![বিএসইসি-সিএসই এর উদ্যোগে প্রশিক্ষণ কর্মশালা অনুষ্ঠিত](uploads/2024/05/29/CSE-PR-1716966363.jpg)
বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) ও চিটাগং স্টক এক্সচেঞ্জ পিএলসি (সিএসই)-র উদ্যোগে একদিনের প্রশিক্ষণ কর্মশালার আয়োজন করা হয়।
রবিবার (২৬ মে) সিএসইর চট্টগ্রামের প্রধান কার্যালয়ে মানিলন্ডারিং ও সন্ত্রাসী কার্যে অর্থায়ন প্রতিরোধ (এএমএল অ্যান্ড সিএফটি) বিষয়ক এই প্রশিক্ষণ কর্মশালার আয়োজন করা হয়।
সিএসইর এই প্রশিক্ষণ কর্মশালায় এক্সচেঞ্জের সংশ্লিষ্ট সকল স্টক ব্রোকার ও স্টক ডিলাররা উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানটিতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিএসইসির কমিশনার ড. শেখ শামসুদ্দিন আহমদ ও বিশেষ অতিথি হিসেবে ছিলেন বিএসইসি-র এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর (ইডি) মোহাম্মাদ জাহাঙ্গীর আলম।
এ ছাড়াও কর্মশালায় উপস্থিত ছিলেন এডিশনাল ডিরেক্টর মোহাম্মাদ সিদ্দিকুর রহমান, অ্যাসিস্ট্যান্ট ডিরেক্টর মোহাম্মদ নুরুজ্জামান, অ্যাসিস্ট্যান্ট ডিরেক্টর মিথুন চন্দ্র নাথ এবং সিএসইর ম্যানেজিং ডাইরেক্টর এম সাইফুর রাহমান মজুমদার, এফসিএ, এফসিএমএ, চীফ রেগুলেটরী অফিসার (সিআরও) মোহাম্মদ মেহেদী হাসান, সিএফএ।
এ ছাড়াও সিএসইর বিভিন্ন বিভাগের বিভাগীয় প্রধানরাও উপস্থিত ছিলেন।
সিএসই-র ম্যানেজিং ডাইরেক্টর এম সাইফুর রাহমান মজুমদার, এফসিএ, এফসিএমএ, তার উদ্বোধনী বক্তৃতায় বলেন, ‘মানিলন্ডারিং ও টেররিস্ট ফিনান্সিং হচ্ছে জাতীয় স্বার্থের সঙ্গে জড়িত একটি বিষয়। এর কারণ হচ্ছে এক দেশ থেকে আরেক দেশে যে লেনদেনসমূহ হয় তার একটি নির্দিষ্ট মানদণ্ড থাকে, আর কোনো দেশের আইনগত কাঠামো কত স্বচ্ছ তার উপর ঐ দেশের কান্ট্রি গ্রেডিং নির্ভর করে। এক্ষেত্রে এটাও দেখা হয় যে সংশ্লিষ্টরা কতখানি নিয়ম কানুন পরিপালন করে এবং সঠিকভাবে করে কিনা।’
তিনি আরও বলেন, ‘হতে পারে আমরা অনেক ধরণের সংকটের মধ্যে থাকতে পারি, কিন্তু আমাদের লক্ষ্য হবে সব সময় রুটিন কার্যক্রমগুলো পালন করা, এক সঙ্গে এটাও বিবেচনা করতে হবে যে সামান্য অনিয়ম ও বড় ক্ষতির কারণ হতে পারে। রিপোটিং প্রতিষ্ঠান হিসেবে এই আইন পরিপালনকে বারডেন হিসেবে না দেখে নিজেকে সব সময় প্রস্তুত রাখতে হবে এবং নিয়মিত ট্রেনিং এর মাধ্যমে নিজেকে উন্নত করতে হবে। রেগুলেটরি কাঠামোর মধ্যে থেকে এই ব্যাপারগুলোকে এড়িয়ে না গিয়ে আমাদের সম্মুখীন হতে হবে।’
