![পাইকগাছার দেলুটি ইউনিয়ন, বিধ্বস্ত উপকূলে ঘুরে দাঁড়ানোর লড়াই](uploads/2024/06/22/khulna-rimel-Effect-1719029765.jpg)
ঘূর্ণিঝড় রিমাল তাণ্ডবের ক্ষত এখনো বয়ে বেড়াচ্ছেন বিধ্বস্ত উপকূলীয় এলাকার মানুষ। গত ২৬ মে রাতে ঘূর্ণিঝড়ে খুলনার পাইকগাছা, কয়রা ও দাকোপের ৩৫টি পয়েন্টে বেড়িবাঁধ ভেঙে প্লাবিত হয় গ্রামের পর গ্রাম। লবণ-পানিতে নষ্ট হয়েছে ফসলি জমি, মাছের ঘের। ভেঙে পড়েছে বসতবাড়ি, গ্রামীণ কাঁচা রাস্তা, যোগাযোগ ব্যবস্থা। সব হারানো মানুষের কাছে বেঁচে থাকাটাই এখন যেন ঈদ আনন্দের মতো।
পাইকগাছার দেলুটি ইউনিয়নে তেলিখালী পয়েন্টে বেড়িবাঁধ ভেঙে আশপাশের কয়েকটি গ্রাম প্লাবিত হয়। ইউনিয়নের প্যানেল চেয়ারম্যান রামচন্দ্র টিকাদার জানান, তেলিখালী গ্রামের ২২৯টি পরিবারের কেউ এবার কোরবানি দিতে পারেননি। তাদের ঈদ কেটেছে আনন্দহীন। একই ইউনিয়নের গোপিপাগলা, ফুলবাড়ি গ্রামের অনেক বাড়ির আঙিনা, ফসলের মাঠ, মাছের ঘের লবণ-পানিতে তলিয়ে রয়েছে। ইউনিয়নের হাটবাড়ি, খেজুরতলা, সেনেরবেড় গ্রামের অবস্থাও প্রায় একই রকম। স্থানীয় ৮নং ওয়ার্ড ইউপি সদস্য রিংকু রায় বলেন, লবণ-পানিতে ফসল তলিয়ে যাওয়ায় উপকূলের মানুষের দিন কাটছে কষ্টে। প্রতিবছর বাঁধ ভাঙলে দুর্বিষহ জীবন শুরু হয়। এবার ঈদের দিন গরু, ছাগল কোরবানি করা তো দূরে থাক, অনেকে ভালো খাবারও খেতে পারেননি।
এদিকে গত বুধবার বেসরকারি সংস্থা ‘ওব্যাট হেলপার্স’ দেলুটি ইউনিয়নের তেলিখালী গ্রামের ২২৯টি পরিবার, হাটবাড়ি, খেজুরতলা গ্রামের ৫৬টি পরিবার ও কয়রার দশহালিয়া গ্রামের ৫০টি পরিবারের মাঝে কোরবানির মাংস বিতরণ করে। মাংসবাহী ট্রাক দেখে দুর্গত এলাকার নারী-পুরুষরা গ্রামের একমাত্র পাকা সড়কে উঠে আসেন। তারা কোরবানির মাংস পেয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন।
দেলুটি ইউনিয়নের সংরক্ষিত নারী ইউপি সদস্য মেরী রানী সরদার বলেন, ‘সড়কে কোনো ট্রাক দেখলেই সরকারি-বেসরকারি সহায়তার আশায় মানুষজন ছুটে আসছেন। টেকসই বেড়িবাঁধ না থাকায় এখানকার মানুষ জীবনযুদ্ধে কখনো ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি। একটি দুর্যোগের পর যখনই তারা নিজেদের গুছিয়ে নেন, তখনই আরেকটি দুর্যোগ তাদের সবকিছু কেড়ে নেয়। জনপ্রতিনিধি হিসেবে ঈদের দিন আমি গ্রামের মানুষের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেছি। কারও মুখেই ঈদের আনন্দ ছিল না। কেউ ছেলে-মেয়ের দিকে তাকিয়ে সামান্য ব্রয়লারের মুরগি রান্না করেছেন। তবে বেশিরভাগ মানুষের সেই সামর্থ্যটুকুও ছিল না। খেয়ে না খেয়ে দিন পার করেছেন তারা।’
দেলুটি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রিপন কুমার মণ্ডল জানান, প্রাকৃতিক দুর্যোগে বারবার ফসলহানির কারণে এখানকার কৃষিভিত্তিক অর্থনীতি পাল্টে গেছে। একই সঙ্গে কৃষিনির্ভর সাধারণ মানুষ দীর্ঘস্থায়ী অর্থনৈতিক সংকটে পড়েছেন।