![রাঙামাটিতে জাতীয় পার্টির ভোট বর্জনের ডাক](uploads/2023/12/18/1702918497.Ranggamati.jpg)
‘ব্যক্তিগত ও পারিবারিক কারণ’ দেখিয়ে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেছেন রাঙামাটি ২৯৯ আসনের জাতীয় পার্টির প্রার্থী হারুনুর রশিদ ওরফে হারুন মাতব্বর। কিন্তু দলীয় ফোরামে আলোচনা না করেই প্রতীক বরাদ্দের আগের দিন তার এমন কাণ্ডে ক্ষুব্ধ দলটির নেতা-কর্মীরা। এর জেরে রীতিমত সংবাদ সম্মেলন করে হারুনুর রশিদকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়েছে। একই সঙ্গে আগামী ১৫ দিনের মধ্যে জেলা জাপা সভাপতি পদ থেকে তাকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করারও দাবি জানিয়েছেন। নেতা-কর্মীরা ঘোষণা দিয়েছেন, আগামী ৭ জানুযারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রাঙামাটি জাতীয় পার্টির নেতা-কর্মীরা ভোট বর্জন করবেন এবং ভোট কেন্দ্রে তারা কেউ যাবেন না।
সোমবার (১৮ ডিসেম্বর) দুপুরে রাঙামাটি শহরের বনরূপাস্থ জাতীয় পার্টির অস্থায়ী কার্যালয়ে দলটির সিনিয়র সহসভাপতি আরফান আলীর সভাপতিত্বে এই সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
হারুনুর রশিদ মাতব্বর রবিবার বিকেল ৪টায় রাঙামাটি জেলা প্রশাসক ও রিটার্নিং কর্মকর্তা মোশারফ হোসেন খানের কাছে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের আবেদন জমা দেন। এ সময় জাতীয় পার্টির রাঙামাটি জেলা সাধারণ সম্পাদক প্রজেশ চাকমা উপস্থিত ছিলেন। নিজের এমন সিদ্ধান্তের কারণ জানিয়ে হারুনুর রশিদ সাংবাদিকদের বলেন, নির্বাচনে সময় দিতে না পারা এবং নিজের ব্যক্তিগত কারণে তিনি মনোনয়ন প্রত্যাহার করেছেন।
জেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি হারুনুর রশিদ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদের সদস্য মুছা মাতব্বরের সহোদর। ফলে দলীয় মনোনয়ন পেলেও নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা নিয়ে সংশয়ে ছিলেন নেতা-কর্মীরা। এর মধ্যেই প্রার্থিতা প্রত্যাহারের ঘোষণায় আগুনে ঘি ঢাললেন হারুন মাতব্বর।
সংবাদ সম্মেলনে ক্ষুব্ধ নেতা-কর্মীরা বলেন, জাতীয় পার্টি থেকে মনোনয়ন নিয়ে প্রার্থী হয়েছেন হারুনুর রশিদ মাতব্বর। কিন্তু জেলার জাতীয় পার্টিসহ অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের কোনো নেতা-কর্মীর সঙ্গে আলাপ আলোচনা না করে হুট করে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেছেন। প্রার্থী হওয়ার সময় দলের সবাইকে নিয়ে মনোনয়নপত্র জমা দেন। কিন্তু প্রার্থিতা প্রত্যাহার করার সময় দলের কেউ জানেন না। হারুন মাতব্বর তার প্রত্যাহার কাগজে লিখেছেন ব্যক্তিগত ও পারিবারিক কারণ। কিন্তু দলীয় সিদ্ধান্তে মনোনয়ন পেয়ে ব্যক্তিগতভাবে কী করে প্রত্যাহার করেন?
নেতা-কর্মীরা দাবি করেন, হারুন মাতব্বর ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে বিক্রি হয়েছেন। এবার ২০২৪ সালের নির্বাচনেও বিক্রি হলেন। তাই এই লোক দিয়ে জাতীয় পার্টি হবে না। রাঙামাটির জাতীয় পার্টির অঙ্গসহযোগী সংগঠনের সব নেতা-কর্মী হারুন মাতব্বরকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করলাম। আগামী ১৫ দিনের মধ্যে জেলা জাপা সভাপতি পদ থেকে হারুনুর রশিদ মাতব্বকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করার দাবি জানান। আগামী ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রাঙামাটি জাতীয় পার্টির নেতা-কর্মীরা ভোট বর্জন করবেন এবং ভোট কেন্দ্রে তারা কেউ ভোট দিতে যাবেন না বলেও ঘোষণা দেন।
সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন জাপার সিনিয়র সহসভাপতি আরফান আলী, সিনিয়র সহসভাপতি জ্যোতি বিকাশ চাকমা, সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম মিন্টু, সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক চন্দন বড়ুয়া (তরুণ পার্টির জেলা সভাপতি), সাংগঠনিক সম্পাদক সাইফুল ইসলাম, সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা মাসুদ রানা, জেলা যুবসংহতি পার্টির সভাপতি সুকুমার চন্দ্র রায়, যুবসংহতি সহসাধারণ সম্পাদক ফিরোজ তালুকদার, মহিলা পার্টির সিনিয়র সহসভাপতি স্বপ্না ত্রিপুরা, যুগ্ম সাংগঠনিক সম্পাদক আকাশ আহম্মদ নোমান ও প্রচার সম্পাদক লোকমান হোসেনসহ আরও অনেকে।
রাঙামাটি জেলার দশ উপজেলা ও দুই পৌরসভা নিয়ে গঠিত জাতীয় সংসদের ২৯৯ নম্বর এ আসনটি। মোট ভোটার ৪ লাখ ৭৯ হাজার ৩১৭ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ২ লাখ ৫০ হাজার ৯৪৪ জন এবং নারী ভোটার ২ লাখ ২৮ হাজার ৩৭৩ জন। এবার দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন জমা দেন ৫ জন। এর মধ্যে এর আগে গত ১৫ ডিসেম্বর দলীয় সিদ্ধান্তে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের আবেদন করেন স্বতন্ত্র প্রার্থী জনসংহতি সমিতির দ্বিতীয় শীর্ষ নেতা ও সাবেক এমপি ঊষাতন তালুকদার। ফলে নির্বাচনী মাঠে এখনো পরস্পরের প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে আছেন বর্তমান সংসদ সদস্য আওয়ামী লীগের প্রার্থী দীপংকর তালুকদার, সাংস্কৃতি ঐক্য জোটের প্রার্থী আওয়ামী লীগ নেতা অমর কুমার দে এবং তৃণমূল বিএনপির মিজানুর রহমান।
রাঙামাটি জেলা প্রশাসক মোশারফ হোসেন খান বলেন, রাঙামাটি আসনে সর্বমোট ৫ জন মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন। এর মধ্যে থেকে ২ জন প্রত্যাহার করেছেন। তিনজন প্রার্থী নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন।