‘ছেলের ভর্তির টাকার জন্য আমরা দুশ্চিন্তায় ছিলাম। সেই টাকা ব্যবস্থা করে দিলেন। এ উপকারের কথা বলে শেষ করা যাবে না। এই টাকা আমাদের কাছে ৫ লাখ টাকার সমান।’
আবেগে আপ্লুত হয়ে কথাগুলো বলছিলেন দিনমজুরি করে এসএসসিতে এ প্লাস পাওয়া শিক্ষার্থী মিনারজিমের মা হালিমা বেগম।
বৃহস্পতিবার (৪ জুলাই) সকালে ফুলবাড়ী প্রেস ক্লাবের সভাকক্ষে মিনারজিম ও তার বাবা-মায়ের হাতে বৃত্তির টাকা তুলে দেওয়া হলে কথাগুলো বলেন তিনি। এ সময় চোখে পানি আসে তার।
তিনি আরও বলেন, ‘আমি আমার ছেলেকে মানুষের মতো মানুষ করতে চাই। আপনারা দোয়া করবেন। সহযোগিতা করবেন।’
কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার বড়ভিটা ইউনিয়নের পূর্বধনিরাম গ্রামের প্রতিবন্ধী মনিরুজ্জামান ও হালিমা বেগমের ছেলে অদম্য মেধাবী মিনারজিম বড়ভিটা বহুমুখী উচ্চবিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষা দিয়ে এ প্লাস পেয়েছে এবার।
প্রতিবন্ধী বাবা কাজ করতে না পারায় দিনমজুরি করতেন মিনারজিম। পাশাপাশি শিক্ষকদের সহযোগিতায় পড়ালেখা চালিয়ে যায়। তাকে নিয়ে সংবাদ প্রকাশ করে দৈনিক খবরের কাগজ।
এরপর দৈনিক খবরের কাগজের পাঠক সংগঠন বন্ধুজন ও সিডব্লিওএফের পক্ষ থেকে বৃহস্পতিবার তাকে ৫ হাজার টাকা শিক্ষাবৃত্তি দেওয়া হয়।
এ সময় দৈনিক খবরের কাগজের কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি গোলাম মওলা সিরাজ, ফুলবাড়ী প্রেস ক্লাব সভাপতি এমদাদুল হক মিলন, সাধারণ সম্পাদক খলিলুর রহমান, সিনিয়র সাংবাদিক দৈনিক সমকালের প্রতিনিধি শাহিনুর রহমান শাহীন, ইত্তেফাকের প্রতিনিধি অনীল চন্দ্র রায়, মানবজমিনের প্রতিনিধি বেলাল হোসেন, ফুলবাড়ী মডেল প্রেস ক্লাবের সভাপতি ইউনুছ আলী আনন্দ, সাংবাদিক এ এইচ এম বাবুল, মোস্তাফিজুর রহমান, জাহাঙ্গীর আলমসহ অন্য সংবাদকর্মী, সুধীজন ছাড়াও অদম্য মেধাবী মিনারজিমের বাবা মনিরুজ্জামান, মা হালিমা বেগম উপস্থিত ছিলেন।
খবরের কাগজের প্রতিনিধি গোলাম মওলা সিরাজ বলেন, ‘দৈনিক খবরের কাগজ বস্তুনিষ্ঠ সংবাদের পাশাপাশি দায়বদ্ধতা থেকে সামাজিক কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে। অল্প সময়ে পাঠকের মন জয় করা দৈনিকটি সিডব্লিওএফের সহযোগিতায় এবারে সারা দেশের বেশ কিছু অদম্য মেধাবীকে এককালীন বৃত্তি দিয়েছে। তারই ধারাবাহিকতায় আমরা মিনারজিমের হাতেও দৈনিক খবরের কাগজের পাঠক সংগঠন বন্ধুজন ও সিডব্লিওএফের পক্ষ থেকে ৫ হাজার টাকা তুলে দিতে পারলাম। আশা করি খবরের কাগজ এ ধারাবাহিকতা বজায় রাখবে।’
টাকা পেয়ে মিনারজিম বলেন, ‘আমার পড়ালেখার পেছনে আমার মাকে অনেক কষ্ট করতে হচ্ছে। আপনাদের সহযোগিতা আমাকে আরও উৎসাহ দেবে। আরও ভালো ফল করতে উৎসাহ দেবে প্রেরণা জোগাবে।’
পড়ালেখা করে প্রকৌশলী হওয়ার ইচ্ছা প্রকাশের পাশাপাশি দৈনিক খবরের কাগজের কর্তৃপক্ষের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানায় মিনারজিম।
ফুলবাড়ী প্রেস ক্লাবের সভাপতি এমদাদুল হক মিলন বলেন, দৈনিক খবরের কাগজের এ মহান উদ্যোগে আমাদের এলাকার মেধাবী মিনাজিমকে রাখার জন্য আমরা ধন্যবাদ জানাই। ভবিষ্যতেও এ উদ্যোগ রাখে আমরা সে প্রত্যাশা করি।
সাধারণ সম্পাদক খলিলুর রহমান বলেন, মিনারজিম আমাদের এলাকার ছেলে। তার সংসারের কথা বা পড়ালেখার পেছনে কষ্টের কথা জানি। বিষয়টি যে খবরের কাগজও বুঝতে পেরেছে, এজন্য পত্রিকার প্রতিনিধিসহ কর্তৃপক্ষের প্রতি আমাদের অশেষ কৃতজ্ঞতা থাকবে।
মা হালিমা জানান, একমাত্র ছেলে মিনারজিমকে ইসলামী শিক্ষার ইচ্ছে ছিল তাদের। ছোটবেলা থেকে কোরআন শিক্ষা দেয়। পাশাপাশি পাঠ্যশিক্ষাও চালিয়ে যায়। ২০২১ সালে ফুলবাড়ী ফায়ার সার্ভিস তালিমুল কোরআন মডেল বালক ও বালিকা মাদরাসা থেকে কোরআনে হাফেজ হয়। পরে বড়ভিটা বহুমুখী উচ্চবিদ্যালয় থেকে বিজ্ঞান বিভাগে এসএসসি পরীক্ষা দেয় সে।
কিন্তু পড়ালেখাটা সহজ ছিল না মিনারজিমের। দিনমজুরি করে পড়তে হয় তাকে। অন্যের বাড়িতে কাজ করে খাদ্যের সন্ধান করেন মা। আত্মীয়-স্বজন, বিদ্যালয়ের প্রধানসহ শিক্ষকদের সহযোগিতায় মোট ১১৫৩ নম্বর পায় মিনারজিম।
গোলাম মওলা/সাদিয়া নাহার/অমিয়/