![‘সামথিং ইজ রং’](uploads/2024/02/24/1708754975.Naim-Sheikh.jpg)
মোহাম্মদ নাঈম শেখের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার মাত্র ৩ বছর পেরিয়েছে। এর মধ্যেই ক্রিকেট জীবনের অনেক রং দেখে ফেলেছেন তিনি। জাতীয় দলে আছেন আসা-যাওয়ার মিছিলে। আবার ডাক পেয়েছেন শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজে। টি-টোয়েন্টিতে তার স্ট্রাইকরেট নিয়ে অনেক সমালোচনা হয়। খবরের কাগজেও ‘নাঈমের সর্বনাশা ডট বল’ শিরোনামে প্রতিবেদনও প্রকাশ হয়েছে। এ নিয়ে নাঈম খবরের কাগজের সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে তার ব্যাখ্যাও দিয়েছেন। সমালোচনাকারীদের বলেছেন, ‘সামথিং ইজ রং’। পাশাপাশি তিনি নিজেকে এখন অনেক পরিণত ক্রিকেটারও মনে করছেন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন তোফায়েল আহমেদ।
প্রশ্ন: দুর্দান্ত ঢাকার হয়ে বিপিএল শেষ করলেন। ১২ ম্যাচে দুই ফিফটিতে ৩১০ রান। নিজেকে নিয়ে কতটা খুশি?
নাঈম: একজন ক্রিকেটার হিসেবে যত বেশি রান করতে পারব, তত বেশি ভালো লাগবে। প্রত্যাশা অনুযায়ী হয়তো আরও অনেক বেশি ভালো করার স্পেসিফিক জায়গা ছিল। ৪০ রানের ঘরে গিয়ে মনে হয় দুই-তিনটা আউট হয়েছি। এই ইনিংসগুলো যদি একটু লম্বা করতে পারতাম, হয়তো ভালো কিছু ফিগার পাওয়া যেত। ব্যক্তিগত জায়গা শুধু নয়, দলের জন্যও অনেক ভালো হতো। এমনিতে আলহামদুলিল্লাহ খুশি আমি। চেষ্টা থাকবে পরবর্তী সময়ে আন্তর্জাতিক, ফ্র্যাঞ্চাইজি বা ঘরোয়া যে প্রতিযোগিতাই হোক, ইনিংসগুলো যেন লম্বা করতে পারি।
প্রশ্ন: একটা সময় পর্যন্ত আপনি সর্বোচ্চ রান সংগ্রহের তালিকায় শীর্ষে ছিলেন। আপনাদের দলের আরও কয়েকজন ব্যক্তিগত সাফল্যে উজ্জ্বল। কিন্তু দল মোটেও ভালো করতে পারেনি। নিশ্চয়ই খারাপ লাগছে?
নাঈম: হ্যাঁ, আমাদের দলে ব্যক্তিগত অর্জন আছে। যেসব দল ভালো করছে, দেখবেন তাদের বেশির ভাগ ক্রিকেটারই এভারেজ পারফরম্যান্স করছে। আমার ব্যক্তিগত মত যেটা, দল হিসেবে খেলতে পারলে হয়তো অনেক ভালো কিছু করতে পারতেন। আমাদের এরকম হয়েছে, বেশির ভাগেরই বাজে সময় গেছে। হয়তো সবার একসঙ্গে হয়েছে জিনিসটা। এটা না হলে দলীয় ফল ভিন্ন হতে পারত। সুপার ফোরে খেলতে না পারলে তো আপনি ভালো দল না। টিমমেট হিসেবে সবার জন্যই খারাপ লাগা কাজ করে। টিমের জন্য একটা ফিলিংস আছে যে জিততে পারিনি। ভালো কিছু ফিডব্যাক দিতে পারিনি। ওই আক্ষেপ বা খারাপ লাগা তো অবশ্যই আছে।
প্রশ্ন: ঘরোয়া ক্রিকেটে এমনিতে আপনার বেশ ভালো সময়ই যাচ্ছে। টি-টোয়েন্টি দলেও কামব্যক করলেন। নিজের সময়টা কীভাবে মূল্যায়ন করবেন?
