![দ্রুততম সময়ে ছোট মন্ত্রিসভা, শপথ ও প্রজ্ঞাপন](uploads/2024/01/12/1705033549.Minister.jpg)
সদ্য সমাপ্ত সংসদ নির্বাচনে জয়ী হয়ে পঞ্চমবারের মতো শেখ হাসিনার নেতৃত্বে গঠিত হয়েছে নতুন সরকার। বিজয় অর্জিত হওয়ার পর বৃহস্পতিবার (১১ জানুয়ারি) চার দিনের মাথায় নতুন মন্ত্রিসভা হলো। ৯ জানুয়ারি বিজয়ী প্রার্থীদের গেজেট প্রকাশ করে নির্বাচন কমিশন। ১০ জানুয়ারি রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শেখ হাসিনাকে নিয়োগ দিয়েছেন মর্মে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। ওই দিনই মন্ত্রিসভার ঘোষণা আসে। সরকার গঠনের অনুমতি দেন রাষ্ট্রপতি।
এর আগে ২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৩০ ডিসেম্বর বিজয় লাভের পর মন্ত্রিসভা গঠিত হয়েছিল ৭ জানুয়ারি। বিজয়ের আট দিনের মাথায়। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিজয় অর্জিত হয় ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি। সরকার গঠন করা হয় ৯ জানুয়ারি। সেবারও চার দিনের মাথায় সরকার গঠিত হয়। এর আগে সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ১২ জুন বিজয়ী হওয়ার ১২ দিন পর ২৩ জুন সরকার গঠন করা হয়।
এবারের নতুন মন্ত্রিসভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ মোট সদস্য ৩৭ জন। এই সংখ্যা ১৯৯১ সাল থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত সবচেয়ে কম। সর্বশেষ মন্ত্রিসভায় প্রধানমন্ত্রী ছাড়াও ছিলেন ২৫ জন মন্ত্রী, ১৯ জন প্রতিমন্ত্রী এবং ৩ জন উপমন্ত্রী। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের পর ২৫ জন পূর্ণমন্ত্রী এবং ১১ জন প্রতিমন্ত্রী হিসেবে গতকাল বৃহস্পতিবার শপথ নেন। সন্ধ্যায় বঙ্গভবনে তাদের শপথবাক্য পাঠ করান রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। নতুন দায়িত্ব বণ্টন করে দেওয়া হয়েছে মন্ত্রণালয়। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে গতকাল মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের নিয়োগসংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। সংবিধানের ৫৬ অনুচ্ছেদের (২) দফা অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন এ নিয়োগ দিয়েছেন।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের হিসাব মতে, ১৯৯১-১৯৯৬ মেয়াদে সরকারের মন্ত্রিপরিষদের সদস্য ছিলেন ৫০ জন। মন্ত্রী ছিলেন ২৫ জন, প্রতিমন্ত্রী ২২ জন এবং উপমন্ত্রী ৩ জন। ১৯৯৬-২০০১ সরকারের মন্ত্রিপরিষদের আকার ছিল ৪৯ জন। এই মন্ত্রিসভায় মন্ত্রী ২২ জন, প্রতিমন্ত্রী ২৪ জন এবং উপমন্ত্রী ৩ জন। ২০০১-২০০৬ সরকারের মন্ত্রিপরিষদের আকার ছিল ৬০ জন। এই মন্ত্রিসভায় মন্ত্রী ছিলেন ২৮ জন, প্রতিমন্ত্রী ২৮ জন এবং উপমন্ত্রী ৪ জন। ২০০৯-২০১৪ সরকারের মন্ত্রিপরিষদ ছিল ৬২ সদস্যবিশিষ্ট। এই মন্ত্রিপরিষদে মন্ত্রী ৩৮ জন ও প্রতিমন্ত্রী ২৪ জন। ২০১৪-২০১৯ সরকারের মন্ত্রিপরিষদে ছিলেন মোট ৫৯ জন। সে সময় সরকারে মন্ত্রী ৩৬ জন, প্রতিমন্ত্রী ২১ জন এবং উপমন্ত্রী ছিলেন ২ জন।
