![মালয়েশিয়ার ফ্লাইট বাতিল, বাড়ি ফেরার পথে যুবক নিখোঁজ](uploads/2024/06/02/malaysia-1717304764.jpg)
মালয়েশিয়া যাওয়ার ফ্লাইট বাতিল হওয়ার পর পরবর্তী সময়ে যাত্রার তারিখ জেনে নিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় নিজের বাড়ি ফিরে যাচ্ছিলেন মো. সোহেল তানভীর (১৯)। কিন্তু কিশোরগঞ্জের ভৈরবের মেঘনা নদীতে চলন্ত ট্রেন থেকে পড়ে গিয়ে নিখোঁজ হন তিনি। গত শুক্রবার বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে ভৈরবের রেলসেতু পাড়ি দেওয়ার সময় তিনি ট্রেন থেকে পড়ে যান।
শনিবার (১ জুন) সকাল ৬টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল নদীতে উদ্ধার অভিযান চালিয়েও সেই নিখোঁজ যুবকের সন্ধান পায়নি।
ভৈরব ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন অফিসার আজিজুল হক রাজন ও ভৈরব নৌ-থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. মনিরুজ্জামান খবরের কাগজকে এসব তথ্য জানান। তানভীরকে উদ্ধার না করা পর্যন্ত উদ্ধার অভিযান অব্যাহত থাকবে বলে তারা জানিয়েছেন।
নিখোঁজ তানভীর ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া উপজেলার দেবগ্রামের মেরাজ আলীর ছেলে। জানা গেছে, মো. সোহেল তানভীরের শুক্রবার ভোর ৪টায় মালয়েশিয়ায় যাওয়ার কথা ছিল, কিন্তু যাত্রাটি বাতিল হয়ে আগামী ৭ জুন পরবর্তী তারিখ নির্ধারণ হয়। বাবা মেরাজ আলীসহ বিমানবন্দর রেলস্টেশন থেকে নোয়াখালীগামী উপকূল এক্সপ্রেসে বাড়ি ফিরছিলেন তিনি। ট্রেনটি বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে ভৈরবের শহিদ হাবিলদার আব্দুল হালিম রেলসেতু অতিক্রম করার সময় বাবার পাশ থেকে উঠে গিয়ে ট্রেনের দরজার কাছে দাঁড়িয়েছিলেন তানভীর। একপর্যায়ে ট্রেন থেকে নদীতে পড়ে যান তিনি।
তানভীরের বাবা মেরাজ আলী গতকাল বিকেলে খবরের কাগজকে বলেন, ‘এক সপ্তাহ পরে তার মালয়েশিয়া যাওয়ার কথা ছিল। ঢাকা থেকে আমরা একসঙ্গে ফিরে আসার পথে আমার ছেলে ট্রেন থেকে পড়ে যায়। সে বলছিল, আব্বা আমার গরম লাগছে একটু দরজায় গিয়ে দাঁড়াই। কিন্তু এখন তো আমার সব স্বপ্ন শেষ। ২৫ ঘণ্টা পার হয়ে গেল, এখনো ছেলেটার কোনো খোঁজ পাইনি।’
এদিকে গতকাল বিকেলে তানভীরের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় শোকের মাতম চলছে। মা তানভীরের নাম করে কান্নায় ভেঙে পড়ছেন। শোকে বাড়িতে থাকা আত্মীয়স্বজনরাও যেন বাকরুদ্ধ। গত পাঁচ মাসে কয়েকবার তারিখ ঠিক হওয়ার পরও বিদেশ যেতে না পারায় অনেকটা মানসিক যন্ত্রণায় ভুগছিলেন তানভীর সোহেল। প্রায় ৯ মাস আগে তানভীরকে মালয়েশিয়া পাঠানোর কথা বলে আখাউড়ার মোগড়া ইউনিয়নের টানুয়াপাড়ার আলমগীর ও মহসিন ৬ লাখ ৫০ হাজার টাকা নেন। মেডিকেল করার পর তারা ১৮ জানুয়ারি ফ্লাইটের তারিখ দেন। কিন্তু পরবর্তী সময়ে তারা আরও কয়েকটি তারিখ দেন। বারবার যাত্রা পিছিয়ে যাওয়ায় তানভীর অনেকটা ভেঙে পড়েন। এরপর অনেকবার যোগাযোগ ও চাপ দেওয়ার পর সর্বশেষ ৩১ মে ভোরের ফ্লাইটে পাঠানোর সময় ঠিক করে দেন তারা। কিন্তু শুক্রবার আবারও ফ্লাইট পিছিয়ে যাওয়ায় তানভীর তার খালা জান্নাতুল ফেরদৌসকে ফোন করে হতাশার কথা বলেন।
তিনি বিষণ্ণ ছিল উল্লেখ করে জান্নাতুল বলেন, “আমাকে ফোন করে বলে, ‘খালা এবারও হলো না। না জানি কপালে কী দুঃখ আছে।’ তখন তাকে আমি সান্ত্বনা দিয়ে বলি, এবার না হয়েছে তো কী হয়েছে, আবার হবে। পরে আমি ট্রেনের টিকিটের ব্যবস্থা করে দিলে তারা বাড়ির উদ্দেশে রওনা দেয়। কিন্তু এরপর শুনি আমার ভাগ্নে ট্রেন থেকে পড়ে মারা গেছে।” তিনি আরও বলেন, ‘আমরা যেন আমার ভাগ্নের লাশ ফেরত পাই। আর এই দালালদের যেন বিচার হয়। তাদের জন্যই আমার বোনের ছেলেকে হারালাম।’
ভৈরব নৌ-থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. মনিরুজ্জামান খবরের কাগজকে বলেন, ‘গতকাল থেকে নৌ-পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের যৌথ অভিযান চলছে। মেঘনা নদীতে প্রচণ্ড স্রোত থাকার কারণে নিখোঁজ যুবকের সন্ধান এখনো পাওয়া যায়নি। লাশ খুঁজে পেতে আমাদের অভিযান চালিয়ে যাচ্ছি।’