![ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে চায় না মানুষ](uploads/2024/05/26/khulna-1716698559.jpg)
অবকাঠামোগত সমস্যা, নিরাপত্তাহীনতা, দূরবর্তী অবস্থান, থাকা-খাওয়ার অসুবিধাসহ নানা অব্যবস্থাপনায় খুলনার উপকূলীয় ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে চায় না মানুষ। ফলে প্রতিটি ঝড়-জলোচ্ছ্বাসে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় অবস্থান করা মানুষ ও গৃহপালিত প্রাণীর ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া যায়।
গতকাল শনিবার বিকেলে খুলনার কয়রার শাকবাড়িয়া স্কুল অ্যান্ড কলেজ কাম সাইক্লোন শেল্টার, কয়রা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কাম সাইক্লোন শেল্টার, মনোরমা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কাম সাইক্লোন শেল্টার ঘুরে দেখা যায়, ঘূর্ণিঝড়ের খবরে সাইক্লোন শেল্টারের কক্ষ, ভবনের নিচের তলার ফাঁকা অংশ ও বাথরুমগুলো পরিষ্কার করা হচ্ছে। তবে কোথাও সাইক্লোন শেল্টারে আশ্রয় নিতে কাউকে দেখা যায়নি।
জানা যায়, ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষয়ক্ষতি মোকাবিলায় কয়রা, দাকোপ ও পাইকগাছা উপজেলায় ৬০৪টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এসব আশ্রয়কেন্দ্রে ৩ লাখ ১৫ হাজার মানুষ থাকতে পারবে। ৪ নম্বর বিপদসংকেত জারি হলে এলাকায় মাইকিং করে মানুষকে আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে বলা হবে। ৫ হাজার ২৮০ জন স্বেচ্ছাসেবককে প্রস্তুত থাকতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তবে এখনো আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার ক্ষেত্রে আগ্রহ দেখা যায়নি কোথাও।
কয়রার আমাদী ইউনিয়ন পরিষদের মহিলা সদস্য মাহমুদা বেগম জানান, আশ্রয়কেন্দ্রে অবকাঠামো সমস্যা, দূরবর্তী অবস্থান, থাকা-খাওয়ার অসুবিধায় সেখানে যেতে চায় না মানুষজন। আশ্রকেন্দ্রে তাদের গরু-ছাগল-ভেড়া, হাঁস-মুরগি রাখার কোনো ব্যবস্থা নেই। বাড়ি ছেড়ে আশ্রয়কেন্দ্রে গেলে সহায়-সম্বল চুরি হওয়ার ভয় থাকে। মেয়েরা আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে ভয় পান মূলত নিরাপত্তার অভাবে। এসব কারণে আশপাশে কারও বাড়িতে পাকা ভবন থাকলে সেখানেই আশ্রয় নিতে চেষ্টা করেন।
একইভাবে উত্তর বেতকাশি ইউনিয়ন পরিষদের মহিলা সদস্য শাহনাজ আক্তার জানান, আশ্রয়কেন্দ্রে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন বা অনেক ক্ষেত্রে পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা থাকে না। বিশেষ করে নারীদের জন্য একটি বা দুটি বাথরুম থাকে। সেখানে গর্ভবতী মা থাকে, প্রতিবন্ধী থাকে। অপরচ্ছিন্ন পরিবেশে নারী ও শিশুদের নিয়ে ২০ থেকে ৩০ ঘণ্টা সময় সেখানে কাটানো খুব কষ্টকর। ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্রগুলোর অব্যবস্থাপনা দূর করে প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় মানুষের নিরাপদ আশ্রয়স্থল হিসেবে গড়ে তোলার দাবি জানান তিনি।
এদিকে ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষয়ক্ষতি মোকাবিলায় স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবক আক্তারুল ইসলাম বলেন, এ অঞ্চলে সাধারণত জরোচ্ছ্বাস বেশি হয়। পানি বাড়লে ওই সময় বাড়িতে কেউ থাকলে তারা মালামাল সরিয়ে উঁচু স্থানে রাখতে পারেন। এ ছাড়া অনেক সময় ঝড়-জলোচ্ছ্বাস আসবে বললেও শেষ পর্যন্ত কিছুই হয় না। ফলে অনেকে ধারণা করেন, এবারও ঝড়-জলোচ্ছ্বাসে ক্ষয়ক্ষতি হবে না।
তবে খুলনা জেলা প্রশাসক খন্দকার ইয়াসির আরেফীন জানান, ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলার জন্য ৬০৪টি সাইক্লোন শেল্টার প্রস্তুত রাখা হয়েছে। যাতে পরিস্থিতি অনুযায়ী ঝুঁকিপূর্ণ লোকজন সেখানে আশ্রয় নিতে পারে, সেই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। প্রয়োজনীয় শুকনো খাবার, ওষুধ, ঢেউটিন ও নগদ টাকা প্রস্তুত রাখা হয়েছে।