![মূল্যস্ফীতি কমানোই ব্যবসায়ীদের প্রধান চাওয়া](uploads/2024/06/07/Infration-1717731298.jpg)
অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী জাতীয় সংসদে গতকাল বৃহস্পতিবার (৬ জুন) ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকার বাজেট প্রস্তাব করেছেন। বাজেটে ব্যবসাসংক্রান্ত অনেক কিছুই জড়িত। ব্যবসায়ীরা কি পেলেন এই বাজেটে? তা জানতে খবরের কাগজ বিভিন্ন খাতের শীর্ষ ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলেছে।
এফবিসিসিআই সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, ‘অর্থমন্ত্রী নতুন সরকারের প্রথমবারের মতো ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাব ঘোষণা করেছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এটা ২১তম বাজেট। চ্যালেঞ্জ ও সীমাবদ্ধতার মধ্যেই প্রধানমন্ত্রী এই বাজেট দিয়েছেন। অন্য বছরে বাজেটের আকার ১০ শতাংশ বাড়ানো হলেও এবার ৫ শতাংশের নিচে রেখেছেন তিনি। এটা যৌক্তিক ও বাস্তবসম্মত। সবাই চেষ্টা করলে এটা বাস্তবায়নযোগ্য। মূল্যস্ফীতি ১০ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে। বাজেটে মূল্যস্ফীতি সাড়ে ৬ শতাংশ ধরা হয়েছে। বিভিন্ন প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। সবাই মিলে কাজ করলে এ পর্যায়ে আনা সম্ভব হবে। এটা আমাদেরও চাওয়া।
ব্যক্তি পর্যায়ে করসীমা সাড়ে ৩ লাখ টাকা করা হয়েছে প্রস্তাবিত বাজেটে। আমরা ৪ লাখ ৫০ হাজার করার প্রস্তাব করেছিলাম। আমাদের অনুরোধ, যেন ৪ লাখ করা হয়। উৎসে কর কর্তন যেন প্রত্যাহার করা হয়। রাজস্ব আদায় কঠিন হবে না, যদি ট্যাক্সদাতাদের ওপর বাড়তি চাপ দেওয়া না হয়। যারা কর দেন না, তাদের আওতা বাড়াতে হবে। বাজেটে ঘাটতি পূরণে ব্যাংক ঋণ বেশি ধরা হয়েছে। সরকার এত ঋণ নিলে আমরা ব্যবসায়ীরা কোথায় যাব? জটিলতা হতে পারে। বিদেশ থেকে ঋণ নিতে পারলে ভালো হবে। এটাই আমাদের ৩ কোটি ব্যবসায়ীর বক্তব্য। আগামীকাল শনিবার আনুষ্ঠানিকভাবে মতামত দেওয়া হবে। বিশ্ব অর্থনীতি পরিস্থিতি খুবই সংকটে। তারপরও প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনি ইশতেহার মোতাবেক কল্যাণমুখী বাজেট দেওয়ার ব্যবস্থা করেছেন।’
বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দিন বলেন, ‘বাজেটে ব্যবসায়ীদের পাওয়ার কিছু নেই। এটা হচ্ছে সরকারের আয়-ব্যয়ের হিসাবের একটা ঘোষণা। সরকারের উন্নয়নের বর্ণনা থাকে। জিনিসের দাম বাড়লেও করার কিছু থাকে না। কারণ এর আগেও বিভিন্ন বাজেটে অর্থমন্ত্রী বিভিন্ন প্রস্তাব করেছেন। কিন্তু বাস্তবে বাজারে তার প্রতিফলন দেখা যায়নি। তবে ‘টেকসই উন্নয়নের পরিক্রমায় স্মার্ট বাংলাদেশের স্বপ্নযাত্রা’ নামে যে স্লোগান জাতীয় বাজেট বক্তৃতায় ঘোষণা করা হয়েছে, তা যেন ঠিক রাখা হয়, এটাই কাম্য। কারণ বাজেটে ব্যবসায়ীদের কোনো চাহিদা পূরণ হয় না। মূল্যস্ফীতি ৬ দশমিক ৫০ শতাংশ ধরা হয়েছে।
ডলারের দাম বাড়তে থাকলে কীভাবে এটা ঠিক থাকবে, সেটা দেখা দরকার। যেন ঠিক থাকে, এটাও আমরা চাই। প্রবৃদ্ধিও ধরা হয়েছে ৬ দশমিক ৭৫ শতাংশ। এটা কি সম্ভব? ঠিকমতো বিদ্যুৎ, গ্যাস না পেলে শিল্পের চাকা ঘুরবে কীভাবে? তাই বাজেটে যাই বলুক, মূল্যস্ফীতি ঠিক রাখতে হবে। ভোগ্যপণ্যের দাম কমাতে হবে। এ জন্য যা করার করতে হবে সরকারকে।’
তৈরি পোশাকশিল্পের সংগঠন বিজিএমইএ সভাপতি এস এম মান্নান কচি বাজেটের ব্যাপারে বলেন, ‘অর্থমন্ত্রী বাজেট প্রস্তাব করেছেন। এটা আমরা দেখছি, বুঝছি, জানছি। সব কিছু বিশ্লেষণ করে আগামী শনিবার মতামত দেব। তৈরি পোশাকের সঙ্গে জড়িত বিজিএমইএ, বিকেএমইএ ও বিটিএ একসঙ্গে সব কিছু প্রকাশ করবে।’
বাংলাদেশ ইলেকট্রিক অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ও এফবিসিসিআইএর পরিচালক খন্দকার রুহুল আমিন বলেন, বাজেটে চাওয়া-পাওয়ার মধ্যে এক নম্বর হলো দ্রব্যমূল্য যেন নিয়ন্ত্রণে থাকে। মূল্যস্ফীতি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। কয়েক মাস থেকে ৯ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে। মানুষ কষ্ট পাচ্ছে। কারণ আয় সেভাবে বাড়ছে না। সরকার বাজেটে সাড়ে ৬ শতাংশ প্রস্তাব করেছে। এটা অবশ্যই ঠিক রাখতে হবে। পারলে আরও কমাতে হবে। ৫-৬ শতাংশে রাখতে পারলে আরও ভালো। এটা সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। আমাদের ক্ষুদ্র ও মাঝারি খাতে (এসএমই) ৫০ লাখের বেশি লোক কাজ করে। ৩ মাস কিস্তি দিতে না পারলে খেলাপি হয়ে যাব। তাই আমাদের জন্য বাজেটে বেশি নয়, ১ হাজার কোটি টাকার একটা তহবিল করে যেন রানিং ক্যাপিটাল দেওয়া হয়। সরকার ব্যাংক থেকে বেশি ঋণ না নিয়ে যেন বিদেশ থেকে কম সুদের ঋণ নেয়। তাহলে আমরা ব্যাংকের কাছে যেতে পারব।’