![বিষাদে কাটে ইটভাটার নারী শ্রমিকদের জীবন](uploads/2024/03/09/1709961500.Kishoreganj.jpg)
কিশোরগঞ্জের বেশির ভাগ ইটভাটায় নারী শ্রমিকদের কাজ করতে দেখা যায়। অনেক নারী নিজেদের ঘরবাড়ি ছেড়ে ইটভাটায় জীবিকার তাগিদে চলে যান দূর-দূরান্তে। অনেকেই আবার সংসার জীবনের মায়ায় পড়ে স্বামী-সন্তান নিয়ে নিজের এলাকার ভাটার ঝুপড়িতেই কাটিয়ে দেন বছরের বেশির ভাগ সময়।
ইটভাটায় যারা কাজ করেন তাদের বলা হয় ‘রেজা’। কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার বৌলাই ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামের নারীরা কাজ করে এলাকার একটি ইটভাটায়। অভাব-অনটনের সংসারে একটু সুখের আশায় স্বামী-স্ত্রী মিলে ইটভাটায় কাজ করেন তারা। অনেকেই আবার দীর্ঘ সময় ধরে করছেন ভাটায় ইট বহনের কাজ।
সরেজমিনে বৌলাই মাহতাবের ইটভাটা নারী শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বছরের ৭ মাস ইটভাটায় কাজ করেন তারা। অক্লান্ত পরিশ্রমের কাজ করতে করতে কোনো ক্লান্তি নেই যেন। দুই বেলা খাবার খেয়ে চলছে ভাটায় ইট তৈরির কাজ। প্রতি শুক্রবার পুরো এক সপ্তাহের বেতন দেওয়া হয়। এক হাজার ইট টানলে পাওয়া যায় ১০০ টাকা। যারা অগ্রিম দাদন নিয়ে নেন, তারা বাড়ি থেকে ইটভাটায় চলে যায় ৭ মাসের জন্য। কেউ কেউ আবার ইটভাটায় থাকছেন বছরের পর বছর।
বৌলাই মাহতাব উদ্দিনের ইটভাটায় কাজ করে ৩০ জন নারী শ্রমিক। সদর উপজেলার বৌলাই ইউনিয়নের কালিকাপ্রাসাদ গ্রামের আওয়ালের স্ত্রী রুমা। স্বামী সন্তানকে নিয়ে একসঙ্গে থাকতে ইটভাটার কাজ করেন বলে জানিয়েছেন এই নারী শ্রমিক। দীর্ঘ চার বছর ধরে ইট তৈরির কাজ করছেন এই নারী। বিয়ের পর সংসারের অভাব-অনটনের কারণেই এই পরিশ্রমের কাজ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। দীর্ঘশ্বাস নিয়ে জানিয়েছেন, ‘আমরার খবর কি কেউ রাখে আফা, আমরা তো গরিব মানুষ। গরিবের খবর কেউ নেয় না।’
একই ইউনিয়নের রাজকুন্তি আজিম বাজার এলাকার মো. ইদ্রিসের স্ত্রী লিপা ইটভাটার শ্রমিক। স্বামী সন্তান নিয়ে ২৮ বছর বয়সী এই নারী তিন বছর ধরে কাজ করে চলছেন। তিন বছরে বাড়েনি বেতন। কিন্তু বেড়েছে সব জিনিসপত্রের দাম। তিনি শুধু ইট আনা-নেওয়ার কাজ করেন। ছোট বাচ্চাকে সঙ্গে নিয়েই ভোর বেলা রান্না করতে হয় তাকে। বাচ্চা আর স্বামীর খাওয়া শেষে অন্য কাজ করে নিজেকে খেতে হয়। এরপর যেতে হয় কাজে। সারা দিন শেষে বিকেলে নাওয়া-খাওয়া শেষে সন্ধ্যায় ঘুম। এমনভাবেই নিত্য কাটছে লিপার সংসার ও কর্মময় জীবন। একই ইউনিয়নের দক্ষিণ কুড়েরপাড় গ্রামের জাহাঙ্গীরের স্ত্রী আসমা। দীর্ঘ ৮ বছর করছেন শ্রমিকের কাজ। সারা দিন কাজ ছাড়া জীবনে আর কিছুই নেই বলে জানিয়েছেন তিনি। নারীদের জীবনে কোনো ক্লান্তি থাকতে নেই বলে আক্ষেপ করে বলেন, ‘আমরা তো সারা দিন কাম করি পেটের দায়ে। সারা দিন কাজ করলেও অহন আর খারাপ লাগে না। অভ্যাসে পরিণত হয়েছে এই কাজ।’
নারী শ্রমিকদের বিষয়ে মহিলা পরিষদের সভাপতি অ্যাডভোকেট মায়া ভৌমিক বলেন, ‘দরিদ্রতায় পিষ্ট হয়ে অনেক নারীরা কাজ করে যাচ্ছে। সমাজ গঠনে নারীদের ভূমিকা অনেক বেশি। নারীদের কাজের ক্ষেত্রকে আরও প্রসারিত করতে হবে। নারীদের কাজের যথাযথ মর্যাদা ও মূল্যায়ন করতে হবে। এ ছাড়া নারী শ্রমিকদের কাজের মূল্যায়ন পুরুষদের সমান হওয়া উচিত।’