নাঈম: যেকোনো ক্রিকেটার, বিশেষ করে ওপেনার যারা, তাদের জন্য ক্যাশইনের টাইমে যত বেশি ক্যাশইন করা যায়, ততই ভালো। যেকোনো ক্রিকেটারকে এটা জিজ্ঞেস করে দেখতে পারেন। অবশ্যই আবারও সুযোগ পেয়েছি আমি। ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ শেষ করার পর ওয়ানডেতে সুযোগ পেয়েছিলাম। কিন্তু সেভাবে ক্লিক করতে পারিনি। এখন যেহেতু আবারও টি-টোয়েন্টিতে সুযোগ এসেছে, ইন্শাআল্লাহ চেষ্টা থাকবে সুযোগগুলো যেন আর আগের মতো মিস না হয়। যেন ক্লিক করতে পারি।
প্রশ্ন: সেরা সময়ে ক্রিকেটাররা যা চায়, তেমনই হয়। এরকম একটা কথা তো আছে। বর্তমান সময়টা কাজে লাগাতে আপনি কতটা আত্মবিশ্বাসী?
নাঈম: ক্রিকেটার যখন যেমন চায়, ওরকমই হয়, বিষয়টা এমন না। ফর্মে যখন থাকে, তখন অবশ্যই অনেক কিছুতে লাক ফেভার করে। অনেক কিছুই পক্ষে থাকে। যখন থাকে তখন ওই জিনিসটা ক্যাশইন করতে হয়। আমার চেষ্টা থাকবে সামনের খেলাতে যেন আমি শতভাগ দিতে পারি।
প্রশ্ন: ২০২১ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ দলে অন্যতম সেরা ওপেনার হিসেবে গিয়েছিলেন। পরবর্তী সময়ে বাদ পড়ে যান। সেই সময়ের নাঈম আর এখনকার নাঈমের মধ্যে পার্থক্য বলবেন?
নাঈম: অবশ্যই, এখানে একটা অভিজ্ঞতার ব্যাপার আছে। লম্বা একটা সময়, জাতীয় দলের ভেতর এবং বাইরে আমি ভালো অভিজ্ঞতা অর্জন করেছি। ২০১৯ সালে আমার অভিষেক হয়েছে। এখন ২০২৪। আমি এখন ম্যাচিউরড ক্রিকেটার। ২০২১ সালের কথা যদি ধরি, কোন উইকেটে কীভাবে খেলা উচিত, কোন পরিস্থিতিতে কীভাবে খেলা বা ব্যাট করা উচিত, এই জায়গাগুলোতে অভিজ্ঞতা কম ছিল। এখন এই জায়গাগুলোতে আমি অনেক ভালো, পরিণত। এখন যদি প্রোপার ও ঠিক জায়গায় ক্লিক করতে পারি, এটাই আমার সবচেয়ে বড় অর্জন হবে।
প্রশ্ন: ঢাকা লিগে ভালো করার পরও বিশ্বকাপ খেলা হয়নি। এই নিয়ে আক্ষেপ আছে?
নাঈম: দেখেন, অনেক ক্ষেত্রে ভাগ্যও একটা বড় বিষয়। হয়তো ওই সময়টার জন্য আমি আনলাকি ছিলাম। আমার থেকে যে বেটার ছিল, সে সুযোগ পেয়েছে। তবে আমার নিজের কোনো আক্ষেপ নেই। একজন ক্রিকেটার হিসেবে আপনার যেমন সুযোগ আসবে, আবার সুযোগ মিসও করবেন। আপনি যদি ভালো ক্রিকেটার হন, অবশ্যই সেই জায়গায় আপনি আবার যেতে পারবেন। প্রমাণ করার সুযোগ আছে। তাই চিন্তিত হওয়ার কিছু নেই।
প্রশ্ন: জাতীয় দলে যখন নিয়মিত ছিলেন, তখন আপনার স্ট্রাইক রেট নিয়ে খুব কথা হতো। আর এবারের বিপিএলের স্ট্রাইক রেট নিয়েই বা আপনি কতটা খুশি?
