![উদ্বোধনের পরও তালাবদ্ধ](uploads/2024/01/12/1705037092.Comilla-Freedom-Fighter-Com.jpg)
উদ্বোধনের পর থেকে গত দুই বছরেরও বেশি সময় ধরে তালাবদ্ধ কুমিল্লার দেবিদ্বার উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স। ২০২১ সালের ১৬ ডিসেম্বর উদ্বোধন হলেও এখন পর্যন্ত কমপ্লেক্সটির কোনো কার্যক্রম শুরু হয়নি। চারতলা ভবনের প্রায় প্রতিটি তলায় পড়েছে ধুলার স্তর, কক্ষের শাটারগুলোতে ধরেছে মরিচা। দুই কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সটি হস্তান্তর না হওয়ায় পড়ে আছে অভিভাবকহীন অবস্থায়। এতে স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাদের মাঝে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীনে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর কুমিল্লার (এলজিইডি) বাস্তবায়নে, দেবিদ্বার পৌরসভার চান্দিনা রোডের মোহনা আবাসিক এলাকায় ১০ শতাংশ জমির ওপর চারতলা বিশিষ্ট উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স নির্মাণ করা হয়। পরে ২০২১ সালের ১৬ ডিসেম্বর কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের উপস্থিতিতে ভার্চুয়ালি কমপ্লেক্সটির উদ্বোধন করেন তৎকালীন স্থানীয় সংসদ সদস্য রাজী মোহাম্মদ ফখরুল। তবে হাঁকডাক করে উদ্বোধন করা হলেও এর পর থেকেই ভবনটি তালাবদ্ধ অবস্থায় পড়ে আছে। তাই ভবনটিতে যাতায়াত নেই বীর মুক্তিযোদ্ধাদের। শুধু গত বছরের ১৫ আগস্ট উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে ওই কমপ্লেক্সে শোকসভা ও মিলাদে অংশ নেন বীর মুক্তিযোদ্ধারা। এরপর থেকে আবার তালা ঝুলছে ভবনের মূল ফটকে।
স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা জানান, দেবিদ্বার উপজেলায় দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদের নির্বাচিত কোনো কমিটি নেই। এ কারণে মুক্তিযোদ্ধারা এ কমপ্লেক্সে তেমন যাতায়াত করেন না। এ ছাড়া এটি এখনো মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে হস্তান্তর করা হয়নি।
কিছুদিন আগে দেবিদ্বার উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স প্রাঙ্গণ ঘুরে দেখা যায়, দুই বছরের বেশি সময় ধরে তালাবদ্ধ অবস্থায় পড়ে থাকায় ভবনের প্রতিটি তলায় ধুলাবালির আস্তর পড়েছে। কমপ্লেক্স প্রাঙ্গণে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরালের সামনের অংশে তিন চার ফুট লম্বা আগাছা জন্মেছে। সিঁড়িটি ময়লা-আবর্জনা ও ধুলাবালিতে পরিপূর্ণ।
স্থানীয় ফার্নিচার ব্যবসায়ীরা ভবনের মূল ফটকে সারি সারি কাঠ শুকাচ্ছেন। ভবনের বাইরের অংশের টাইলসের বিভিন্ন জায়গায় শেওলা পড়েছে। ভবনটির সামনের অংশে বঙ্গবন্ধু ম্যুরালের দুই পাশে ঝোপঝাড় ও আগাছায় ভরপুর। এমতাবস্থায় বীর মুক্তিযোদ্ধাদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ভবনের দোকানঘর ভাড়া দেওয়ার কথা থাকলেও এতে আগ্রহ নেই কারও। ভবনটি রক্ষণাবেক্ষণের জন্য যে দোকান ঘরগুলো করা হয়েছে, সেগুলোও এখন পর্যন্ত বন্ধ পড়ে আছে।
দেবিদ্বার উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. রফিকুল ইসলাম খবরের কাগজকে বলেন, ‘কমপ্লেক্সটি কবে উদ্বোধন করা হয়েছে তা আমি জানি না। মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে ভবনটি এখনো হস্তান্তর করা হয়নি। এখানে রাজনৈতিক কিছু সমস্যাও আছে। শুধু দেবিদ্বার ছাড়া বাংলাদেশের অধিকাংশ উপজেলায় মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে কমপ্লেক্স হস্তান্তর করা হয়েছে। এ ব্যাপারে কেউ আলাপ-আলোচনাও করছে না।
গতকাল বিকেলে এ বিষয়ে কথা হলে কুমিল্লা জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার সফিউল আহমেদ বাবুল খবরের কাগজকে বলেন, ‘বিষয়টি আমি জেনেছি। সেখানে আমাদের মুক্তিযোদ্ধা সংসদের নেতারা আছেন। এটি তাদের কাছেই তো হস্তান্তরের কথা। এ বিষয়ে আমি আগামী রবিবার কুমিল্লার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) এবং দেবিদ্বার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলব।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে দেবিদ্বার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নিগার সুলতানা খবরের কাগজকে বলেন, ‘আমি এখানে আসার আগেই মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সটির নির্মাণ এবং উদ্বোধন হয়েছে। এখানকার বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আমি কথা বলব। আশা করছি তাদের সঙ্গে আলোচনা করে একটা সিদ্ধান্তে পৌঁছতে পারব।’