![তারা থেকে যান আড়ালেই](uploads/2024/02/11/1707632858.Athletics.jpg)
জাকিয়া আক্তার, গোলাম সারোয়ার, শাসসুন্নাহার রত্নারা জাতীয় অ্যাথলেটিক্স চ্যাম্পিয়নশিপে খেললেন। শুধু খেলেননি, তারা নিজ নিজ ইভেন্টে দুর্দান্ত কীর্তিও গড়েছেন। বাংলাদেশ নৌবাহিনীর জাকিয়া যেমন মেয়েদের শটপুট ইভেন্টে ভেঙে দিয়েছেন ৩২ বছরে পুরোনো রেকর্ড। ছেলেদের শটপুটে একই সংস্থার সারোয়ার ৫ বছরের পুরোনো রেকর্ড ভেঙেছেন। কিন্তু তাদের নিয়ে মাতামাতি কই?
আসলে জাকিয়া-সারোয়ারের মতো থ্রো ইভেন্টের খেলোয়াড়রা বরাবরই থেকে যান আড়ালে। তারা স্পট লাইটে আসেন না কখনোই। অ্যাথলেটিক্সের যেকোনো আসরে স্প্রিন্ট ইভেন্টের খেলোয়াড়রাই সব আলো কেড়ে নেন। অথচ প্রতিবেশী ভারতে আবার এমন অবস্থা নয়। সবশেষ টোকিও অলিম্পিকে নীরজ চোপড়া জ্যাভলিন থ্রোতে স্বর্ণ জিতে পুরো বিশ্বকেই অবাক করে দিয়েছিলেন। বাংলাদেশের যেকোনো ক্রীড়াবিদের জন্যই অবশ্য অলিম্পিক পদক বহু দূরের পথ। তাদের স্বপ্ন লালিত হয় দক্ষিণ এশিয়ান গেমসকে কেন্দ্র করে। সেই দক্ষিণ এশিয়ান গেমসে জাকিয়া-সারোয়াররাও কিন্তু আলো ছড়ানোর স্বপ্ন দেখেন।
সেটা হয়তো অসম্ভবও নয়। জাকিয়া যেমন ১৩.৫২ মিটার অতিক্রম করেছেন এবারের ৪৭তম জাতীয় অ্যাথলেটিক্সে। সবশেষ ২০১৯ এস এ গেমসে ভারতের কাচনার চৌধুরী ১৩.৬৬ মিটার দূরত্ব অতিক্রম করে ব্রোঞ্জ জিতেছিলেন। সেই স্কোরকে মানদণ্ড ধরে জাকিয়া যেমন এখনই বেশ আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠেছেন। কিন্তু গতকাল শনিবার বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে বসে আক্ষেপেই ঝরল তার কণ্ঠে, ‘মানুষ তো শুধু ১০০ মিটার স্প্রিন্টের দিকেই ফোকাস করে। আমাদের ইভেন্টে তো তারা ফোকাস করে না। চাই যে মানুষ আমাদের নিয়েও জানুক। আমাদের নিয়েও যদি ভাবা হয়, তাহলে আমরাও আন্তর্জাতিক আসরে সাফল্য এনে দিতে পারব।’
সরোয়ারেরও একই বিশ্বাস, ‘ভালো কোচের তত্ত্বাবধানে যদি আমাদের অনুশীলন করানো হয়, আমরাও যদি ভালো সুযোগ-সুবিধা পাই, তাহলে ইনশাআল্লাহ সাফের মতো আসরে অনেক ভালো কিছু হবে।’ সুযোগ-সুবিধার অপ্রতুলতার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘আমাদের বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে অনুশীলনের জন্য সুযোগ-সুবিধার অভাব। বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়াম ও আর্মি স্টেডিয়াম ছাড়া শটপুটের জন্য নির্দিষ্ট জায়গা নেই। আমরা রাস্তায় দাঁড়িয়ে থ্রো করে অনুশীলন করি।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের যদি বিদেশে বিভিন্ন ট্যুরে নিয়ে যাওয়া হয়, তাহলে আমরা অনুপ্রাণিত হবো বেশি। বছরের পর বছর অনুশীলন করে আমরা স্বর্ণ পেলাম, কিন্তু এরপর আর আমাদের কেউ খোঁজই রাখে না।’
২০০ ও ৪০০ মিটারে স্বর্ণজয়ী অ্যাথলেট জহির রায়হানও মনে করেন স্প্রিন্ট ছাড়াও অ্যাথলেটিক্সের অন্য ইভেন্টগুলো নিয়ে ভাবা উচিত কর্তৃপক্ষের। অথচ সাম্প্রতিক সময়ে ১০০ মিটার স্প্রিন্ট নিয়েই যেন সব ভাবনা ফেডারেশনের। আরও নির্দিষ্ট করে বললে, লন্ডনপ্রবাসী অ্যাথলেট ইমরানুর রহমানকে নিয়ে পড়ে আছে তারা। জহির বলেন, ‘আমাদের দেশে অনেক কিছুই ভুল ধারণা রয়েছে। সবাই ১০০ মিটারের দিকে ফোকাস করে। আসলে ব্যাপারটা এমন হওয়া উচিত না। আপনি পাশের দেশ ভারতকে দেখুন, জ্যাভলিনে তারা স্বর্ণ জিতেছে। তারা কিন্তু ১০০ মিটারে ফোকাস করেনি। এ ছাড়াও ৪০০ মিটার রিলেতে ওরা এশিয়ান চ্যাম্পিয়ন ও এশিয়ান রেকর্ড হোল্ডার। ওরা কিন্তু শুধু ১০০ মিটার নিয়ে পড়ে নেই। যে ইভেন্টগুলো ভালো করছে, ওই দিকে তারা ভালোভাবে ফোকাস দিচ্ছে। সবাইকে নিয়ে কাজ করছে। আমাদের দেশে যে অ্যাথলেটরা ভালো করছে, এদের নিয়েও যদি কাজ করা হয়, আমরাও ভালো কিছু করতে পারব বলে আশাবাদী।’
দেশের সাবেক দ্রুততম মানব ও অভিজ্ঞ কোচ আব্দুল্লাহ হেল কাফী এ বিষয়ে বলেন, ‘আসলে আমাদের অন্য ইভেন্টগুলো সে রকম মানসম্পন্ন ছিল না আগে। তবে এখন কিছু কিছু ইভেন্ট বেশ আগাচ্ছে। যেমন আমাদের মেয়েদের হাই জাম্প অনেক ভালো করছে। অনেক দিক পর এবার একটা মেয়ে শটপুটে ভালো করেছে। এখন যেহেতু অন্য ইভেন্টগুলোতেও ছেলেমেয়েরা ভালো করছে, তাই তাদেরও আন্তর্জাতিক আসরগুলোতে অংশ নেওয়ার সুযোগ করে দেওয়া উচিত। এটা হলে তারা নিজেরাও অনুপ্রাণিত হবে।’
কাফী আরও একটা বিষয় বিশেষ করে বলেন, ‘মানুষের মধ্যে এর রকম একটা ধারণা আসছে যে ১০০ বা ২০০ মিটার না করলে বাইরে যাওয়া যাবে না। যদি এর বাইরের ডিসিপ্লিনগুলোর খেলোয়াড়দের সুযোগ দেওয়া হয়, তাহলে ওরাও অনুপ্রাণিত হবে। আরও বেশি খেলোয়াড় উঠে আসবে খেলাগুলোতে।’