এবার বেশ কিছু নতুন মুখ যুক্ত হয়েছেন মন্ত্রিসভায়। বাদ পড়েছেন অনেকেই। সর্বশেষ মন্ত্রিসভা থেকে এবার বাদ পড়েছেন কৃষিমন্ত্রী ড.আবদুর রাজ্জাক, পাট ও বস্ত্রমন্ত্রী গাজী গোলাম দস্তগীর, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম, ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী ইমরান আহমদ, সমাজকল্যাণমন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ, পরিবেশ বন ও জলবায়ুবিষয়ক মন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন, পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈ সিং, রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন এবং ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তফা জব্বার। প্রতিমন্ত্রীদের মধ্যে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার, যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল, সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী আশরাফ আলী খান, গৃহায়ন ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ, মহিলা ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী বেগম ফজিলাতুন নেছা এবং পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী শামসুল আলম বাদ পড়েছেন।
আবার সর্বশেষ মন্ত্রিসভার তিনজন প্রতিমন্ত্রী এবারের নির্বাচনে পরাজিত হয়েছেন। তারা হলেন বেসামরিক বিমান ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলী, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য এবং ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমান। এই তিনজন নেই নতুন মন্ত্রিসভায়। নির্বাচনে তিনজন প্রতিমন্ত্রী দলীয় মনোনয়ন পাননি। তারা হলেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ, শ্রম প্রতিমন্ত্রী মন্নুজান সুফিয়ান এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন। ফলে তারাও নেই নতুন মন্ত্রিসভায়।
বিশ্লেষকরা বলছেন, এবার মন্ত্রিসভায় দলের সক্রিয় নেতাদের বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। আবার অর্থনৈতিক সংকট ও কূটনৈতিক তৎপরতা এবং সম্পর্ক উন্নয়ন বিবেচনায় পুরোনো মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীরা বাদ পড়ে থাকতে পারেন।
এবারের মন্ত্রিসভায় জায়গা পাননি সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। গতকাল মন্ত্রণালয়ে শেষ কর্মদিবসে গণমাধ্যমের সঙ্গে বিদায়ী আলাপে তিনি বলেন, মেগা প্রকল্পের কাজ বাকি নেই। মন্ত্রিসভায় কেন জায়গা হয়নি সেটি নিয়ে কোনো আক্ষেপ নেই। তিনি বলেন, মন্ত্রিসভায় না থাকলেও সরকারপ্রধান যখন-যেখানে দায়িত্ব পালন করতে বলবেন, সেটা করব।
গত বুধবার মন্ত্রীদের নাম প্রকাশিত হওয়ার পর রাজনীতি বিশ্লেষকরা বলছেন, বেশ কিছু মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীদের কথাবার্তা ও কাজ নিয়ে নানা আলোচনা-সমালোচনা হয়েছে। কোন প্রেক্ষাপটে কোন কথা বলতে হবে, সেটি কোনো কোনো মন্ত্রী বুঝতে পারেননি। সরকার যাদের এমন বক্তব্যে বিব্রত হয়েছে মূলত তারা স্থান পাননি।
নতুন মন্ত্রিসভায় কমেছে নারী মন্ত্রীর সংখ্যা। ২০০৯ সালের মন্ত্রিসভায় নারী ছিলেন ৬ জন, যার ৪ জন পূর্ণমন্ত্রী। দুজন ছিলেন প্রতিমন্ত্রী। পরের দুই দফার সরকারে ছিলেন ৫ জন করে। এবার প্রধানমন্ত্রীসহ সংখ্যা ৪। ধারাবাহিকভাবে এই সংখ্যা কমেছে।
গতকাল মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন বলেন, আপাতত মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীর সংখ্যা বাড়ছে না। আগামী রবিবার থেকে নিজ নিজ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব বুঝে নেবেন তারা। মন্ত্রীদের জন্য বরাদ্দ গাড়ি বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে।