![লালমনিরহাটে ছাত্রলীগ সভাপতির বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগ](uploads/2024/06/12/Rashed_Zaman-1718209163.jpg)
লালমনিরহাট জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি রাশেদ জামান বিলাশের বিরুদ্ধে আইয়ুব আলী নামে এক গরু ব্যবসায়ীকে মারধর করে চাঁদা আদায়ের অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় বিলাশকে প্রধান আসামি করে ছয়জনের বিরুদ্ধে লালমনিরহাট সদর থানায় লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়েছে। গত সোমবার (১০ জুন) রাতে থানায় লিখিত অভিযোগ দেন ওই ব্যবসায়ী।
গরু ব্যবসায়ী আইয়ুব আলী (৪৮) জেলার আদিতমারী উপজেলার ভেলাবাড়ি এলাকার বাসিন্দা। অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতা রাশেদ জামান লালমনিরহাট পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা। অভিযুক্ত অন্য চারজন হলেন পৌর এলাকার বালাটারী এলাকার মো. সৌরভ ওরফে টেরা (৩০), ক্যানটিন মোড় এলাকার মো. রায়হান (২৮), বত্রিশহাজারী এলাকার মো. রব্বানী (৩৫), খোর্দ্দসাপটানা এলাকার মো. বাবু (৩৪) ও জেলা পরিষদ মোড় এলাকার মো. তুষার (২৫)। তারা ছাত্রলীগ নেতা রাশেদের পূর্বপরিচিত।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী গত রবিবার বেলা ২টার দিকে জেলা জজ আদালতে হাজিরা দিয়ে বের হওয়ার পর তিনটি মোটরসাইকেল নিয়ে এসে তার পথ রোধ করেন অভিযুক্তরা। জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি মো. রাশেদ জামানের কথামতো তারা বলেন, ‘ভাই, আপনি তো গরুর ব্যবসা করেন, ছাত্রলীগের সভাপতি বিলাশ ভাই আপনাকে চা খাওয়ার দাওয়াত দিছেন।’ তখন অভিযুক্ত সৌরভ তাকে মোটরসাইকেলে তুলে লালমনিরহাট সরকারি কলেজে নিয়ে যান। এভাবে নিয়ে আসার কারণ জানতে চাইলে অভিযুক্ত ব্যক্তিরা তাকে রশি দিয়ে হাত-পা বেঁধে ফেলেন। কিছুক্ষণ পর ছাত্রলীগ নেতা রাশেদ সেখানে উপস্থিত হয়ে তার কাছে আড়াই লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। কিসের টাকা, জিজ্ঞাসা করতেই তারা এলোপাতাড়ি মারধর করেন এবং পাঞ্জাবির পকেটে থাকা ২০ হাজার টাকা ছিনিয়ে নেন।
অভিযোগে আরও বলা হয়, মারধরের একপর্যায়ে ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী চাঁদার টাকা দিতে রাজি হন এবং তার স্ত্রীকে ২ লাখ ৩০ হাজার টাকা নিয়ে আসতে বলেন। এরপর রাশেদের নির্দেশমতো ওই ব্যবসায়ীকে আবার মোটরসাইকেলে তুলে শহরের ক্যানটিন মোড়ে ছাত্রলীগ নেতার ব্যক্তিগত কার্যালয়ে নিয়ে যান। সেখানে নিয়ে তাকে আরেক দফা মারধর শুরু করলে ওই ব্যবসায়ী ছাত্রলীগ নেতার পা ধরে মারধর না করতে অনুরোধ করেন। তখন রাশেদ তাকে দ্রুত টাকার ব্যবস্থা করতে বলেন। টাকা না দিলে মাদক দিয়ে পুলিশে তুলে দেওয়ার ভয় দেখান। এরপর বিকেল ৪টার দিকে ভুক্তভোগী ব্যবসায়ীর ছেলে ২ লাখ ২০ হাজার টাকা নিয়ে সেখানে এলে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়। এ সময় রাশেদ তাকে হুমকি দিয়ে বলেন, ‘আজকে তোকে প্রাণে ছেড়ে দিলাম। তুই যদি এ নিয়ে বাড়াবাড়ি করিস বা আইনের আশ্রয় নিস, তাহলে তোকে সময়মতো পেলে প্রাণে শেষ করে দেব।’
তবে অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতা রাশেদ জামান চাঁদা নেওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, ওই দিন (রবিবার) দুপুরে সরকারি কলেজের একজন শিক্ষক তাকে ফোন করে জানান, বহিরাগত ব্যক্তিরা কলেজে কাকে যেন ধরে এনেছে। হট্টগোল হচ্ছে। তিনি যেন সেখানে যান। এরপর তিনি কলেজে গিয়ে দেখেন, তার পরিচিত ও এলাকার কিছু ছোটভাই একজনকে কলেজে ধরে এনেছেন। তারা নাকি ওই ব্যক্তির কাছে টাকা পান, কিন্তু তিনি টাকা দেন না। তখন তিনি তাদের কলেজের বাইরে অন্য কোথাও নিয়ে সমস্যার সমাধান করার কথা বলেন। এরপর তারা লোকটাকে নিয়ে কলেজের বাইরে চলে যান। এর বাইরে তিনি কিছু জানেন না। তার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ সত্য নয়।
এ বিষয়ে গরু ব্যবসায়ী আইয়ুব আলী বলেন, ‘ছাত্রলীগ সভাপতি বিলাশ মনে করেছে, আমি ভারতীয় গরুর ব্যবসা করি। তাই ঈদ সামনে রেখে লোকজন দিয়ে আমাকে আটক করে। কিছু বুঝে ওঠার আগেই মোটরসাইকেলে তুলে কলেজে ও তার চেম্বারে নিয়ে মারধর করে। মাদক মামলায় ফাঁসানোর হুমকি দিয়ে ২ লাখ ৪০ হাজার টাকা চাঁদা আদায় করেছে। আমি অবৈধ গরুর ব্যবসায়ী হলে কি থানায় অভিযোগ করতাম? ’
সদর থানার ওসি মো. ওমর ফারুক খবরের কাগজকে অভিযোগের বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ‘জেলা ছাত্রলীগের সভাপতির বিরুদ্ধে থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন গরু ব্যবসায়ী। পুলিশ তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেবে। তবে ওই ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে মাদক মামলাসহ ৯টি মামলা রয়েছে।’