![যে বৃক্ষ মুগ্ধতা ছড়াচ্ছে](uploads/2024/06/09/---------1717921931.jpg)
ত্রিশালে থাকাকালে একটি বটগাছ ছিল জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের অতি প্রিয়। ইতিহাস থেকে জানা যায়, এখানে বাঁশের বাঁশি বাজিয়ে কবির বহু দ্বিপ্রহর কেটেছে। পাশেই ছিল শকুনি বিল। যেখানে তিনি সহস্র হংস-সারি ও চখাচখির মিলনমেলা দেখতেন। যার চিত্র আছে তার রচনায়, গানে। মনোমুগ্ধকর সে পরিবেশে নজরুল উচ্ছ্বসিত হতেন। পাগলের মতো বাঁশি বাজাতেন। বলতেন, আমি ভগীরথ পাখি নামাচ্ছি।
আমি হ্যামিলটনের জাদুকর। বটগাছটি ছিল বিলের ধারে। প্রিয় সে বটগাছটির একটি প্রশস্ত ডালে বসে পা প্রসারিত করে অন্য একটি মোটা ডালে হেলান দিয়ে বাঁশি বাজাতেন। আজ সে শকুনি বিল নেই। সেখানে গড়ে উঠেছে মানববসতি। আর সে শকুনি বিলে বটগাছের পাশেই প্রতিষ্ঠিত হয়েছে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়। ২০০৬ সালে সেই শকুনি বিলের বটগাছের পাশে নজরুলের নামে বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপিত হয়।
বর্তমানে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় যেখানে অবস্থিত, সেই জায়গা একসময় বটতলা নামেই পরিচিত ছিল।
সম্প্রতি বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী এলাকার বন্ধু সাজিদ ক্যাম্পাসে এসেছিল। তাকে নিয়ে জম্পেশ আড্ডা ও ঘোরাফেরা করলাম। পুরো ক্যাম্পাস ঘোরার পর তাকে নিয়ে গেলাম বটতলায়, নজরুলবৃক্ষ দেখাতে। আমাদের সঙ্গে আরও যুক্ত হলো সাকিব, মাছুম ও রিফাত। সাজিদ নজরুলবৃক্ষের কথা শুনেছে। দেখার জন্য কিছুটা কৌতূহলও ছিল তার। বটতলায় গিয়ে দেখলাম কোথাও চলছে আড্ডা, কোথাও তর্কবিতর্ক, কোথাও বা গানবাজনা ও নানারকম কোলাহল। বটতলায় কিছুক্ষণ বসে গল্পগুজব আর আড্ডা দিলাম সবাই।
তারপর দেখা হলো দর্শন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক তারিফুল ইসলাম স্যারের সঙ্গে। দু-তিনজন মিলে একসঙ্গে আড্ডা দিচ্ছেন স্যাররা। সেখানে গল্প-আড্ডায় শুধু শিক্ষকরাই ছিলেন না, আশপাশে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে ছিলেন শিক্ষার্থী ও নানান পেশার মানুষ। নজরুল বটবৃক্ষের উৎসবমুখর এ পরিবেশ সম্পর্কে জানতে চাইলে ফিল্ম অ্যান্ড মিডিয়া স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী মাসুম জানান, ‘নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থীরা বটবৃক্ষের তলায় চা আড্ডায় মেতে ওঠেন। জায়গাটি প্রতিনিয়ত সংস্কৃতিচর্চার অংশ হিসেবেই পরিচিতি লাভ করছে। একই সঙ্গে নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের ঐতিহ্য বহন করে চলেছে বটবৃক্ষটি। প্রায়শই ক্লাসের ফাঁকে, সান্ধ্য আড্ডা কিংবা গানবাজনায় মেতে উঠি সবাই। ফলে ক্যাম্পাসের চিরচেনা জায়গা এটি’।
শুধু ক্যাম্পাসের নয়, বাইরের যে কেউ জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ঘুরতে এলে নজরুলের স্মৃতিবিজরিত বটবৃক্ষের নিচে আড্ডায় বসেন। আর উৎসবমুখর পরিবেশ দেখে আপ্লুত হন। এ নিয়ে সাজিদ জানান, ‘নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় ঘুরে দেখার মধ্য দিয়ে সুন্দর কিছু মুহূর্ত সৃষ্টি হয়েছে। একটা ক্যাম্পাসে সবাই সবার এত আপন, এত কাছের, এত পরিচিত হতে পারে তা আমার আগে জানা ছিল না। বিশ্ববিদ্যালয়ের আনাচে-কানাচে শিক্ষার্থীদের কোলাহল যেন আনন্দের বহিঃপ্রকাশ। বিশেষ করে নজরুল বটবৃক্ষে আড্ডার সময়টা মনে রাখার মতো। যে গাছের কথা সবসময় শুনতাম, তা দেখে খুব ভালো লেগেছে।’
প্রতিনিয়ত গল্প, আড্ডা আর নজরুলস্মৃতির অন্যতম নিদর্শন হচ্ছে নজরুল বটবৃক্ষটি। এ যেন নজরুলিয়ানদের চিরচেনা গল্প-আড্ডার ঠিকানা। দেখে মনে হয়, শত বছর আগে এ গাছের নিচে বাজানো নজরুলের বাঁশির সুর যেন আজও চলমান। আর সে বাঁশির সুরে হারিয়ে গেছে নানান শ্রেণির মানুষ, গল্প, আড্ডার অজুহাতে আসছে নজরুলের বাঁশির সুরে মুগ্ধ হতে। নজরুল স্মৃতিতে অটুট থেকে এভাবেই মুগ্ধতা ছড়াচ্ছে এ গাছটি।
কলি