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি বিএসইসির কমিশনার ড. শেখ শামসুদ্দিন আহমদ বলেন, ‘আমরা যে প্রতিষ্ঠানের সঙ্গেই সংযুক্ত থাকি না কেন, মনে রাখতে হবে CAMLCO বা BAMLCO-র কাজগুলো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কেননা আমাদের সরকারের মৌলিক নীতির মধ্যে আছে যে, বাংলাদেশ মানিলন্ডারিং পছন্দ করে না এবং সন্ত্রাসী কার্যক্রমের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স। জিরো টলারেন্স ও টেরোরিস্ট ফিনান্সিং এই দুটো বিষয়কে যেহেতু সরকার আইন করে নিষিদ্ধ করেছে তাই আমাদেরও প্রতিষ্ঠানের কর্মচারী হিসেবে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে যে, আমরা সঠিকভাবে সব সময় সচেষ্ট থাকবো কোনোভাবেই যেন আমাদের কারণে আমাদের প্রতিষ্ঠানে কোনো ধরনের মানিলন্ডারিং এবং সন্ত্রাসী অর্থায়নের কার্যক্রম সংঘটিত না হয় এর জন্য আমরা কিভাবে ভূমিকা রাখবো সেটি হলো আজকের প্রতিপাদ্য বিষয়।’
তিনি বলেন, ‘এখানে অনেক বিষয়ের মধ্যে দুটি খুব গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো-মনিটরিং এবং এনফোর্সমেন্ট। যদি এই দুটি বিষয়কে আমরা যথাযথভাবে পালন করতে পারি তবে একজন ক্যামেলকো/ বামেলকো হিসেবে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারব। খেয়াল রাখতে হবে যে, যে কোনো বিষয় শুরুতেই সূক্ষ্ম বিবেচনায় নিয়ে দেখতে হবে। প্রতিটি বিষয় এমনভাবে দেখতে হবে যেন একটি ঘটনা ঘটে যাওয়ার পর মনে না হয় যে পূর্বেই আরও ভালোভাবে দেখলে অমন হত না। তাই আমাদেরকে কিছুটা সন্ধিৎসু হতে হবে, সন্ধিৎসু এই অর্থে যেন আপাত দৃষ্টিতে যা স্বাভাবিক মনে হচ্ছে কিন্তু সূক্ষ্ম বিবেচনায় তা মোটেও গ্রহণযোগ্য নয়। এ ছাড়া অনুসন্ধান করেই থেমে থাকা যাবে না, এর প্রয়োজনীয় প্রতিকার মানে ব্যবস্থা নিতে হবে। মানিলন্ডারিংকে প্রশ্রয় দেওয়া যাবে না। কেননা এর কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয় সমাজের সাধারণ মানুষ। তাই আপনি আপনার প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি হিসেবে আপানার কাজ হচ্ছে ছাড় না দেওয়া। যদি ছাড় দেন তবে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে যার ফলাফল হবে আর্থিক সিস্টেমের ক্ষতি।’
তিনি আরও বলেন, ‘অপরদিকে, আপনার নেওয়া একটি পদক্ষেপ হতে পারে অন্যদের জন্য উৎসাহের উদাহারন। তবে আপনাদেরকে আরেকটি বিষয়েও যত্নবান হতে হবে তা হল, রিপোটিং লেখা। রিপোটিং লেখাও গুরুত্বপূর্ণ কেননা এর উপরেও নির্ভর করে ব্যবস্থাগ্রহণ। প্রয়োজন হলে এই বিষয়ে সঠিক এবং উপযুক্ত প্রশিক্ষণসমূহ গ্রহণ করতে হবে। আপনাদের সূক্ষ্ম মনিটরিং, স্বচ্ছ রিপোটিং এবং উপযুক্ত ব্যবস্থাগ্রহণ আমাদের অর্থনৈতিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে সহায়তা করবে।’
অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি কমিশনের এক্সকিউিটভি ডিরেক্টর মোহাম্মাদ জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘মানিলন্ডারিং ও টেররিস্ট ফিনান্সিং যে কোন দেশের অর্থনৈতিক নিরাপত্তা ও সামাজিক কর্মকাণ্ডের জন্য মারাত্মক বিপর্যয় টেনে আনে। মানিলন্ডারিং এমন একটি পদ্ধতি যা অসৎ ব্যক্তি বা গোষ্ঠীকে অবৈধ অর্থ উপার্জনের উপায় সৃষ্টিতে মূল ভূমিকা পালন করে। পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা বিএসইসি বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষা ও পুঁজিবাজারের উন্নয়ন এবং স্থিতিশীলতা নিশ্চিতকরণের বিষয়ে সর্বদা সচেষ্ট এবং যে সকল ক্যাপিটাল মার্কেট ইন্টারমিডিয়ারিস রিপোটিং প্রতিষ্ঠান হিসেবে মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন ২০১২ ও সন্ত্রাস বিরোধী আইন ২০১৩ অন্তর্ভুক্ত হয়েছে, তাদের রেজিস্ট্রেশন প্রদান ও তাদের কার্যক্রম তদারকি করে আসছে।’
তিনি বলেন, ‘এই দুই আইন অনুযায়ী রিপোটিং প্রতিষ্ঠানের উপর অর্পিত দায়িত্ব পালন, তদারকিকরণ বিএসইসির উপর ন্যস্ত করা হয়েছে। এ প্রেক্ষিতে বিএসইসি গত ২০১৪ সালে মানিলন্ডারিং ও সন্ত্রাসী অর্থায়নে প্রতিরোধবিষয়ক এএমএল সিএফটি উইং প্রতিষ্ঠা করেছে এবং আমরা সে অনুযায়ী নিয়মিত প্রশিক্ষণ কর্মশালা, সেমিনার, ওয়ার্ক শপ ইতাদি আয়োজন করছি। আমরা আশা করছি, ভবিষ্যতে আমরা নিজ নিজ কর্মক্ষেত্রে এই আইনগুলোর পুঙ্খানুপুঙ্খ ব্যবহার করতে পারবো।’
এডিশনাল ডিরেক্টর মোহাম্মাদ সিদ্দিকুর রহমান বলেন, ‘বিএসইসির কাজ হচ্ছে বিনিয়োগকারীর স্বার্থ রক্ষা করা এবং পুঁজিবাজারের উন্নয়ন এবং এই সংক্রান্ত আইন প্রণয়ন করা। আজকের আলোচ্য আইন দুটি সম্পর্কে ভালোভাবে শুনবো, জানবো এবং বাস্তবক্ষেত্রে এর সঠিক প্রয়োগ করতে পারি, তবেই আমাদের এই কর্মশালা সার্থক হবে। মনে রাখতে হবে যে, আইন দুটির ভুল ব্যবহার বা অজ্ঞতা দেশের অর্থনীতিকে বাধাগ্রস্ত করবে এবং মানুষের জানমালের নিরাপত্তা বিঘ্নিত করবে। তাই বিএসইসি মানিলন্ডারিং ও টেররিস্ট ফিনান্সিং এর প্রতিরোধে কাজ করে যাচ্ছে।’
এরপর কমিশনের অ্যাসিস্ট্যান্ট ডিরেক্টর মোহাম্মদ নুরুজ্জামান ও মিথুন চন্দ্র নাথ মানিলন্ডারিং ও টেররিস্ট ফিনান্সিং এর উপর বিশদ উপস্থাপনা প্রদান করেন।
অনুষ্ঠানের সমাপনী বক্তব্যে সিএসই-র চীফ রেগুলেটরী অফিসার মেহেদী হাসান, সিএফএ বলেন, ‘যে বিষয়টি বিবেচনায় নেওয়া উচিত সেটি হলো know your customers/clients বা KYC বা আপনার ক্লায়েন্টকে জানুন। একটি ক্লায়েন্ট সম্পর্কে ভাল জ্ঞান থাকা একটি কার্যকরী পদ্ধতি, যার দ্বারা আর্থিক প্রতিষ্ঠান এবং তাদের কর্মকর্তরা চিনতে সক্ষম হবেন অর্থ পাচারের প্রচেষ্টাকে বা কারা জড়িত তাদেরকে।’
তিনি উপস্থিত সকলকে কমিশনের নির্দেশনা অনুযায়ী সংশ্লষ্টি সকল নিয়মাবলী মেনে পুজিঁবাজারের ব্যবসা পরিচালনা করার জন্য অনুরোধ জানান।
তিনি প্রশিক্ষণে উপস্থিত থাকার জন্য সকলকে আন্তরিক ধন্যবাদ জ্ঞাপন করে অনুষ্ঠানটি শেষ করেন।
বিজ্ঞপ্তি/সাদিয়া নাহারা/অমিয়/