![বুড়িমারীবাসীর উচ্ছ্বাসে ভাটা](uploads/2024/03/14/1710393380.burimari.jpg)
দীর্ঘ এক যুগের দাবির ফসল হিসেবে গত মঙ্গলবার চালু হয়েছে ‘বুড়িমারী এক্সপ্রেস’। উদ্বোধনের দিন এটি বুড়িমারী স্টেশন থেকে রাজধানীর উদ্দেশে ছেড়ে গেলেও ট্রেনটির রুট নির্ধারণ করা হয়েছে লালমনিরহাট থেকে। এত অপেক্ষার পর ট্রেনটি চালু হলেও ‘অপ্রাপ্তির কারণে’ উদ্বোধনের উচ্ছ্বাস শেষ পর্যন্ত রূপ নিয়েছে বিষাদে। উদ্বোধন করে ফিরে যাওয়ার পথে রেলওয়ে কর্মকর্তাদের বহনকারী ট্রেন আটকে বিক্ষোভ করেছেন আদিতমারী উপজেলার শতাধিক নাগরিক। পরে সেখানে ট্রেনের যাত্রাবিরতির আশ্বাসে তাদের মুক্তি মেলে। এরপর রাতে ছেড়ে আসা বুড়িমারী এক্সপ্রেস ট্রেন একই দাবিতে প্রায় আধা ঘণ্টা আদিতমারী স্টেশনে আটকে রাখা হয়। কর্তৃপক্ষ তাদের দাবি পূরণে ৪৮ ঘণ্টা সময় চায়।
তবে সবচেয়ে বড় অপ্রাপ্তির বিষয়টি উঠে এসেছে বুড়িমারীবাসীর মুখ থেকে। তারা জানিয়েছেন, ১৩ বছর ধরে তারা যে দাবি জানিয়ে আসছেন, তা পূরণ হয়নি। ট্রেনটি যদি নিয়মিত লালমনিরহাট স্টেশন থেকে ছেড়ে যায়, তাহলে বুড়িমারীবাসীর কোনো উপকারেই আসবে না। প্রায় ১০০ কিলোমিটার দূরের স্টেশনে গিয়ে তাদের আবারও রাজধানীর উদ্দেশে যাত্রা শুরু করতে হবে। এতে তাদের ভোগান্তি বাড়বে। অবিলম্বে তারা বুড়িমারী স্টেশন থেকে ট্রেনটির যাত্রা শুরুর দাবি জানান। যদিও সংশ্লিষ্টদের পক্ষ থেকে মিলেছে শুধুই আশ্বাস। রেলওয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্তার ভাষ্য অনুযায়ী, ঢাকায় গিয়ে তিনি এ বিষয়ে যথাযথ পদক্ষেপ নেবেন! এ ছাড়া উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে লালমনিরহাট-১ আসনের সংসদ সদস্য মোতাহার হোসেন বলেছেন, ‘রেলমন্ত্রী তিন মাস সময় চেয়েছেন। এর মধ্যে বুড়িমারী থেকে এ ট্রেন চলাচল করবে।’
জানা গেছে, ২০১১ সালের ১৯ অক্টোবর লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার দহগ্রাম-আঙ্গরপোতা ও তিনবিঘা করিডর পরিদর্শনে আসেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সে সময়ে তিনি বুড়িমারী থেকে সরাসরি রাজধানী ঢাকায় চলাচলের জন্য একটি আন্তনগর ট্রেন চালুর প্রতিশ্রুতি দেন। ২০১৮ সালের জুনে সাবেক রেলমন্ত্রী মুজিবুল হক আসেন লালমনিরহাট স্টেশনে। সে সময় তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেওয়া প্রতিশ্রুতি দ্রুত বাস্তবায়নের ঘোষণা দেন। পরে ২০২১ সালের নভেম্বরে সাবেক রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন লালমনিরহাট স্টেশন পরিদর্শনে আসেন। সে সময় বুড়িমারী-ঢাকা রুটে আন্তনগর ট্রেন দ্রুত চালু করার প্রতিশ্রুতি দেন। গত মঙ্গলবার দুপুরে ট্রেনটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন সংসদ সদস্য মোতাহার হোসেন, পশ্চিমাঞ্চলীয় রেলওয়ের জিএম অসীম কুমার তালুকদার। উদ্বোধনের দিনেই নানা দাবি নিয়ে ট্রেনটি অবরোধ করে বিক্ষোভসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন জেলাবাসী।
আদিতমারী স্টেশনে আন্দোলনের নেতৃত্বে থাকা ইঞ্জিনিয়ার জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করছি। এই স্টেশনে যাত্রাবিরতি না থাকলে আমাদের কোনো লাভ হবে না। এমনকি আমাদের জন্য কোনো টিকিটও বরাদ্দ থাকবে না। আমাদের দাবি মেনে নেওয়া না হলে আবারও আন্দোলন করা হবে।’
এই ট্রেন চালুর দাবিতে প্রতিষ্ঠিত ‘লালমনিরহাট নাগরিক অধিকার পরিষদ’-এর সাধারণ সম্পাদক তাওহীদুল ইসলাম লিটন বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতিশ্রুতির পরিপ্রেক্ষিতে ট্রেনটি চালু হলেও আমাদের আশা পূরণ হয়নি। এই বাহনটি জেলার পাঁচ উপজেলার মানুষের তেমন উপকারেই আসবে না। আমরা চেয়েছিলাম ট্রেনটি বুড়িমারী পর্যন্ত চলুক। এতে স্থলবন্দর দিয়ে দেশের বাইরে যাতায়াতসহ স্থলবন্দরের আমদামি-রপ্তানি বাড়বে। জেলার অর্থনীতি আরও চাঙা হবে।’
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে পাটগ্রাম উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান রুহুল আমীন বাবুল বলেন, ‘সরাসরি বুড়িমারী থেকে এ ট্রেন চালু করতে হবে। তা না হলে জনগণ এ সিদ্ধান্ত মানবে না।’ একই দাবি করেন বুড়িমারী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি তাহাজুল ইসলাম মিঠু। সরাসরি ট্রেন চালুর ইস্যুতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও জেলাবাসীকে সরব থাকতে দেখা যায়।
এ বিষয়ে পশ্চিমাঞ্চলীয় রেলওয়ের জিএম অসীম কুমার তালুকদার খবরের কাগজকে বলেন, কাঠামোগত উন্নয়ন শেষে বুড়িমারী থেকে ট্রেনটি চলাচলের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। আদিতমারী স্টেশনে অবরুদ্ধ হয়ে তিনি ঢাকায় গিয়ে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ারও ঘোষণা দেন।
রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ জানায়, প্রথমে একটি শাটল ট্রেন বুড়িমারী স্টেশন থেকে ছাড়বে সন্ধ্যা ৬টায়। ২ ঘণ্টার মধ্যে ট্রেনটি লালমনিরহাট পৌঁছাবে। এরপর ‘বুড়িমারী এক্সপ্রেস’ ট্রেনটি রাত ৯টা ১০ মিনিটে লালমনিরহাট থেকে ছেড়ে ঢাকায় পৌঁছাবে সকাল ৭টা ১০ মিনিটে। ঢাকা থেকে সকাল ৮টায় ৫ মিনিটে ছেড়ে লালমনিরহাট পৌঁছাবে সন্ধ্যা ৬টা ১০ মিনিটে। ‘বুড়িমারী এক্সপ্রেস’ ট্রেনের টিকিটে শাটল ট্রেনটিতে যাওয়া-আসা করা যাবে।