দীর্ঘ দেড় বছরের অপেক্ষার অবসান। ফের বাংলাদেশের লাল-সবুজ জার্সি পড়ার অপেক্ষায় নাঈম শেখ। দুর্দান্ত ঢাকার হয়ে বিপিএলে রান পাওয়ায় হয়েছে ভাগ্য বদল। ১২ ম্যাচে ২৫.৮৩ গড় ও ১১৯.৬৯ স্ট্রাইক রেটে করেছেন ৩১০ রান। পরিসংখ্যান দেখে যে কেউ বলবেন টি-টোয়েন্টি বিবেচনায় এই গড় দারুণ। বাংলাদেশের ব্যাটারদের পারফরম্যান্স বিবেচনায় নিলে স্ট্রাইক রেটও অনেকটা টি-টোয়েন্টিসুলভ। তবে পুরো টুর্নামেন্টে নাঈম শেখ খেলেননি একই ছন্দে। এবারের আসরে খেলা ১২ ম্যাচের ৬টিতেই তার স্ট্রাইক রেট ছিল এক শর নিচে। এটাই শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজে বাংলাদেশ শিবিরে যুক্ত করতে পারে বাড়তি চিন্তা। পাশাপাশি তার ডট বল খেলার প্রবণতা তো আছেই।
দুই হাফ সেঞ্চুরিতে ৩১০ রান করা নাঈমের শুরুটা ছিল দারুণ। কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের বিপক্ষে ৪০ বলে খেলেন ৫২ রানের ইনিংস। পরের দুই ম্যাচে অবশ্য ছিলেন নিজের ছায়া হয়ে। চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স ও রংপুর রাইডার্সের বিপক্ষে বের হতে পারেননি খোলস ছেড়ে। স্ট্রাইক রেট ছিল এক শর অনেক নিচে। পুরো বিপিএলে ভুগেছেন ধারাবাহিকতার অভাবে। দুর্দান্ত ঢাকার ৬ষ্ঠ, ৭ম ও ৮ম ম্যাচে নিজের ইনিংস খানিকটা বড় করতে পেরেছিলেন। টানা তিন ম্যাচ ভালো খেলা নাঈম ছন্দহীন ছিলেন পরের তিন ম্যাচে। দুর্দান্ত ঢাকার ৯ম, ১০ম ও ১১তম ম্যাচে তার ব্যাটে আসে সাকুল্যে ২৫ রান। অথচ এর আগের তিন ম্যাচে তার রান ছিল ১৬৪।
টুর্নামেন্টজুড়ে রান তোলাতে অধারাবাহিক নাঈম খেলেছেন প্রচুর ডট বল। ২৫৯ বলে ৩১০ রান করার পথে ডট খেলেন ৪৩.২ শতাংশ বল। টি-টোয়েন্টিতে ওপেনারদের চাওয়া থাকে দলকে বিধ্বংসী সূচনা এনে দেওয়া। সেই বিধ্বংসী ইনিংসের শুরুটা হয় পাওয়ার প্লেতে। বিপিএলে নাঈম এই পাওয়ার প্লেতেই খেলেছেন কচ্ছপগতিতে। এই সময় তার খেলা ১৪৮ বলের মধ্যে ৪৯.৩০ শতাংশ বল ছিল ডট। ইনিংসের ১ম থেকে ৬ষ্ঠ ওভারের মধ্যে প্রথম ওভারে সবচেয়ে বেশি ডট খেলেন। টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারজুড়ে অবশ্য প্রথম ওভারে বেশ সংগ্রাম করতে হয়েছে নাঈমকে। পুরো ক্যারিয়ারে প্রথম ওভারে যতগুলো বল মোকাবিলা করেছেন তার মধ্যে ৬৫.৪ শতাংশ বল থেকে কোনো রান নিতে পারেননি। বিপিএলেও ছিল সেই ধারাবাহিকতা। প্রথম ওভারের ৬৩.৬ শতাংশ বল খেলেন ডট।