নাঈম: এবার দেখেন বেশির ভাগ উইকেটই ভালো ছিল। হয়তো দুই-তিনটি ম্যাচে ১৩০ বা এর আশেপাশে রান হয়েছে। এ কারণে আমি পরিস্থিতি অনুযায়ী চেষ্টা করেছি যত বেশি স্ট্রাইকরেট রেখে খেলা যায়। যখন আমার স্ট্রাইক রেট নিয়ে কথা হয়েছে, তখন বাংলাদেশের অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, পাকিস্তান ও আফগানিস্তান সিরিজ ছিল। এই চারটা সিরিজে আমি ম্যাচ খেলেছি কমপক্ষে ১৫-১৬টার মতো। ওই সময় বাংলাদেশ দল কত রান করেছে, সিরিজগুলোতে আসলে কেমন রান হয়েছে, এটাও কিন্তু বিষয়! ওই ১৫টি ম্যাচ বাদে আমার স্ট্রাইকরেটটা দেখলেও হয়তো বোঝা যাবে। এমনকি সাকিব ভাইও বলেছেন, এই দুই-তিন সিরিজ দেখে যদি কোনো খেলোয়াড়কে বিচার করা হয়, তাহলে এর থেকে বোকামি আর কোনো কিছু হতে পারে না। সাকিব ভাই, তামিম ভাইদের থেকে মনে হয় না ভালো ক্রিকেট কেউ বোঝে। এটা নিয়ে আমার তেমন কিছু বলার নেই। আপনি প্রশ্ন করলেন বলে আমি আমার ফিডব্যাকটা দিলাম। ওই সময়টায় তো শুধু নাঈম শেখ একা খেলেনি। বিশ্বের অনেক বড় খেলোয়াড়রা খেলেছেন। ওভারঅল সবারটা যাচাই করার পর যদি দেখেন, তখন হয়তো বলতে পারেন। কিন্তু সবারটা দেখার পর শুধু নির্দিষ্ট একটি খেলোয়াড়ের নাম বারবার মেনশন করা হলে তখন বলতেই হবে, ‘সামথিং ইজ রং’।
প্রশ্ন: এখন পর্যন্ত যে আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার আপনার, এতে নিজেকে নিয়ে কতটা খুশি?
নাঈম: সত্যি বলতে, এভাবে কখনো চিন্তা করিনি। একজন ক্রিকেটার হিসেবে প্রত্যাশা তো অনেক বেশি। অনেক ভালো কিছু করার সুযোগ হয়তো ছিল। কিন্তু অভিজ্ঞতার অভাবে সেটা করতে পারিনি। এই জায়গায় হয়তো পিছিয়ে ছিলাম। এখন প্রত্যাশাটা অনেক বেশি। আগে যেটা ছিল না। আগে হচ্ছে সার্ভাইভ কীভাবে করব, সেটা চিন্তা করতাম। এখন নিজের কাছে প্রত্যাশা অনেক যে, দেশের জন্য ভালো করতে হবে। তবে খুশি না, এমন বলব না। আবার খুশি, এটাও বলব না। এখন যে সুযোগ এসেছে, এটা নিয়েই চিন্তা করছি। সামনে খেলা। এটা নিয়েই ভাবনা। অতীত নিয়ে ভাবছি না।
প্রশ্ন: টি-টোয়েন্টিতে ভালো করে নিশ্চয়ই ওয়ানডে দলেও ফের জায়গা ফিরে পেতে চাইবেন?
নাঈম: এমনভাবে সত্যিই আমি ভাবছি না। এখন আমার কাছে একটা সিরিজ আছে। সেই সিরিজে শতভাগ দেওয়াই হবে আমার চেষ্টা। এটিই মাথায় আছে। এই সিরিজটিতে ফোকাস করছি। যত ভালোমতো এটি শেষ করা যায়।