বিজনেস ম্যানেজমেন্ট প্রতিনিয়তই পরিবর্তনশীল। আগের দিনের আদেশ-নির্দেশের লিডারশিপ এখন আর তেমন একটা দেখা যায় না, বরং এখন বিশ্বাস ও ট্র্যাক পদ্ধতির লিডারশিপ লক্ষণীয়। এই পদ্ধতিতে লোকদের শুধু কাজ করতেই বলা হয় না, তাদের এটাও বলা হয়- কেন কাজটি তাদের করতে হবে। আদান-প্রদানের লিডারশিপ থেকে এখন গঠনমূলক লিডারশিপের যুগ এসেছে। যেসব পুরোনো লিডারশিপ প্র্যাকটিস বাদ দিতে হবে তা নিচে তুলে ধরা হলো-
আপনি সবজান্তা এমন ভাব পরিহার করতে হবে। আপনার কাছে সব প্রশ্নের উত্তর থাকবে না। সুতরাং সবজান্তা সাজতে যাবেন না। আপনার টিম সদস্যদের জানতে হবে এবং তাদের বিশ্বাস করতে হবে। যাদের সঠিক দক্ষতা আছে এবং যারা আপনার কাজের সংস্কৃতির সঙ্গে মানানসই, তাদের কাজের জন্য নির্বাচন করতে হবে এবং তাদের কাজ করার সুযোগ দিয়ে রাস্তা ছেড়ে দিতে হবে।
অনেকে ভাবে, কোনো ভুল বা কোনো খারাপ কিছু সহ্য না করার নীতি কাজে আসে, তবে তা কিন্তু সবসময়ের জন্য প্রযোজ্য নয়। ভুল থেকে শিখতে হবে এবং ভুল স্বীকার করে নেওয়ার মানসিকতা থাকতে হবে।
মাইক্রো ম্যানেজমেন্ট বা বিজনেসের সবকিছু নিয়ন্ত্রণের আওতায় রাখা বাদ দিতে হবে। কর্মচারীদের হাতে কিছু ক্ষমতা ছেড়ে দিতে হবে।
তারা যদি ভুল করে, তাহলে তাদের দোষী না করে তাদের হাতেই কাজ ছেড়ে দিতে হবে।
অফিসে ঘুরে ঘুরে কাজ পরিদর্শন করার দিন শেষ। দেখে শুনে, আলাপের মাধ্যমে উপস্থাপিত আইডিয়া বাস্তবায়ন ও ফলাফল তদারক করতে হবে।
ব্যালেন্সশিটই বিজনেসের সবকিছু- এমন ধারণা বাদ দিতে হবে। কর্মীরাই বিজনেসের সবকিছু, তারাই কাজ করে, গ্রাহকদের আস্থা অর্জন করে এবং আর্থিক সাফল্য নিশ্চিত করে।
প্রযুক্তির ওপর বিনিয়োগের সঙ্গে সঙ্গে মানবসম্পদের ওপর বিনিয়োগ করতে হবে।
পরিবর্তন চাওয়ার চেয়ে পরিবর্তনকে লালন করুন। যারা সেরা আইডিয়া নিয়ে আসবে, তাদের কৃতিত্ব দিন।
ক্যাফেটেরিয়ায় ভালো খাবারের ব্যবস্থা করে অফিসের সবার সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করতে হবে।
কর্মচারীদের বেশি টাকা দিলে তারা বেশি কাজ করবে- এ ধারণা বাদ দিতে হবে। টাকার চেয়ে কর্মচারীদের পুরস্কৃত ও স্বীকৃতি দিতে হবে।
যা করতে বলা হয় তাই করতে হবে- এমন ধারণা বাদ দিতে হবে। যারা কাজের ক্ষেত্রে বেশি কিছু করতে পারবেন বা দিতে পারবেন, তাদের নিয়েই কাজ করতে হবে।
কর্মক্ষেত্রে অফিস কর্মীদের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তুলুন। কেননা, আপনি যদি অধিনস্তদের সঙ্গে কঠিন আচরণ করেন, তাহলে তাদের থেকে ১০০ ভাগ কাজ আদায় করা কখনো সম্ভব নয়।
তাদের কাছ থেকে তাদের পরিপূর্ণ কাজ নেওয়ার জন্য তাদের সঙ্গে সবসময় সুসম্পর্ক বজায় রাখতে হবে।
যদি কোনো কর্মী কাজে ভুলও করে থাকেন তাহলে তাকে কড়া ভাষায় না বলে সুন্দর করে বুঝিয়ে দেওয়া উচিত।
তাতে যেমন সেই কর্মীর কাজের প্রতি আগ্রহ বাড়বে, তেমনি এই আচরণের ফলে আপনার কর্মক্ষেত্রে যোগ্য কর্মী তৈরি হবে। যা আপনার জন্য অনেক বেশি সফলতা বয়ে আনবে।
দিনের ১২ ঘণ্টার বেশির ভাগ সময় সহকর্মীদের সঙ্গে কাটানো হয় বলে কর্মক্ষেত্রকে অনেকে ‘দ্বিতীয় ঘর’ বলেন। সেই ‘দ্বিতীয় ঘর’ অফিস যদি ‘পরিবার’ হয়, তাহলে সেখানে তো মান-অভিমান থাকবেই।
কর্মীদের মাঝে মান-অভিমান থাকলে তা দূর করার ব্যবস্থা করুন। কর্মীকে কাছে ডাকুন, অভিযোগ শুনুন, এরপর সঠিক ব্যবস্থা গ্রহণ করুন। কখনো কর্মীদের সঙ্গে বাজে আচরণ করা যাবে না।
সহকর্মীদের ভালো কাজের প্রশংসা করতে কখনো কার্পণ্য করবেন না। এর ফলে তারাও আপনার কথা ও কাজকে গুরুত্ব দেবে।
প্রশংসা করার ক্ষেত্রে- কাজটি খুব ভালো হয়েছে বা চমৎকার, দারুণ, এক্সেলেন্ট ইত্যাদি বলার চেয়ে কথাগুলো কিছুটা গুছিয়ে অন্যভাবেও বলতে পারেন। যেমন- আপনি এ কাজটি খুব ভালোভাবে করায় পুরো ব্যাপারটি করা আমার জন্য অনেক সহজ হয়েছে।
এভাবে বলার কারণে আপনার সহকর্মী ও অন্যদের মনে হবে আপনি তাদের প্রতি কৃতজ্ঞ।
কলি