![নৌকা সমর্থন করায় মুক্তিযোদ্ধার বাড়ি ভাঙচুর, ভাতা বন্ধের হুমকি](uploads/2023/12/24/1703401558.gaibandha-1111.jpg)
গাইবান্ধার ফুলছড়ি উপজেলায় দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকার সমর্থন ও পোস্টার টানানোয় মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের বাড়িতে ভাঙচুর, সদস্যদের মারধর ও মুক্তিযোদ্ধা ভাতা বন্ধ করে দেওয়ার হুমকির অভিযোগ উঠেছে আওয়ামী লীগ সভাপতি জিএম সেলিম পারভেজসহ চারজনের বিরুদ্ধে।
শনিবার (২৩ ডিসেম্বর) রাতে বিষয়টি নিশ্চিত করেন ভুক্তভোগী উপজেলার দক্ষিণ রসুলপুর গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা মৃত বাচ্চু মিয়ার ছেলে বাবলু মিয়া।
তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে শুক্রবার রাতে থানায় উপজেলা পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান সেলিম পারভেজসহ চারজনের নামে অভিযোগ করেছি।’
অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, ভুক্তভোগী পরিবার গাইবান্ধা-৫ আসনের নৌকার প্রার্থী মাহমুদ হাসান রিপনের সমর্থক। গত ১৮ ডিসেম্বর প্রতীক বরাদ্দের পর প্রচারের অংশ হিসেবে তার (বাবলু) বাড়ির উঠানে নৌকার পোস্টার টানানো হয়। সম্প্রতি সেলিম পারভেজ বাবলু মিয়াকে ওই আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী (ফুলছড়ি উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক) ফারজানা রাব্বী বুবলীর প্রচার-প্রচারণায় অংশগ্রহণ করতে বলেন। তাতে রাজি না হওয়ায় সেলিম পারভেজ তার বাবার মুক্তিযোদ্ধা ভাতা বন্ধ করবে বলে হুমকি দেয়।
তার ভাষ্যমতে, ‘যদি নৌকা বাদ দিয়ে ট্রাকের পক্ষে না আসিস তাহলে তোদের মুক্তিযোদ্ধা ভাতা বন্ধ করে দেব আমি উপজেলা চেয়ারম্যান। তোদের তেল বেশি হয়েছে’, এমন হুমকি দেয় সেলিম পারভেজ।
অন্য অভিযুক্তরা হলেন- উপজেলার দক্ষিণ রসুলপুর গ্রামের মৃত মেছের উদ্দিনের ছেলে লিটন মিয়া (৪২)। তিনি গত ১ নভেম্বর উপজেলার খবিরিয়া আলিম মাদ্রাসার মাঠ থেকে ককটেল ও বিস্ফোরকদ্রব্য উদ্ধারের মামলার কারাভুক্ত আসামি বিএনপি নেতা মিলন ও বিগত চারদলীয় জোট সরকারের আমলে প্রভাবশালী বিএনপি নেতা হামিদ মেম্বারের ছোট ভাই। অপরজন একই এলাকার আনছার আলীর ছেলে আলামিন ইসলাম বাবু।
অভিযোগে আরও উল্লেখ করা হয়, গত বৃহস্পতিবার (২১ ডিসেম্বর) বিকেলে ফুলছড়ির বালাশীঘাটের নৌকা মালিক সমিতির সভাপতি অভিযুক্ত লিটন মিয়া ও আলামিন ইসলাম বাবুসহ অজ্ঞাত কয়েকজন ওই বাড়িতে প্রবেশ করে বাবলু মিয়াকে না পেয়ে বিভিন্ন অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ করেন। এ সময় বাবলুর মা (বীর মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রী) বেবি বেওয়াকে মারধর করে শ্লীলতাহানি ঘটানোর চেষ্টা করেন তারা। পরে একই দিন রাত সাড়ে ১০টার দিকে অভিযুক্তরা দ্বিতীয় দফায় আবারও বাবলুর বসতবাড়ি সংলগ্ন জমিতে বাবলুকে একা পেয়ে নেশাগ্রস্ত অবস্থায় মারধর করে। পরে চিৎকারে তার স্ত্রী বাঁচাতে এগিয়ে এলে তাকেও মারধর ও শ্লীলতাহানি করে তারা।
এ সময় বাবলুর ছেলের মোবাইলে ‘জিতবে এবার নৌকা’ গান শুনে তারা আরও ক্ষিপ্ত হয়ে অভিযুক্তরা বাড়ির গেট ভেঙে প্রবেশ করে তাদের রান্না করা খাবার লাথি মেরে ফেলে দেয়। নৌকা প্রতীকের নির্বাচনি প্রচারে কোনো গান না বাজানোসহ নৌকার প্রচার-প্রচারণায় অংশ না নিতেও হুমকে দেয় তারা। অন্যথায় তিনিও মুক্তিযোদ্ধা ভাতা বন্ধ করার হুমকি দেন।
মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রী (৬৫) বেবি বেওয়া বলেন, ‘লিটন নেশা করে এসে আমাকে গালিগালাজ, মারধর করেছে। এই বয়সে মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রী হয়েই মার খেতে হচ্ছে। ভাতা বন্ধ করে দিলে কি খাব, আমি এর বিচার চাই।’
অভিযোগকারী মুক্তিযোদ্ধার সন্তান বাবলু মিয়া বলেন, ‘আমরা মুক্তিযোদ্ধার পরিবার। সব সময়ই নৌকায় ভোট দিয়েছি। কিন্তু তারা স্বতন্ত্র প্রার্থীর মিটিংয়ে আমাদের ডাকে। নৌকায় ভোট দিলে মুক্তিযোদ্ধা ভাতা বন্ধ করে দেবে।’
অভিযোগের বিষয়ে ফুলছড়ি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রাজিফুজ্জামান বসুনিয়া বলেন, ‘একটি অভিযোগ পেয়েছি, বিষয়টি তদন্ত করা হচ্ছে। সত্যতা পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেব।’
অভিযুক্ত উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জিএম সেলিম পারভেজকে একাধিকবার ফোনে দিলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
রফিক খন্দকার/জোবাইদা/অমিয়/