![সিলেটে বৃষ্টিতে আবারও বাড়ছে নদ-নদীর পানি](uploads/2024/06/13/Sylhet-1718277596.jpg)
সিলেটে বৃহস্পতিবার (১৩ জুন) ভোররাত থেকে শুরু হয় বজ্রসহ বৃষ্টিপাত। ভারী বৃষ্টির সঙ্গে প্রকট বজ্রের শব্দে ঘুম ভাঙে নগরীর বাসিন্দাদের। এতে নগরীর বিভিন্ন এলাকায় তৈরি হয় জলাবদ্ধতার। পাশাপাশি ভারতের চেরাপুঞ্জি ও সিলেটে টানা বৃষ্টির কারণে বাড়তে শুরু করেছে নদ-নদীর পানি।
বৃহস্পতিবার (১৩ জুন) সকাল ৬টা থেকে ৯টা পর্যন্ত জেলায় ১০৫ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে। কুশিয়ারা নদীর ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্ট ছাড়া অন্য নদ-নদীর পানি বিপৎসীমার নিচে অবস্থান করছে। ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ৪৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
এদিকে আজ থেকে আগামী টানা তিন দিন এ অঞ্চলে ভারী বৃষ্টিপাতের আভাস দিয়েছে সিলেট আবহাওয়া অফিস। পাশাপাশি জেলাজুড়ে বজ্রসহ ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানানো হয়েছে।
সিলেট আবহাওয়া অফিসের তথ্যমতে, সিলেটে গত ২৪ ঘণ্টায় (বুধবার সকাল ৬টা থেকে বৃহস্পতিবার সকাল ৬টা পর্যন্ত) বৃষ্টিপাত হয়েছে ৪ দশমিক ৬ মিলিমিটার। আজ সকাল ৬টা থেকে ৯টা পর্যন্ত ১০৫ মিলিমিটার এবং সকাল ৯টা থেকে ১২টা পর্যন্ত বৃষ্টিপাত হয়েছে ৮১ মিলিমিটার। এর মধ্যেই বজ্রপাত নিয়ে সর্তক করেছে আবহাওয়া অফিস।
সিলেট আবহাওয়া অধিদপ্তরের সহকারী আবহাওয়াবিদ শাহ মো. সজীব হোসাইন বলেন, ‘সিলেটে আজ সকাল থেকে যে বৃষ্টিপাত শুরু হয়েছে তা অব্যাহত থাকবে তিন দিন। সিলেটের আকাশে বর্তমানে বজ্রমেঘের অবস্থান আছে। এটা কেটে যেতে সময় লাগবে। তাই সবাইকে বজ্রপাত থেকে সাবধান থাকতে হবে।’
এদিকে, সিলেটের এই দুর্যোগ পরিস্থিতি বিবেচনা করে যেকোনো উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য কর্মকর্তাদের প্রস্তুত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক শেখ রাসেল হাসান।
এক খুদে বার্তায় তিনি বলেন, ‘গতকাল বুধবার থেকে আজ দুপুর ১২টা পর্যন্ত চেরাপুঞ্জি ও সিলেট মিলিয়ে মোট বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ৫৩৫ মিমি। আরও বেশিও হতে পারে এবং আরও বৃষ্টি হওয়ার পূর্বাভাস পাওয়া যাচ্ছে।’
পানি উন্নয়ন বোর্ডের সিলেট কার্যালয়ের তথ্যমতে, বর্ষাকালে সুরমা নদীর কানাইঘাট এলাকার ডেঞ্জার লেভেল ১২.৭৫ সেন্টিমিটার। গতকাল এই পয়েন্টে নদীর পানি ছিল ১১.৬০ সেন্টিমিটার। আজ বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টায় এই পয়েন্টে পানি ছিল ১২.৩৭ সেন্টিমিটার। সিলেট পয়েন্টে সুরমা নদীর ডেঞ্জার লেভেল ১০.৮০ সেন্টিমিটার। গতকাল এই পয়েন্টে নদীর পানি ছিল ৯.৫৮ সেন্টিমিটার। আজ দুপুর ১২টায় এই পয়েন্টে পানি ছিল ১০.১১ সেন্টিমিটার।
কুশিয়ারা নদীর আমলশিদ পয়েন্টে পানির ডেঞ্জার লেভেল ১৫.৪০ সেন্টিমিটার। গতকাল এই পয়েন্টে নদীর পানি ছিল ১৩.৫৭ সেন্টিমিটার। আজ দুপুর ১২টায় এই পয়েন্টে পানি ছিল ১৩.৪৪ সেন্টিমিটার। কুশিয়ারা নদীর ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টে পানির ডেঞ্জার লেভেল ৯.৪৫ সেন্টিমিটার। গতকাল এই পয়েন্টে পানি ছিল ৯.৯১ সেন্টিমিটার। আজ দুপুর ১২টায় এই পয়েন্টে পানি ছিল ৯.৯৩ সেন্টিমিটার। সারি নদীর সারিঘাট পয়েন্টে ডেঞ্জার লেভেল ১২.৩৫ সেন্টিমিটার। গতকাল এই পয়েন্টে নদীর পানি ছিল ১০.২০ সেন্টিমিটার। আজ দুপুর ১২টায় এই পয়েন্টে পানি ছিল ১১.৫১ সেন্টিমিটার।
সারিগোয়াইন নদীর গোয়াইনঘাট পয়েন্টে ডেঞ্জার লেভেল হল ১০.৮২ সেন্টিমিটার। গতকাল এই পয়েন্টে নদীর পানি ছিল ৯.১৪ সেন্টিমিটার। আজ দুপুর ১২টায় এই পয়েন্টে পানি ছিল ৯.৫২ সেন্টিমিটার। ডাউকি নদীর জাফলং পয়েন্টে ডেঞ্জার লেভেল ১৩.০০ সেন্টিমিটার। গতকাল এই পয়েন্টে নদীর পানি ছিল ৯.২৯ সেন্টিমিটার। আজ দুপুর ১২টায় এই পয়েন্টে পানি ছিল ১০.১৭ সেন্টিমিটার।
পানি উন্নয়ন বোর্ড সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী দীপক রঞ্জন দাস খবরের কাগজকে বলেন, ‘এই বর্ষা মৌসুমে বৃষ্টিপাত হলে বন্যার আশঙ্কা তো অবশ্যই থাকে। তা ছাড়া আমাদের নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পায় মূলত উজান থেকে নেমে আসা ঢলের কারণে। ভারতের চেরাপুঞ্জিতে বৃষ্টিপাত হচ্ছে। তাই উজানের ঢলে আমাদের নদ-নদীর পানি বাড়তে শুরু করেছে। পাশাপাশি সিলেটেও ভারী বৃষ্টিপাত হচ্ছে। তার ওপর গত মাসের বন্যার কারণে ইতোমধ্যে সিলেটের নদ-নদীতে পানি বেশি আছে। এখন যেহেতু এখানেও বৃষ্টিপাত হচ্ছে, আবার ভারতে বৃষ্টিপাত হচ্ছে তাই নদ-নদীর পানি দ্রুতই বৃদ্ধি পাবে। এজন্য আমাদের বন্যা মোকাবিলায় প্রস্তুত থাকতে হবে।’
শাকিলা ববি/সালমান/