![রাঙামাটির লংগদুতে সরকারি জমি দখলের পাঁয়তারা](uploads/2024/03/22/1711082957.Rangamati-BGB-Land.jpg)
বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ রাজনগর ব্যাটালিয়নের (৩৭ বিজিবি) অবস্থান রাঙামাটির লংগদুতে। ১৯৯৪ সাল থেকে ব্যাটালিয়নটি সেখানে তাদের কার্যক্রম চালিয়ে আসছে। কিন্তু ওই এলাকার একটি চক্র তাদের জমি দখলের পাঁয়তারা করছেন। এ ঘটনা শেষ পর্যন্ত গড়িয়েছে আদালতে। এরই মধ্যে মো. আলী নামে এক ব্যক্তি ব্যাটালিয়নের আওতাধীন প্রায় ২০ একর জায়গা নিজের দাবি করে আদালতে মামলা করেছেন।
যদিও রাঙামাটি জেলা প্রশাসকের ভূমি ও রাজস্ব শাখার রেকর্ড বইয়ে মো. আলীর নামে কোনো জমির রেকর্ড লিপিবদ্ধ হওয়ার তথ্য পাওয়া যায়নি। জমাবন্দির কাগজে (ভূমিসংক্রান্ত কাগজ) থাকা স্বাক্ষরও নিজের নয় বলে দাবি করেন রেকর্ড শাখার দায়িত্বে নিয়োজিত কর্মকর্তা গৌরিকা চাকমা। স্থানীয়রা বলছেন, অধিগ্রহণের সরকারি অর্থ হাতিয়ে নিতেই চক্রটি এমন ফাঁদ পেতেছে।
জানা গেছে, ৩৭ বিজিবি ব্যাটালিয়ন আগে লংগদু উপজেলার গুলশালী ইউনিয়ন সদরে ছিল। পরে ১৯৯৪ সালের ১৬ জুলাই একই ইউনিয়নের রাজনগরে স্থানান্তরিত হয়। এ ব্যাটালিয়নের অধীনে রয়েছে প্রায় ১৬০ একর জমি। এর মধ্যে উত্তর পাশে প্রায় ৬০ একর জায়গায় স্থানীয় ৩০টি পরিবার বসবাস করছেন। বাকি ১০০ একরের মধ্যে সাড়ে চৌদ্দ একর বিজিবির নামে অধিগ্রহণ করা রেকর্ডভুক্ত এবং সাড়ে ৮৫ একর জায়গা অধিগ্রহণ প্রক্রিয়াধীন, যা শেষের পথে।
কিন্তু ২০২৩ সালের ৬ জানুয়ারি ব্যাটালিয়নের জমিতে ক্ষুদ্রাস্ত্র ফায়ারিং রেঞ্জ এবং প্রস্তাবিত গ্রেনেড ফায়ারিং রেঞ্জ এলাকায় প্রায় পাঁচ একর জায়গা নিজের দাবি করে রাঙামাটির যুগ্ম জেলা জজ আদালতে চিরস্থায়ী নিষেধাজ্ঞার মামলা করেন মোহাম্মদ আলী। মামলায় রাজনগর ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক ও সহকারী পরিচালককে বিবাদী করা হয়েছে। মামলার কারণে বর্তমানে ৩৭ বিজিবির বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণ ও মাঠ সংস্কার কাজ বন্ধ হয়ে আছে। তবে মামলায় উল্লেখ করা জমির কোনো প্রমাণ উপস্থাপন করতে না পারায় মো. আলীর মামলাটি খারিজ করে দেওয়ার আদেশ দেন আদালত। পরে জেলা জজ আদালতে আপিল করেন তিনি।
মো. আলী লংগদু উপজেলার গাঁথাছড়া ইউনিয়নের মোহাম্মদপাড়ার মৃত সোনা মিয়ার ছেলে। তার দাবি, ওই মামলার পাঁচ একর ছাড়াও বিজিবির ক্যাম্পের ভেতরে তার আরও প্রায় ১৫ একর জায়গা রেকর্ডভুক্ত আছে। এই জমি স্থানীয়দের কাছ থেকে কিনে নিজের নামে, স্ত্রী ও আত্মীয়ের নামে রেকর্ড করেছেন। এ কাজটি লংগদু ভূমি অফিসের একজনকে দিয়ে করিয়েছেন। কিন্তু রাজনগর বিজিবি ওই জায়গা দখল করায় আদালতে মামলা করা হয়েছে। তবে সরকার অধিগ্রহণ করলে ওই জমি বিজিবিকে ছেড়ে দিবেন।
এদিকে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও প্রথাগত মৌজাপ্রধান (হেডম্যান), গ্রামপ্রধানসহ (কারবারি) স্থানীয়রা জানান, মো. আলী ছাড়াও সেখানে তার সঙ্গে আরও কিছু ভূমিদস্যু আছেন, যারা বিজিবির জায়গাসহ বন বিভাগ ও সরকারি খাস জমি দখল দাবি করে কেনা-বেচার বাণিজ্যের সঙ্গে যুক্ত।
গুলশাখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘মো. আলীর এসব কর্মকাণ্ডে বিজিবির সঙ্গে স্থানীয়দের দূরত্ব বাড়ছে। তার কাগজপত্র সব জাল ও ভুয়া।’
গুলশাখালী মৌজা প্রধান (হেডম্যান) আবদুল হালিম বলেন, ‘মো. আলীর দাবি করা জায়গা ১৯৯৪ সাল থেকে রাজনগর বিজিবির ভোগদখলে রয়েছে। এ ব্যাপারে আমি আদালতে প্রতিবেদনও দিয়েছি। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে তিনি আমাকে হুমকিও দিয়েছেন।’
স্থানীয় কারবারি মো. জয়নাল আবদীন বাবুল ও প্রীতি লাল চাকমা বলেন, ‘সরকারি খাস জমি নিজের দাবি করে মো. আলী যে মামলা করেছেন তা অহেতুক। মূলত তিনি অধিগ্রহণের জন্য মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিতে মামলা করেছেন বলে আমরা মনে করি।’
রাজনগর বিজিবি জোনের হাবিলদার আবদুর রউফ বলেন, ‘মো. আলী, মাসুদসহ কিছু ব্যক্তি বিজিবির জায়গা দখলের পাঁয়তারা করছেন। মো. আলী বিজিবির বিরুদ্ধে আদালতে অহেতুক মামলা দিয়েছেন। কিন্তু জমির রেকর্ড-প্রমাণ উপস্থাপন করতে না পারায় আদালত ওই মামলা খারিজ করে দেওয়ার আদেশ দিয়েছেন।’
রাঙামাটি জেলা প্রশাসক মোশারফ হোসেন খানের কাছে মো. আলীর জবানবন্দির কপি উপস্থাপন করা হলে, তা যাচাইয়ের জন্য ভূমি ও রাজস্ব শাখায় পাঠানো হয়। ওই শাখার দায়িত্বে থাকা গৌরিকা চাকমা তাৎক্ষণিক বিষয়টি যাচাই করলে রেকর্ড বইয়ে মো. আলীর নামে কোনো জমির রেকর্ড লিপিবদ্ধের তথ্য পাননি। এমনকি মো. আলীর জবানবন্দি কাগজে থাকা গৌরিকা চাকমার স্বাক্ষরও নিজের নয় বলে দাবি করেন তিনি।