ক্রীড়াবিদদের স্বার্থ সংরক্ষণ ও স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ে কাজ করতে চার বছর আগে প্রথমবারের মতো ‘অ্যাথলেট কমিশন’ গঠন করেছিল বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশন (বিওএ)। যদিও অন্যান্য দেশে আরও আগেই শুরু হয়েছিল এই কমিশনের কার্যক্রম। ২০১৯ সালে গঠিত প্রথম কমিটির মেয়াদ শেষ হওয়ায় গত ৬ ডিসেম্বর নতুন কমিটি গঠন করেছে বিওএ। কিন্তু নতুন এই কমিশন গঠন সম্পর্কে অবগত ছিলেন না বিদায়ী কমিশনের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করা জোবেরা রহমান লিনু।
নবগঠিত কমিশনেও জায়গা হয়নি লিনুর। গিনেসবুক রেকর্ডধারী সাবেক এই টিটি তারকা পুরো বিষয়টি অবগত হয়েছেন পরে। অন্যরা চিঠি পাওয়ার পর। নতুন কমিটিতে জায়গা পাওয়াদের অনেকেই যে চিঠি পোস্ট করেছেন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। স্বাভাবিকভাবেই বিওএর এই কমিশন গঠনের প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। এমনকি নতুন যারা যুক্ত হয়েছেন, তারাও বিষয়টি প্রথম জেনেছেন চিঠির মাধ্যমে! অর্থাৎ এই কমিটিতে থেকে কাজ করতে কেউ আগ্রহী কি না, এ বিষয়টিও জানার প্রয়োজন মনে করেনি বিওএ।
জোবেরা রহমান লিনু যেমন একটু অবাকই হয়েছেন পুরো প্রক্রিয়াটায়, ‘আমি তো অবাকই হয়েছি আসলে। যেহেতু চেয়ারম্যান ছিলাম…। আগে যারা ছিল তাদের অনেকেই তো আছে। কেন আমি নেই জানি না।’
প্রথম মেয়াদে গঠিত অ্যাথলেট কমিশনে সদস্য সংখ্যা ছিলেন ছয়জন। দ্বিতীয় মেয়াদে সদস্য সংখ্যা ৭। এদের তিনজনই অবশ্য পুরোনো কমিটিতেও ছিলেন। তারা হলেন গলফার সিদ্দিকুর রহমান, সাবেক সাঁতারু মাহফুজা খাতুন শীলা ও শুটার শাকিল আহমেদ। লিনু ছাড়াও বাদ পড়েছেন সাবেক তারকা ফুটবলার আব্দুল গাফফার ও দেশের বর্তমান দ্রুততম মানবী শিরিন আক্তার। প্রথমবারের মতো কমিটিতে ঢুকেছেন চারজন। তারা হলেন সাবেক জাতীয় অ্যাথলেট ফারহাদ জেসমিন লিটি, ভারোত্তোলক মাবিয়া আক্তার সীমান্ত, বক্সার সুর কৃষ্ণ চাকমা ও আরচার দিয়া সিদ্দিকী। জানা গেছে, পুরোনো কমিটিতে ফুটবলার আব্দুল গাফফারের জায়গায় পরে যুক্ত হয়ে কাজ করেছিলেন লিটি।
এবার প্রথমবারের মতো জায়গা পাওয়া মাবিয়া ও দিয়া চিঠির মাধ্যমেই বিষয়টি অবগত হয়েছেন বলে খবরের কাগজকে জানিয়েছেন। আগের কমিটিতে থাকা শুটার শাকিলও বিষয়টি অবগত হয়েছেন চিঠির মাধ্যমেই। বিওএ মহাসচিব স্বাক্ষরিত চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, দ্রুতই কমিশনের সদস্যদের একটি সভা আয়োজন করে কমিটির কার্যক্রম আরম্ভ করা হবে। দিয়া-মাবিয়ারা অবশ্য কমিটিতে জায়গা পেয়ে গর্বিতই। দিয়া যেমন বললেন, ‘এখানে যারা আছেন সবার চেয়ে আমি ছোট। আরচার হিসেবে সব আরচারের সঙ্গে কাজ করার সুযোগ হয়েছে। কিন্তু সব অ্যাথলেটের সঙ্গে কাজ করার সুযোগ হয়নি। সবাই মিলে যখন একসঙ্গে থাকব, অ্যাথলেটদের আসলে কী প্রয়োজন সেসব নিয়ে আলোচনা করতে পারব।’ শুটার শাকিল বলেন, ‘আমাদের কমিটির মাধ্যমে সবার যেন সহযোগিতা হয়, তারা যেন একটি কথা বলার জায়গা পায়, সেই জায়গাটি করে দেওয়ার চেষ্টা করব।’
অ্যাথলেট কমিশনের কাজটিই আসলে এটি। একজন খেলোয়াড়ের সুযোগ-সুবিধাগুলো দেখা, তাদের কী প্রয়োজন, কোথাও তারা লাঞ্ছিত হচ্ছেন কি না, ইত্যাদি ইত্যাদি। কিন্তু প্রথম কমিশন গঠনের চার বছর পেরিয়ে নতুন কমিটি এলেও এ বিষয় সম্পর্কে আসলে যথাযথ অবগত নন বেশির ভাগ খেলোয়াড়রাই। এর দায়টা কার, সেই প্রশ্নও তাই এসে যায়।
বিদায়ী কমিটির চেয়ারম্যান লিনু যেমন স্বীকার করে নিলেন, ‘আমি খুব বেশি সফল ছিলাম বলব না। কারণ আমার চার বছরের দুই বছর তো চলে গেল করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবেই। যেভাবে কাজ করা দরকার ছিল, সেভাবে আমরা করতে পারিনি। বাকি যে সময়টা ছিল, সব খেলোয়াড়ের মাঝে আমরা কমিশন সম্পর্কে জানাতে পারিনি।’
লিনু আসলে কাজ করার আরেকটু সময় পাবেন বলে ভেবেছিলেন, ‘আমি তো আসলে কম সময় পেয়েছি। আমাকে আরেকটি বছর চাইলে রাখতে পারতেন। স্পোর্টসে আমার যে অবদান, আমি মনে করি এটি আমি ডিজার্ব করি। কিন্তু তারা আমাকে রাখেননি এবং নতুন কমিটি সম্পর্কে আমাকে জানানোও হয়নি।’
লিনু অবশ্য নতুন কমিটির জন্যই শুভকামনাও জানালেন। তবে এই কমিটির কাজ করার স্বাধীনতা থাকতে হবে বলেও বিশেষভাবে উল্লেখ করলেন তিনি, ‘এই কমিটির কাজ করার স্বাধীনতা থাকতে হবে।’
নতুন অ্যাথলেট কমিশন সম্পর্কে জানতে অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব সৈয়দ শাহেদ রেজার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি প্রথমে প্রসঙ্গ জানতে চান। ‘অ্যাথলেট কমিশন’ উল্লেখ করতেই তিনি বিওএ কার্যালয়ে গিয়ে কথা বলার আহ্বান জানান। ওই মুহূর্তে তিনি মিটিংয়ে আছেন উল্লেখ করে কথা বাড়াতে চাননি।