতের সংক্ষিপ্ত তাফসির হলো, পোশাক যেমন মানুষের ইজ্জতের হেফাজত করে, স্বামী-স্ত্রীও একে অপরের ইজ্জতের হেফাজত করে।

লেখক: শিক্ষক, মাদরাসাতুল হেরা, মিরপুর-২

সন্তানের ভালোর জন্য দোয়া

প্রকাশ: ০২ জুলাই ২০২৪, ০৭:০০ পিএম
আপডেট: ০২ জুলাই ২০২৪, ০৭:২০ পিএম
সন্তানের ভালোর জন্য দোয়া
পিতা-মাতার সঙ্গে সন্তান। কার্টুন ছবি

সন্তান আল্লাহর পক্ষ থেকে বিশেষ নেয়ামত। নেক সন্তান আল্লাহর পক্ষ থেকে বান্দার প্রতি মহান দান। আর সন্তান জন্মদানে পিতা-মাতার ভূমিকাই মুখ্য। তাই সন্তান লালন-পালন ও তাদের জন্য কল্যাণ কামনায় দোয়া করার দায়িত্বও পিতা-মাতার। সন্তান যদি নেককার হয়, তা হলে পিতা-মাতার রয়েছে অপরিসীম সদকায়ে জারিয়ার সওয়াব। এক আয়াতে সন্তানকে পার্থিব জীবনের অলংকারও বলা হয়েছে, ‘ধন, সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি পার্থিব জীবনের অলংকার।’ (সুরা কাহাফ, আয়াত: ৪৬)

সন্তানের জন্য পিতা-মাতার দোয়া আল্লাহ অবশ্যই কবুল করেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তিনটি দোয়া অবশ্যই কবুল হয়, এতে কোনো সন্দেহ নাই। ১. নির্যাতিতের দোয়া, ২. মুসাফিরের দোয়া এবং (৩) সন্তানের জন্য পিতা-মাতার দোয়া।’ (আবু দাউদ, হাদিস: ১৫৩৬)  

সন্তানের জন্য পিতা-মাতা কী দোয়া করবে
পিতা-মাতার কাছে সন্তান সব সময় দোয়ার হকদার। তাদের উচিত সন্তানের জন্য সব সময় কল্যাণের দোয়া করা। সন্তান পৃথিবীতে ভূমিষ্ঠ হওয়ার আগে পিতা-মাতার বেশি বেশি এই দোয়া করা উচিত—

বাংলা উচ্চারণ: ‘রাব্বি হাবলি মিল্লাদুনকা জুররিয়াতান তাইয়িবাহ, ইন্নাকা সামিউদ দোয়া।’

বাংলা অর্থ: হে আমাদের প্রতিপালক, তোমার পক্ষ থেকে আমাকে পূতপবিত্র সন্তান দান করো। নিশ্চয়ই তুমি প্রার্থনা কবুলকারী।’ (সুরা আলে ইমরান, আয়াত: ৩৮) 

সন্তান যখন ভূমিষ্ঠ হবে তখন প্রত্যহ এই দোয়া পাঠ করা উচিত—

বাংলা উচ্চারণ: ‘রাব্বিজ আলনি মুকিমাস সালাতি, ওয়া মিন জুররিয়াতি, রাব্বানা ওয়া তাকাব্বাল দোয়া।’

বাংলা অর্থ: হে আমার প্রতিপালক, আমাকে নামাজ আদায়কারী করুন এবং আমার বংশধরদের মধ্য থেকেও। হে আমার প্রতিপালক, আমার প্রার্থনা কবুল করুন।’ (সুরা ইবরাহিম, আয়াত: ৪০) 

সন্তান যখন প্রাপ্তবয়ষ্ক হবে তখন তার কল্যাণ কামনার্থে এই দোয়া বেশি বেশি  পাঠ করা যেতে পারে—

বাংলা উচ্চারণ: ‘রাব্বানা লিয়ুকিমুস সালাতা, ফাজআল আফইদাতাম মিনান নাসি, তাহওয়ি ইলাইহিম ওয়ারজুকহুম মিনাস সামারাতি, লা আল্লাহুম ইয়াশকুরুন।’

