![জাবিতে আন্দোলনের মুখে প্রক্টরের পদত্যাগ](uploads/2024/03/18/1710773177.JU_Proctor.jpg)
সম্প্রতি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ধর্ষণকাণ্ড ও অন্যান্য অপরাধমূলক ঘটনায় দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের অন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে প্রক্টর আ স ম ফিরোজ-উল হাসানকে অব্যাহতি দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। তার জায়গায় সাময়িকভাবে নতুন প্রক্টরের দায়িত্ব পেয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান ও উপাত্ত বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক আলমগীর কবীর।
সোমবার (১৮ মার্চ) বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার আবু হাসান স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশে বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়। ২০১৯ সালের ১ জানুয়ারি ভারপ্রাপ্ত প্রক্টরের দায়িত্ব পান আ স ম ফিরোজ-উল হাসান। এর ২ বছর পর ২০২২ সালের ৬ নভেম্বর ভারমুক্ত হয়ে প্রক্টরের দায়িত্ব পান তিনি।
এর আগে ধর্ষণ ও নিপীড়নের ঘটনায় প্রক্টর ও প্রভোস্টের দায়িত্ব অবহেলার অভিযোগ এনে তাদের অব্যাহতিসহ ৫ দাবিতে গত এক মাস ধরে আন্দোলন করে আসছে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের প্ল্যাটফর্ম ‘নিপীড়নবিরোধী মঞ্চ’। গত ১০ মার্চ দাবিগুলোর পরিপ্রেক্ষিতে অনির্দিষ্টকালের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবন অবরোধ করেন তারা। সর্বশেষ অবরোধের তৃতীয় দিন (১৩ মার্চ) উপাচার্যের আশ্বাসে অবরোধ স্থগিত করেন তারা। ওই দিনই পদত্যাগপত্র জমা দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর এবং সরকার ও রাজনীতি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আ স ম ফিরোজ-উল হাসান। এরই ধারাবাহিকতায় রবিবার পদত্যাগপত্র গ্রহণপূর্বক প্রক্টর ফিরোজ উল হাসানকে অব্যাহতি দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
এতে আনন্দ প্রকাশ করেছেন আন্দোলনকারী শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। নিপীড়নবিরোধী মঞ্চের আহ্বায়ক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের অধ্যাপক রায়হান রাইন বলেন, ‘প্রক্টরকে অব্যাহতি দেওয়ায় আমরা প্রশাসনকে সাধুবাদ জানাই। এর মাধ্যমে প্রশাসনের অন্তত একজন তার দায় স্বীকার করেছেন। কিন্তু মীর মশাররফ হোসেন হলের প্রভোস্টের ব্যাপারে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি। আমরা চাই তাকেও অব্যাহতি দেওয়া হোক, যাতে এটি একটি দৃষ্টান্ত হতে পারে যে, দায়িত্ব অবহেলা করলে পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হবে।’
মঞ্চের সদস্য সচিব ও বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মাহফুজ ইসলাম মেঘ বলেন, ‘আমাদের পাঁচ দফা দাবির মধ্যে অন্যতম ছিল প্রক্টর ও প্রভোস্টকে অব্যাহতি দেওয়া। এখানে প্রক্টরকে অব্যাহতি দেওয়া হলেও প্রভোস্টের ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত দেয়নি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। তাই আমাদের দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত আমরা আবারও আন্দোলন করে যাব।’
এদিকে সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করার আশাবাদ ব্যক্ত করে নতুন দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রক্টর অধ্যাপক আলমগীর কবীর বলেন, ‘আমি সবাইকে নিয়ে সম্মিলিতভাবে কাজ করতে চাই। বিশ্ববিদ্যালয়ে উদ্ভূত পরিস্থিতি উত্তরণে দায়িত্ব গ্রহণের পরই আমি সব স্টেকহোল্ডারদেরকে নিয়ে আলোচনার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নিয়ে দ্রুত তা বাস্তবায়নে সচেষ্ট হব।’
সদ্য সাবেক প্রক্টর আ স ম ফিরোজ-উল হাসান বলেন, ‘আমি স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেছি। এর আগেও আমি দুইবার উপাচার্য বরাবর অব্যাহতি চাইলেও আস্থাবান হওয়ায় তার অনুরোধে আমি সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করেছি। আমার এই অব্যাহতিকে ইতিবাচকভাবেই গ্রহণ করেছি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেড়েছে, চ্যালেঞ্জ বেড়েছে। দীর্ঘদিন এমন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা আমার জন্য অনেক কঠিন ছিল। সময়ের পরিক্রমায় অভিনব সমস্যা যুক্ত হচ্ছে। তাই চ্যালেঞ্জের কথা বিবেচনা করে দায়িত্বেও পরিবর্তন হওয়া উচিত। দীর্ঘদিন প্রক্টরের দায়িত্বে থাকায় আমি আমার উচ্চতর গবেষণায় সময় দিতে পারিনি। এখন আমি বিভাগের শিক্ষার্থীদেরকে নিয়ে ব্যস্ত হতে চাই, উচ্চতর গবেষণায় নিজেকে মগ্ন করতে চাই।’