![বুড়িমারী স্থলবন্দরে ধুলায় অতিষ্ঠ জনজীবন](uploads/2024/02/29/1709180032.patgram.jpg)
লালমনিরহাটের বুড়িমারী স্থলবন্দর যেন শব্দদূষণ আর ধুলার নগরীতে পরিণত হয়েছে। এসবে অতিষ্ঠ এই স্থলবন্দরের ব্যবসায়ী, পথচারী, শিক্ষার্থী, দেশি-বিদেশি পর্যটকসহ সর্বস্তরের মানুষ। মাত্রাতিরিক্ত ধুলা আর তীব্র শব্দে বুড়িমারী ইউনিয়নে বসবাসকারীদের দেখা দিয়েছে নানা রোগের উপসর্গ।
স্থানীয়দের অভিযোগ, বুড়িমারী শুল্কস্টেশনের (কাস্টমস) নির্ধারিত এলাকার বাইরে বুড়িমারী, ইসলামপুর ও উফারমারা মৌজার আবাসিক কিছু বসতবাড়ি ছাড়া প্রায় সব দিকের এলাকার জমি ভাড়া নিয়েছেন স্থানীয় ব্যবসায়ীরা। সেই ভাড়া করা জায়গায় ট্রাকে বোঝাই করে পাথর আনা হয়। এর পর যন্ত্রের মাধ্যমে বিভিন্ন পরিমাপে ভাঙা হয় পাথর। এর পর সেখান থেকে সেই পাথর পাঠানো হয় দেশের বিভিন্ন জেলায়।
একাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক, শিক্ষার্থী জানান, স্থলবন্দর থেকে বুড়িমারী-পাটগ্রাম মহাসড়কের ৫ থেকে ৬ কিলোমিটার ও আঞ্চলিক সড়কের উভয় পাশের ৩ থেকে ৫ কিলোমিটারজুড়ে শত শত পাথরবাহী ভারতীয় ও ভুটানি ট্রাক দ্রুতগতিতে আসা-যাওয়া করে। এর পর বসতবাড়ি এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কাছে এসব গাড়ি এনে পাথর ওঠানামা ও ভাঙা হয়।
সরেজমিনে দেখা গেছে, বুড়িমারী স্থলবন্দর এলাকাসংলগ্ন বুড়িমারী হাসর উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়, আমানতুল্যা প্রধান মাধ্যমিক বিদ্যালয়, আলীমুদ্দিন ছবুরউদ্দিন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, সফিয়ার রহমান রেসিডেন্সিয়াল মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ, বুড়িমারী আলিম মাদ্রাসা, বুড়িমারী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, গুড়িয়াটারি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, উফারামারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কাছে রয়েছে ব্যবসায়ীদের পাথর ভাঙার নির্দিষ্ট জায়গা। সেখানে বসানো হয়েছে একাধিক পাথর ভাঙার যন্ত্র। এসব জায়গায় প্রতিদিন উচ্চ শব্দে ভাঙা হয় পাথর।
এদিকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোয় অন্তত দুই হাজারের বেশি শিক্ষার্থী পড়ালেখা করে। ধুলার কারণে তারা নাক-মুখ ঢেকে বিদ্যালয়ে আসা-যাওয়া করতে বাধ্য হয়। পাথর ভাঙা মেশিনের শব্দে পড়ালেখায় মনোনিবেশ করতে পারে না তারা। এ ছাড়া বায়ুদূষণের ফলে শিক্ষার্থীসহ স্থানীয়দের অনেকে শ্বাসকষ্ট, বুকে ব্যথা, সর্দি, অ্যালার্জি, মাথাব্যথাসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। পাশাপাশি এসব মেশিনের টানা শব্দে শ্রবণশক্তির সমস্যা ও অস্বস্তির মধ্যে থাকতে হচ্ছে অনেকে।
বুড়িমারী হাসর উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্র আশিকুজ্জামান আপন বলেন, ‘অতিরিক্ত ধুলা ও শব্দে অনেক সমস্যা হয়। স্কুল আসা-যাওয়ার সময় পোশাকে ধুলা জমে, ময়লা হয়ে যায়। মাঝে মধ্যে সর্দিকাশি হয়, মাথাব্যথাও করে।’
আমানতুল্যা প্রধান মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্র সিরাতুন্নবী সিয়াম বলেন, ‘ধুলাবালির কারণে মুখে মাস্ক পরে চলাচল করলেও ধুলা থেকে রেহাই পাই না।’
বুড়িমারী ইউনিয়নের গুড়িয়াটারী এলাকার বাসিন্দা আবু সাঈদ জানান, ‘স্থলবন্দর থেকে মহাসড়ক ও এলাকার বিভিন্ন সড়কে প্রতিদিন অনেক পাথরের গাড়ি আসা-যাওয়া করে। পাথর লোড-আনলোড করে, মেশিনে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পাথর ভাঙে। এতে এলাকায় অনেক ধুলা ওড়ে। অন্যদিকে শব্দে অতিষ্ঠ অবস্থা হয়ে পড়ে। বাড়ির জিনিসপত্র ধুলায় ঢেকে যায়।’
পাটগ্রাম থানার এসআই মো. রমজান আলী জানান, ইতিমধ্যেই পাটগ্রাম থানা-পুলিশের পক্ষ থেকে স্থলবন্দরে নিয়োজিত শ্রমিকসহ স্থানীয় শিক্ষার্থী ও জনসাধারণের মধ্যে মাস্ক ব্যবহারসহ দূষিত পরিবেশ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য জনসচেতনতামূলক কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।
পাটগ্রাম আদর্শ কলেজের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক শেখ মোহাম্মদ সহর উদ্দিন বলেন, ‘বায়ু ও পরিবেশদূষণ পরিবেশ অধিদপ্তরের দেখা উচিত। বায়ু দূষিত হলে সবার জন্যই সমস্যা। নিয়মতান্ত্রিকভাবে কাজ করলে শব্দ ও বায়ুদূষণ কম হতো।’
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নুরুল ইসলাম বলেন, ‘পাথর ভাঙা মেশিন যথাযথ নিয়ম মেনে বসানো হয়েছে কি না, পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র আছে কি না- এ বিষয়গুলো আমরা দ্রুত দেখব। বায়ু ও শব্দদূষণ রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।’
লালমনিরহাট সিভিল সার্জন ডা. নির্মলেন্দু রায় জানান, ‘ধুলাবালিতে শ্বাসকষ্ট, নিউমোনিয়া, অ্যাজমা, টিবি ও সিলিকোসিস রোগসহ শিশু থেকে বৃদ্ধ সবারই সমস্যা হতে পারে। শব্দদূষণে মাথা ও কানে সমস্যা হয়। শব্দ ও বায়ুদূষণ বন্ধে প্রশাসন ব্যবস্থা নিতে পারে।’