বাংলা অর্থ: হে আমার প্রতিপালক, তারা (সন্তান-সন্ততি) যাতে নামাজ প্রতিষ্ঠা করে। কাজেই তুমি মানুষের অন্তরকে তাদের প্রতি অনুরাগী করে দাও। আর ফল-ফলাদি দিয়ে তাদের জীবিকার ব্যবস্থা করো; যাতে তারা (আল্লাহতায়ালার) শুকরিয়া আদায় করতে পারে।’ (সুরা ইবরাহিম, আয়াত: ৩৭)

লেখক: আলেম ও মাদরাসা শিক্ষক

 

যেসব কারণে অজু ভেঙে যায়

প্রকাশ: ০২ জুলাই ২০২৪, ০৯:২২ এএম
আপডেট: ০২ জুলাই ২০২৪, ০৯:২৪ এএম
যেসব কারণে অজু ভেঙে যায়
ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত অজুরত এক মুসল্লির ছবি।

প্রাপ্তবয়স্ক নারী-পুরুষের ওপর পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ। নামাজের জন্য অজু করতে হয়। অজু ছাড়া নামাজ হবে না। নামাজ ছাড়াও ইসলামে বেশ কিছু কাজ রয়েছে, যেগুলোর জন্য অজু থাকা আবশ্যক। অজু ভঙ্গের সাতটি কারণ রয়েছে, সেগুলো এখানে তুলে ধরা হলো—

  • পায়খানা ও পেশাবের রাস্তা দিয়ে কোনো কিছু বের হওয়া। যেমন বায়ু, পেশাব-পায়খানা, পোকা ইত্যাদি। (হেদায়া: ১/৭)। পবিত্র কোরআনে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘তোমাদের কেউ প্রসাব-পায়খানা সেরে আসলে (নামাজ পড়তে পবিত্রতা অর্জন করে নাও)।’ (সুরা মায়িদা, আয়াত : ০৬)। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘শরীর থেকে যা কিছু বের হয়, তার কারণে অজু ভেঙে যায়...।’ (সুনানে কুবরা লিল বায়হাকি, হাদিস: ৫৬৮)
  • রক্ত, পুঁজ বা পানি বের হয়ে গড়িয়ে পড়া। (হেদায়া : ১/১০)। আবদুল্লাহ বিন উমর (রা.)-এর যখন নাক দিয়ে রক্ত ঝড়তো, তখন তিনি ফিরে গিয়ে অজু করে নিতেন। (মুয়াত্তা মালেক, হাদি: ১১০)
  • মুখ ভরে বমি করা। আয়েশা (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তির বমি হয় অথবা নাক দিয়ে রক্ত ঝরে বা মজি (সহবারের আগে বের হওয়া সাদা পানি) বের হয়, তাহলে ফিরে গিয়ে অজু করে নেবে।’ (ইবনে মাজাহ, হাদিস: ১২২১)
  • থুথুর সঙ্গে রক্তের ভাগ সমান বা বেশি হওয়া। হাসান বসরি (রহ.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি তার থুথুতে রক্ত দেখে তাহলে থুথুতে রক্ত প্রবল না হলে তার ওপর অজু করা আবশ্যক হয় না।’ (মুসান্নাফ ইবনে আবি শাইবা, হাদিস: ১৩৩০)
  • চিৎ বা কাত হয়ে হেলান দিয়ে ঘুম যাওয়া। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘সিজদা অবস্থায় ঘুমালে অজু ভঙ্গ হয় না, তবে চিৎ হয়ে শুয়ে পড়লে ভেঙে যাবে, কেননা চিৎ বা কাৎ হয়ে শুয়ে পড়লে শরীর ঢিলে হয়ে যায়।’ (ফলে বাতকর্ম হয়ে যাবার সম্ভাবনা রয়েছে) (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস: ২৩১৫)
  • পাগল, মাতাল বা অচেতন হলে। হাম্মাদ (রহ.) বলেন, যখন পাগল ব্যক্তি সুস্থ্ হয়, তখন নামাজের জন্য তার অজু করতে হবে। (মুসান্নাফ আব্দুর রাজ্জাক, হাদিস: ৪৯৩)
  • নামাজে উচ্চৈঃস্বরে হাসি দিলে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি নামাজে উচ্চৈঃস্বরে হাসে, সে ব্যক্তি অজু ও নামাজ পুনরায় আদায় করবে।’ (দারা কুতনি, হাদিস: ৬১২)