ইনিংস যত এগোয় নাঈমের ব্যাটিং তত সাবলীল হতে থাকে। কমতে থাকে ডটের পরিমাণ। সেই ধারা ছিল বিপিএলেও। পাওয়ার প্লেতে চতুর্থ ওভারে সবচেয়ে কম ডট খেলেছেন। চতুর্থ ওভারে খেলেন ৩৮.৫ শতাংশ ডট। পুরো টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারে পাওয়ার প্লের পঞ্চম ওভারে সবচেয়ে কম ডট খেলেছেন নাঈম। এই ওভারে তার ডটের পরিমাণ ৪৪.৩ শতাংশ।
পাওয়ার প্লের পর নাঈমের ডট খেলার পরিমাণ ৩৭.১ শতাংশ। বিপিএলেও একই সময়ে তুলনামূলক কম ডট খেলছেন। পাওয়ার প্লের পর খেলা ১১১ বলের মধ্যে ৩৫.১ শতাংশ ছিল ডট। তার ডটের এই পরিসংখ্যান সাক্ষ্য দেয় ওয়ানডের মতো ধীরেসুস্থে উইকেটে থিতু হয়ে বড় ইনিংস খেলতে চান। পাওয়ার প্লের পর ডট কম খেললেও সেই গতিতে রান তুলতে পারেননি। এই সময় ১১৮ স্ট্রাইক রেটে করেন ১৩১ রান। এটা অবশ্য তার পুরোনো সমস্যা। টি-টোয়েন্টিতে পাওয়ার প্লের পর তার স্ট্রাইক রেট ১১৬.৭। টি-টোয়েন্টিতে পাওয়ার প্লেতে ১১৫.৮ স্ট্রাইক রেটে ব্যাটিং করেন নাঈম। এবারের বিপিএলে পাওয়ার প্লেতে তার ব্যাট চলেছে ১২০.৯ স্ট্রাইক রেটে।
আরেকটা ছোট্ট পরিসংখ্যান উল্লেখ করা যাক। নাঈম পাওয়ার প্লেতে সবচেয়ে বেশি বাউন্ডারি কিংবা ওভার বাউন্ডারি হাঁকিয়েছেন এবারের বিপিএলে। পুরো টুর্নামেন্টে ২৭ চার ও ১৪ ছক্কা হাঁকানো নাঈম পাওয়ার প্লেতে হাঁকান ১৮ চার ও ৯ ছক্কা। সেখানে পাওয়ার প্লের পর তার ছক্কা ও চারের সংখ্যা যথাক্রমে ৫ ও ৯। এটাকে অবশ্য বাড়তি কোনো যোগ্যতা হিসেবে নেওয়ার সুযোগ নেই। কারণ পাওয়ার প্লেতে ৩০ গজ বৃত্তের বাইরে থাকে মাত্র দুজন ফিল্ডার। ওপেনার হিসেবে সেই সুযোগ নিয়ে পাওয়ার প্লেতে বেশি বাউন্ডারি কিংবা ওভার বাউন্ডারি হাঁকাবেন সেটা স্বাভাবিক ঘটনা। বরং এই সময়ে নাঈমের বাড়তি ডট বল দলের ওপর যোগ করে বাড়তি চাপ।
এখন প্রশ্ন উঠতে পারে নাঈমের এমন ব্যাটিং বাংলাদেশ দলের জন্য কতটা সুফল বয়ে আনবে? প্রশ্ন ওঠাটা স্বাভাবিক। কারণ বিপিএলে নাঈমের খেলা অর্ধেক ম্যাচে স্ট্রাইক রেট ছিল এক শর নিচে। এমন কী অর্ধেক ম্যাচে তার ব্যাটে আসেনি রান। এ ছাড়া সহজাতভাবে দলকে এনে দিতে পারেন না উড়ন্ত সূচনা। এমন কী টি-টোয়েন্টি বিবেচনায় ডট বল কম খেলেও ইনিংস বড় করার সামর্থ্য নেই নাঈমের। অন্তত পরিসংখ্যান তো সেটাই বলছে।