![ধর্ষণকাণ্ডে জাবিতে মানববন্ধন, প্রভোস্ট ও প্রক্টরের পদত্যাগ দাবি](uploads/2024/02/06/1707232329.JU.jpg)
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) স্বামীকে আটকে রেখে স্ত্রীকে ধর্ষণের ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভোস্ট ও প্রক্টরের পদত্যাগের দাবি তুলেছেন নিপীড়নবিরোধী মঞ্চের ব্যানারে আন্দোলনরত শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। এ ছাড়াও অপরাধীদের শাস্তি দ্রুত কার্যকর করা, অছাত্রদের হল থেকে বের করা এবং শিক্ষক জনিকে বহিষ্কারের দাবি জানিয়েছেন তারা।
মঙ্গলবার (৬ ফেব্রুয়ারি) দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহিদ মিনারসংলগ্ন সড়কে অনুষ্ঠিত মানববন্ধন থেকে এ দাবি জানানো হয়। মানববন্ধনে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শতাধিক শিক্ষক-শিক্ষার্থী অংশ নেন। এদিকে ধর্ষণের ঘটনায় দেশের বিশিষ্ট ১৮ নাগরিক ক্ষোভ ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন। এ বিষয়ে তারা আজ গণমাধ্যমে বিবৃতি পাঠিয়েছেন।
মানববন্ধনে জাবির সাংস্কৃতিক জোটের দপ্তর সম্পাদক আহসান লাবিব বলেন, ‘ধর্ষককে পালিয়ে যেতে যে প্রভোস্ট-প্রক্টর সাহায্য করে, সে প্রভোস্ট-প্রক্টর দায়িত্ব পালনে নৈতিকতা হারিয়েছেন। তাদের অবিলম্বে পদত্যাগ চাই।’ নৃবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক রেজওয়ানা করিম স্নিগ্ধা বলেন, ‘এ আন্দোলন শুধু জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নয়, এটি সারা বাংলাদেশের আন্দোলন। আমরা নিরাপদ ক্যাম্পাস চাই। ধর্ষণের মতো ঘটনায় ক্ষমতাসীন ছাত্র সংগঠনের নেতা-কর্মীরা জড়িত, আপনি ক্ষমতাসীন দেখে পার পেয়ে যাবেন তা আর চলবে না।’
দর্শন বিভাগের অধ্যাপক রায়হান রাইন বলেন, ‘আমরা এমন একজন উপাচার্যকে পেয়েছি যিনি নিষ্ক্রিয় ও নির্বিকার। ক্যাম্পাসে যত ঘটনা ঘটে কিন্তু তিনি কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারেন না। তিনি বড়জোর একটা নির্দেশ পাঠান কিন্তু এর কিছুই ঘটে না। আমরা অছাত্রদের বের করার কথা বলেছি, তিনি শুধু নির্দেশ দিয়ে নির্বিকার হয়ে বসে আছেন। আমরা অভিযুক্তদের সার্টিফিকেট বাতিল চাই, অথচ শুধু স্থগিত করা হয়েছে।’
ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক পারভীন জলী বলেন, ‘তিন দিন পার হয়ে গেলেও এখনো অছাত্রদের বের করা হয়নি। ধর্ষণের ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় বাদী হয়ে মামলা করার কথা, অথচ তারা অভিযোগ দায়ের করেছে। প্রশাসন শুধু আশ্বাস দেয় কিন্তু বাস্তবে কিছুই হয় না।’
বক্তারা আরও বলেন, ‘প্রায় দেড় বছর পার হয়ে গেছে অথচ শিক্ষক মাহমুদর রহমান জনির যৌন নিপীড়নের বিচার এখনো হয়নি। শুধু আওয়ামী লীগপন্থি শিক্ষকদের নিয়ে তদন্ত করবেন আর তারা তদন্ত করে কিছুই পাবেন না, এরকম রিপোর্ট আমরা মানব না। বিশ্ববিদ্যালয়ে যারা দীর্ঘদিন ধরে নিপীড়নবিরোধী আন্দোলনে যুক্ত আছেন, তাদের তদন্ত কমিটিতে রাখতে হবে।’
মানববন্ধনে আরও বক্তব্য দেন সরকার ও রাজনীতি বিভাগের অধ্যাপক শামছুল আলম সেলিম, দর্শন বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ কামরুল আহসান ও অধ্যাপক এএসএম আনোয়ারুল্লাহ ভূঁইয়া, ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক পারভীন জলি ও অধ্যাপক গোলাম রব্বানী, ফার্মেসি বিভাগের অধ্যাপক ড. মাফরুহী সাত্তার, দর্শন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মাহমুদা আকন্দ প্রমুখ।
এদিকে ধর্ষণে জড়িতদের শাস্তির দাবিতে মৌন মিছিল করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। দুপুর দেড়টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন চত্বর থেকে শুরু হওয়া মিছিলটি শহিদ মিনার প্রাঙ্গণে গিয়ে শেষ হয়। পরে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি আকতারুজ্জামান সোহেল বলেন, ‘ধর্ষকের কোনো ভাই-বোন কিংবা পরিবার নেই, তার কোনো সংগঠন নেই। ধর্ষণের ঘটনায় দৃষ্টান্তমূলক বিচার নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত ছাত্রলীগ রাজপথে থাকবে।’
১৮ বিশিষ্ট নাগরিকের ক্ষোভ ও প্রতিবাদ
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ধর্ষণের ঘটনায় বিশিষ্ট ১৮ নাগরিক ক্ষোভ ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন। এ বিষয়ে তারা মঙ্গলবার গণমাধ্যমে বিবৃতি পাঠিয়েছেন। বিবৃতিতে বলা হয়, ‘গত শনিবার দেশের শীর্ষস্থানীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জাবিতে এমন ধর্ষণের ঘটনায় আমরা হতবাক ও ক্ষুব্ধ। বিশ্ববিদ্যালয়টিতে ইতিপূর্বে আরও ঘটনা ঘটেছে। ধর্ষণের কোনোরূপ তদন্ত বা সুরাহা কর্তৃপক্ষ করেনি। বিশাল এই বিশ্ববিদ্যালয় কাম্পাসে নিরাপদ ও শৃঙ্খলা আনার কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেয়নি। এই সুযোগে উচ্ছৃঙ্খল কিছু ছাত্র এই ধরনের অমানবিক ঘটনা ঘটাতে সক্ষম হচ্ছে।’
আরও বলা হয়, আমরা সরকারের কাছে এই জঘন্য অপরাধের দ্রুত তদন্ত ও বিচার চাই এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কতৃপক্ষকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের পূর্ণ নিরাপত্তা বিধান করে শিক্ষার পরিবেশ নিশ্চিত করার জন্য কঠিন পদক্ষেপ ও শক্ত অবস্থান নেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি। আমরা আশা করি, বাংলাদেশের কোথাও আর কোনো নারী ধর্ষিত হবে না।’
বিবৃতি দাতারা হলেন ১) হাসান ইমাম ২) অনুপম সেন ৩) সারওয়ার আলী ৪) রামেন্দু মজুমদার ৫) আবেদ খান ৬) ফেরদৌসী মজুমদার ৭) মামুনুর রশীদ ৮) মফিদুল হক ৯) নাসির উদ্দীন ইউসুফ ১০) মুনতাসীর মামুন ১১) শাহরিয়ার কবীর ১২) কেরামত মওলা ১৩) মিলনকান্তি দে ১৪) লাকী ইনাম ১৫) সারা যাকের ১৬) শিমূল ইউসুফ ১৭) গোলাম কুদ্দুছ ১৮) আহকামউল্লাহ।