লেখক: আলেম ও অনুবাদক

 

রুকু থেকে ওঠার দোয়া

প্রকাশ: ০১ জুলাই ২০২৪, ০৭:০০ পিএম
আপডেট: ০১ জুলাই ২০২৪, ০৭:২৮ পিএম
রুকু থেকে ওঠার দোয়া
নামাজে রুকু করছেন এক মুসল্লি। ছবি : ইন্টারনেট

ঈমানের পর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত নামাজ। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘আমাদের এবং কাফেরদের মধ্যে পার্থক্যকারী আমল নামাজ। যে নামাজ ছেড়ে দিল সে কুফরি করল।’ (নাসায়ি, ৪৬৩)

অন্য হাদিসে জাবের (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘কুফর ও ঈমানের মধ্যে পার্থক্য হলো নামাজ ত্যাগ করা।’ (তিরমিজি, ২৬১৮)

নামাজের অন্যতম কাজ হলো রুকু। আল্লাহর রাসুল (সা.) রুকুতে গেলে এই দোয়া পড়তেন—

سُبْحَانَ رَبِّيَ الْعَظِيْمِ

বাংলা উচ্চারণ: সুবহানা রাব্বিয়াল আজিম।

বাংলা অর্থ: আমি আমার মহান প্রভুর পবিত্রতা বর্ণনা করছি। 

দোয়াটি তিনবার বা ততোধিক (পাঁচ/সাতবার) পড়া ভালো।

আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সা.) আরেকটি দোয়া পড়তেন— 

سبحانك اللهمّ ربنا وبحمدك اللهمّ اغفر لي

বাংলা উচ্চারণ: সুবহানাকা আল্লাহুম্মা রাব্বানা ওয়া বিহামদিকা; আল্লাহুম্মাগ ফিরলি।

বাংলা অর্থ: হে আল্লাহ, হে আমাদের প্রতিপালক, আমি আপনার প্রশংসাসহ পবিত্রতা ঘোষণা করছি। হে আল্লাহ, আমাকে ক্ষমা করে দিন। (বুখারি, হাদিস: ৭৬১; মুসলিম, হাদিস: ৪৮৪)

রুকু থেকে ওঠার দোয়া

سمع الله لمن حمده

বাংলা উচ্চারণ: সামিআল্লাহু লিমান হামিদাহ্।

বাংলা অর্থ: সে আল্লাহ শ্রবণ করেছেন, যাঁর জন্য প্রশংসা করা হয়েছে।

রুকু থেকে ওঠার পরের দোয়া
রুকু থেকে উঠে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে পড়ার দোয়া

ربنا ولك الحمد

বাংলা উচ্চারণ: রাব্বানা ওয়া লাকাল হামদ। 

বাংলা অর্থ: হে আমাদের প্রতিপালক, তোমার জন্যই সমস্ত প্রশংসা।

এ ছাড়াও আরও একটি দোয়ার কথা পাওয়া যায়। আবদুল্লাহ বিন আবি আওফা (রা.) রাসুলুল্লাহ (সা.) থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলতেন—

اللهُمَّ لَكَ الْحَمْدُ مِلْءُ السَّمَاءِ ، وَمِلْءُ الْأَرْضِ ، وَمِلْءُ مَا شِئْتَ مِنْ شَيْءٍ بَعْدُ ، اللهُمَّ طَهِّرْنِي بِالثَّلْجِ وَالْبَرَدِ وَالْمَاءِ الْبَارِدِ ، اللهُمَّ طَهِّرْنِي مِنَ الذُّنُوبِ وَالْخَطَايَا كَمَا يُنَقَّى الثَّوْبُ الْأَبْيَضُ مِنَ الْوَسَخِ

