![এবারও মন্ত্রিসভায় ৪ নারী](uploads/2024/01/12/1705046448.MP.jpg)
একাদশের মতো দ্বাদশ জাতীয় সংসদের মন্ত্রিসভাতেও চার নারী স্থান পেয়েছেন। সরকারপ্রধান হিসেবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তার নেতৃত্বে এবারের মন্ত্রিসভায় একজন নারী পেয়েছেন পূর্ণ মন্ত্রিত্ব, তিনি চাঁদপুর-৩ আসনের ডা. দীপু মনি, হয়েছেন সমাজকল্যাণ মন্ত্রী। সঙ্গে দুজন প্রতিমন্ত্রী হয়েছেন। গাজীপুর-৪ আসনের সিমিন হোসেন রিমি মহিলা ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়েছেন গাজীপুর-৩ আসনের রুমানা আলী।
একাদশের মন্ত্রিসভাতেও শেখ হাসিনা ছাড়া ছিলেন একজন পূর্ণ মন্ত্রী, একজন প্রতিমন্ত্রী ও একজন উপমন্ত্রীসহ চারজন নারী। দশম জাতীয় সংসদের মন্ত্রিসভাতে ছিলেন পাঁচজন নারী। এর আগে শেখ হাসিনা ২০০৯ সালে যে সরকার গঠন করেছিলেন, তাতে নারী ছিলেন ছয়জন, তার মধ্যে চারজনই পূর্ণমন্ত্রী ছিলেন। অর্থাৎ নারী মন্ত্রীর সংখ্যা ধারাবাহিকভাবে কমছে। বিশ্লেষণে দেখা যাচ্ছে, এবারের ৩৭ সদস্যের মন্ত্রিসভায় নারীর হার ১০ শতাংশ।
গত বুধবার (১০ জানুয়ারি) রাতে এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে দ্বাদশ জাতীয় সংসদের মন্ত্রিসভার সদস্যদের নাম ঘোষণা করেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন এবং গতকাল সন্ধ্যায় তারা শপথ গ্রহণ করেন।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে নির্বাচিত হয়ে টানা চতুর্থ মেয়াদে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। সেই হিসেবে বলা হচ্ছে শেখ হাসিনা বিশ্বের প্রথম নারী সরকারপ্রধান যিনি ২৫ বছর ক্ষমতায় থাকতে চলেছেন। তিনি ১৯৯৬ সালে প্রথম প্রধানমন্ত্রী হন। এরপর ২০০৮ সালে নির্বাচিত হয়ে ২০০৯ সালে সরকার গঠনের পর থেকে এখন পর্যন্ত টানা প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বে আছেন তিনি।
নতুন মন্ত্রিসভায় শেখ হাসিনা ছাড়া নারী পূর্ণমন্ত্রী কেবল একজন। তিনি ডা. দীপু মনি। চাঁদপুর-৩ আসন থেকে তিনি এ নিয়ে চতুর্থবার নির্বাচিত হলেন। আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক দীপু মনির বাবা ভাষা সংগ্রামী মোহাম্মদ আব্দুল ওয়াদুদ। তার ভাই জাহিদুর রহিম ওয়াদুদ চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি। চিকিৎসাশাস্ত্রে ডিগ্রিধারী দীপু মনি ২০০৮ সালে প্রথম সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তারপরই মন্ত্রিসভায় তার পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব পাওয়া ছিল চমকপ্রদ ঘটনা। ২০১৪ সালে সরকারে না থাকলেও ২০১৮ সালের মন্ত্রিসভায় তিনি শিক্ষামন্ত্রী হয়ে ফেরেন। বাংলাদেশে পররাষ্ট্র ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে তিনি প্রথম নারী, যিনি পূর্ণমন্ত্রী হন।
এবারের মন্ত্রিসভায় প্রতিমন্ত্রী হিসেবে এসেছেন নতুন দুই মুখ। গাজীপুর-৪ আসনের সিমিন হোসেন রিমি এবং গাজীপুর-৩ আসনের রুমানা আলী দুজনই প্রথমবার মন্ত্রিসভায় জায়গা পেলেন।
বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী এবং স্বাধীনতা আন্দোলনের নেতা তাজউদ্দীন আহমদ ও আরেক রাজনৈতিক সংগঠক জোহরা তাজউদ্দীনের মেয়ে রিমি এই আসনে তিন বারের নির্বাচিত সংসদ সদস্য। এ ছাড়া ২০১২ সালের উপনির্বাচনেও তিনি জয়লাভ করেছিলেন।
গাজীপুরের আরেক নারী রাজনীতিক রুমানা আলী এর আগে সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য থাকলেও এবারই প্রথম সরাসরি নির্বাচনে জয়লাভ করেন। তিনি গাজীপুর-৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য রহমত আলীর কন্যা। রহমত আলী গাজীপুর-৩ (শ্রীপুর) আসনে ১৯৯১ সাল থেকে টানা পাঁচবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। ১৯৯৬ সালে শেখ হাসিনার সরকারে তিনি স্থানীয় সরকার প্রতিমন্ত্রীর পদ পেয়েছিলেন। রহমত আলীর মৃত্যুর পর গত নির্বাচনে তার পরিবারের কেউ নৌকার মনোনয়ন না পেলেও এবার প্রার্থী করা হয় মেয়ে রুমানাকে। পেশায় শিক্ষক রুমানা বিএনপিবিহীন এই নির্বাচনে দলীয় নেতা বিদায়ী সংসদ সদস্য ইকবাল হোসেন সবুজকে ভোটে হারিয়ে এবার মন্ত্রিসভায় আসছেন।
এর আগে একাদশ জাতীয় সংসদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাড়া ডা. দীপু মনি ছিলেন শিক্ষামন্ত্রী, শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী ছিলেন খুলনার মন্নুজান সুফিয়ান এবং পরিবেশ বন ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী ছিলেন বাগেরহাটের হাবিবুন নাহার।
২০১৪ সালে শেখ হাসিনার তৃতীয় মন্ত্রিসভায় শেখ হাসিনা ছাড়া পূর্ণমন্ত্রী ছিলেন মতিয়া চৌধুরী। তিনি কৃষি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে ছিলেন। ওই সরকারে প্রতিমন্ত্রী ছিলেন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে ইসমত আরা সাদেক, ডাক ও টেলিযোগাযোগে তারানা হালিম, মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ে মেহের আফরোজ চুমকি। তাদের মধ্যে মতিয়া চৌধুরী এখন সংসদের উপনেতা। ইসমত আরা সাদেক মারা গেছেন। চুমকি এবার নির্বাচন করলেও হেরেছেন দলের স্বতন্ত্র প্রার্থীর কাছে।
২০০৯ সালে শেখ হাসিনার দ্বিতীয় মন্ত্রিসভায় তিনজন নারী পূর্ণমন্ত্রী ছিলেন। তারা হলেন- মতিয়া চৌধুরী, সাহারা খাতুন ও দীপু মনি। গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়গুলোতে সেবার নারীদের বসিয়ে চমক দিয়েছিলেন শেখ হাসিনা। মতিয়া কৃষিমন্ত্রী, সাহারা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, দীপু মনি পররাষ্ট্রমন্ত্রী হয়েছিলেন। তা ছাড়া প্রতিমন্ত্রী ছিলেন মন্নুজান সুফিয়ান। সেই মন্ত্রিসভায় মহিলা ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন বর্তমান স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী।
এ ছাড়া শেখ হাসিনা যেবার প্রথম সরকার গঠন করেন ১৯৯৬ সালে, সেবার মন্ত্রিসভায় দুজন নারীকে নিয়েছিলেন। তারা হলেন মতিয়া চৌধুরী ও সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী। দুজনই ছিলেন পূর্ণ মন্ত্রী।