বাংলা উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা লাকাল হামদু মিলউস সামায়ি, ওয়া মিলউল আরজি, ওয়া মিলউ মা শিতা মিন শায়ইন বাদু। আল্লাহুম্মা তাহহিরনি বিসসালজি ওয়াল বারাদি, ওয়াল মা য়িল বারিদি; আল্লাহুম্মা তাহহিরনি মিনাজ জুনুবি ওয়াল খাতায়া, কামা য়ুনাক্কিস সাওবুল আবয়াদু মিনাল ওয়াসাখ।

বাংলা অর্থ: হে আল্লাহ, আপনার প্রশংসা আসমান পূর্ণ করে, জমিন পূর্ণ করে, আর এর পরে যা পূর্ণ করা আপনার ইচ্ছা তা পূর্ণ করে। হে আল্লাহ, আমাকে পবিত্র করুন বরফ দিয়ে, শিলা দিয়ে এবং ঠান্ডা পানি দিয়ে। হে আল্লাহ, আমাকে গুনাহ ও ভুল-ভ্রান্তি থেকে পবিত্র করুন যেভাবে সাদা কাপড়কে ময়লা থেকে নির্মল করা হয়। (মুসলিম, হাদিস: ৪৭৬)

লেখক: আলেম ও অনুবাদক

 

ফরজ নামাজের পর রাসুলুল্লাহ (সা.) যেসব দোয়া পড়তেন

প্রকাশ: ০১ জুলাই ২০২৪, ০৯:০০ এএম
আপডেট: ০১ জুলাই ২০২৪, ১১:০৮ এএম
ফরজ নামাজের পর রাসুলুল্লাহ (সা.) যেসব দোয়া পড়তেন
মসজিদে নববি, মদিনা, সৌদি আরব। ছবি : ইসলামিক আর্কিটেকচারাল হেরিটেজ ডাটাবেস

আল্লাহতায়ালা মানবজাতিকে তাঁর ইবাদতের জন্য সৃষ্টি করেছেন। মুমিনের উচিত, প্রতিটি মুহূর্ত ইবাদতে কাটানো। ফরজ নামাজের পর হাদিসে বর্ণিত আমলগুলো করা অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এর প্রভাবে জীবন কল্যাণময় ও বরকতময় হয়ে ওঠে। নামাজের পর যেসব আমল করা যেতে পারে তা হলো—

আয়াতুল কুরসি পাঠ করা 
আবু উমামা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি প্রত্যেক ফরজ নামাজের পর আয়াতুল কুরসি পাঠ করবে, তার জান্নাতে প্রবেশের পথে মৃত্যু ছাড়া আর কোনো বাধা থাকবে না।’ (নাসায়ি, হাদিস: ৯৪৪৮)

আয়াতুল কুরসির বাংলা উচ্চারণ
আল্লাহু লা ইলাহা ইল্লা হুওয়াল হাইয়ুল কাইয়ুম। লা তা খুজুহু সিনাতুউ ওয়ালা নাউম। লাহু মা ফিস সামা ওয়াতি ওয়ামা ফিল আরদ। মান জাল্লাজি ইয়াশ ফাউ ইনদাহু ইল্লা বি ইজনিহি, ইয়া লামু মা বাইনা আইদিহিম ওয়ামা খালফাহুম, ওয়ালা ইউ হিতুনা বিশাই ইম মিন ইলমিহি ইল্লা বিমা শা আ, ওয়াসিয়া কুরসি ইউহুস সামা ওয়াতি ওয়াল আরদ, ওয়ালা ইয়াউ দুহু হিফজুহুমা ওয়াহুয়াল আলি ইয়ুল আজিম।

আয়াতুল কুরসির বাংলা অর্থ
আল্লাহ ছাড়া অন্য কোনো উপাস্য নেই, তিনি জীবিত, সব কিছুর ধারক। তাঁকে তন্দ্রাও স্পর্শ করতে পারে না এবং নিদ্রাও নয়। আসমান ও জমিনে যা কিছু রয়েছে, সবই তাঁর। কে আছ এমন যে সুপারিশ করবে তাঁর কাছে তাঁর অনুমতি ছাড়া? দৃষ্টির সামনে কিংবা পেছনে যা কিছু রয়েছে, সে সবই তিনি জানেন। তাঁর জ্ঞানসীমা থেকে তারা কোনো কিছুকেই পরিবেষ্টিত করতে পারে না, কিন্তু যতটুকু তিনি ইচ্ছা করেন। তাঁর কুরসি (সিংহাসন) সমস্ত আসমান ও জমিনকে পরিবেষ্টিত করে আছে। আর সেগুলোকে ধারণ করা তাঁর পক্ষে কঠিন নয়। তিনিই সর্বোচ্চ এবং সর্বাপেক্ষা মহান।

তাসবিহে ফাতেমি পড়া
আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি প্রত্যেক নামাজের পর ৩৩ বার সুবহানাল্লাহ, ৩৩ বার আলহামদুলিল্লাহ, ৩৩ বার আল্লাহু আকবার পাঠ করবে, এভাবে তার সমষ্টি ৯৯ হওয়ার পর, সে শততম বার ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু, লা শারিকালাহু, লাহুল মুলকু, ওয়ালাহুল হামদু,  ওয়া হুয়া আলা কুল্লি শাইন কাদির’ পড়বে, তার গুনাহ সমুদ্রের ফেনা পরিমাণ হলেও আল্লাহতায়ালা তাকে ক্ষমা করে দেবেন।’ (মুসলিম, হাদিস: ১২৩৯)

আসতাগফিরুল্লাহ পাঠ করা
রাসুলুল্লাহ (সা.) প্রত্যেক ফরজ নামাজ শেষে ৩ বার আসতাগফিরুল্লাহ বলতেন।’ (মুসলিম, হাদিস: ১২২২)

দোয়া পড়া
আয়েশা (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) নামাজের সালামের পর এই দোয়া বলতেন—

বাংলা উচ্চারণ: ‘আল্লাহুম্মা আনতাস সালাম, ওয়া মিনকাস সালাম, তাবারকতা ইয়া জাল জালালি ওয়াল ইকরাম।’ 

বাংলা অর্থ: হে আল্লাহ, আপনি সব অপূর্ণতা থেকে মুক্ত। আপনার কাছে আমরা সব অকল্যাণ থেকে মুক্তি চাই। (দুনিয়া ও আখেরাতে) আপনি (কল্যাণ) বৃদ্ধি করুন, হে সম্মান ও বড়ত্বের অধিকারী।’ (আবু দাউদ, হাদিস: ১৫১২)

'আল্লাহুম্মা আজিরনি মিনান নার' পড়া
হাদিসে আছে, যে ব্যক্তি ফজর ও মাগরিব নামাজের পর সাতবার আল্লাহুম্মা আজিরনি মিনান নার পড়বে, সেদিন বা সে রাতে মারা গেলে আল্লাহ তাকে জাহান্নাম থেকে রক্ষা করবেন। (আবু দাউদ, হাদিস: ৫০৮০)

দোয়া
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি সকাল-সন্ধ্যা তিনবার এই দোয়া পাঠ করবে, কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাকে সন্তুষ্ট করবেন।’ (তিরমিজি, হাদিস: ৩৩৮৯)। দোয়াটি হলো—

বাংলা উচ্চারণ: রাদিতু বিল্লাহি রব্বাও, ওয়া বিল ইসলামি দ্বীনাও, ওয়া বি মুহাম্মাদি নাবিইয়া।’ 

বাংলা অর্থ: আমি আল্লাহকে রব হিসেবে, ইসলামকে দ্বীন হিসেবে ও মুহাম্মাদ (সা.)-কে নবি হিসেবে পেয়ে সন্তুষ্ট।

মুয়াজ ইবনে জাবাল (রা.)-কে একদিন রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, ‘হে মুয়াজ, ফরজ নামাজগুলোর পর এ দোয়া পাঠ করো—

বাংলা উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা আ ইন্নি আলা জিকরিকা, ওয়া শুকরিকা ওয়া হুসনি ইবাদাতিক।’ 

বাংলা অর্থ: হে আল্লাহ, আমাকে আপনার জিকির ও শোকর আদায় করার তাওফিক দিন এবং উত্তমরূপে আপনার ইবাদত করার তাওফিক দান করুন।’ (মুসলিম, হাদিস: ৩৯)

লেখক: মুহাদ্দিস, জামিয়া কাশেফুল উলুম মাদরাসা, মধুপুর

 

‘লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক’ উচ্চারণ ও অর্থ, কখন পড়া হয়?

প্রকাশ: ৩০ জুন ২০২৪, ০৭:০০ পিএম
আপডেট: ০১ জুলাই ২০২৪, ১১:০৮ এএম
‘লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক’ উচ্চারণ ও অর্থ, কখন পড়া হয়?
মক্কার মসজিদুল হারামে নামাজ পড়ছেন মুসল্লিরা। ছবি : হজ ও ওমরা মন্ত্রণালয়

হজ ও ওমরার সঙ্গে সম্পৃক্ত এক বিশেষ আমল হলো তালবিয়া। হাজিরা হজের ইহরাম বাঁধার সময় থেকে জামরাতুল আকাবায় পাথর নিক্ষেপের আগ পর্যন্ত সময়টায় তালবিয়া পড়েন। তবে কঙ্কর নিক্ষেপের আগমুহূর্তে তালবিয়া পড়া শেষ করতে হয়। আর ওমরা পালনকারীদের ইমরাম বাঁধার পর থেকে তালবিয়া পড়া শুরু করে এবং বায়তুল্লাহর তাওয়াফ শুরু করার আগে তালবিয়া পড়া শেষ করতে হয়।

তালবিয়া

لَبَّيْكَ اَللَّهُمَّ لَبَّيْكَ، لَبَّيْكَ لا شَرِيْكَ لَكَ لَبَّيْكَ، إِنَّ الْحَمْدَ وَالنِّعْمَةَ لَكَ وَالْمُلْكَ، لا شَرِيْكَ لَكَ

তালবিয়ার বাংলা উচ্চারণ 
লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক, লাব্বাইকা লা শারিকা লাকা লাব্বাইক, ইন্নাল হামদা ওয়ান নিমাতা লাকা ওয়াল মুলক, লা শারিকা লাক।

তালবিয়ার বাংলা অর্থ
আমি উপস্থিত হে আল্লাহ, আমি উপস্থিত, আপনার ডাকে সাড়া দিতে আমি হাজির। আপনার কোনো অংশীদার নেই। নিঃসন্দেহে সমস্ত প্রশংসা ও সম্পদরাজি আপনার এবং একচ্ছত্র আধিপত্য আপনার। আপনার কোনো অংশীদার নেই।’ (বুখারি, হাদিস: ১৫৪৯; মুসলিম, হাদিস: ২৮১১)

পুরুষ উচ্চৈঃস্বরে তালবিয়া পাঠ করবেন এবং নারীরা পড়বেন নিম্নস্বরে। (মানাসিক, পৃষ্ঠা: ১০০, আদ্দুররুল মুখতার, পৃষ্ঠা: ৪৮৪)। সাইব ইবনে ইয়াজিদ (রা) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘আমার কাছে জিবরাইল (আ.) এসে বললেন, আমি যেন আমার সাহাবিদের উচ্চৈঃস্বরে তালবিয়া পাঠের নির্দেশ দিই।’ (তিরমিজি, হাদিস: ১/১৭১)

আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, নারীরা উচ্চৈঃস্বরে তালবিয়া পাঠ করবেন না। (মুসান্নাফ ইবনে আবি শায়বা, হাদিস: ১৪৮৮২)

লেখক: আলেম ও মাদরাসা শিক্ষক