![লাখ টাকার লটকন বিক্রির স্বপ্ন শ্রীপুরের জাকারিয়ার](uploads/2024/07/04/gazipur-lotkon-1720081204.jpg)
গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার তেলিহাটীর তালতলা গ্রামের চাষি ডা. আবুল অফা জাকারিয়া এবার লাখ টাকার লটকন বিক্রির স্বপ্ন দেখছেন। তার বাগানে ঘন সবুজ পাতার ভেতরে ডালপালা ফেটে বের হওয়া বোঁটায় ঝুলছে অসংখ্য রসালো লটকন। কোনো গাছে ঝুলছে সবুজ লটকন, আবার কোনো গাছে ঝুলছে হলুদ বর্ণের পাকা লটকন। স্থানীয়রা বলছেন, তাকে দেখে অনেকেই এলাকায় লটকনের বাগান করেছেন। আগামীতে তেলিহাটীর তালতলা লটকনের গ্রাম হিসেবে পরিচিতি লাভ করবে।
তিনি হোমিও চিকিৎসকের পাশাপাশি একজন সফল চাষি হিসেবেও এলাকায় তার পরিচিতি রয়েছে। নিজ জমিতে দুই যুগের বেশি সময় লেবু চাষ করেছেন। লেবুর ফলন ভালো হলেও উৎপাদন ব্যয়ের বিপরীতে ভালো দামে বিক্রি না হওয়ায় সাত বছর আগে লেবুগাছ কেটে ফেলেন। এরপর শুরু করেন লটকনের চাষ। নরসিংদী থেকে লটকনের চারা সংগ্রহ করে পরিচর্যা শুরু করেন। চার বছরের মাথায় ৫০০ কেজি লটকন উৎপাদন হয়। পরের বছর ৭০০ কেজি এবং চলতি বছর ১ হাজার কেজি ফলনের স্বপ্ন দেখছেন তিনি।
চলতি বছর প্রায় ১০০ লটকনগাছ থেকে লক্ষাধিক টাকা আয় করার স্বপ্ন দেখছেন আবুল অফা জাকারিয়া। পরিশ্রম ও পরিচর্যায় চার বছরের মাথায় ফলন পেতে শুরু করেন। এ বছর তিনি তৃতীয়বারের মতো ফলন পেতে যাচ্ছেন। তার বাগান দেখে আশপাশের এলাকার শতাধিক চাষি ইতোমধ্যে লটকনের চাষ শুরু করেছেন। লটকনচাষিরা মনে করেন, আগামীতে তেলিহাটীর তালতলা গ্রাম লটকনের গ্রাম হিসেবে পরিচিতি লাভ করবে।
এ বিষয়ে চাষি আবু ইউসুফ জানান, ডা. জাকারিয়ার বাগান দেখে উৎসাহিত হয়ে তিনি নিজেও লটকনের বাগান করেছেন। তালতলা গ্রামে লটকনের চাষ ভালো হয়। একসময় তালতলা গ্রাম লটকনের গ্রাম হিসেবে চিহ্নিত হবে।
কৃষি শ্রমিক রহমত আলী বলেন, ‘জাকারিয়া ভাই লটকনগাছ লাগানোর পর থেকে পরিচর্যা করছেন। ফলনের পর গাছের পাতা ফেলে দেন। তারপর সার, ওষুধ সব প্রয়োগ করেন। ফলনের আগে ডালপালা কাপড় দিয়ে ঘষামাজা করে দেন। এতে ভালো ফলন হয়।’
চাষি সাফায়েত হোসেন বলেন, ‘বাগানটা খুব সুন্দর। আমরা দেখতে আসি। এলাকা ও আশপাশের অনেকে দেখতে আসেন। অনেকে উৎসাহিত হয়ে বাগান করেছেন। অনেকে চাষের পদ্ধতি সম্পর্কেও জানতে আসেন।’
চাষি ডা. আবুল অফা জাকারিয়া বলেন, ‘আমি প্রথমে এ বাগানে ২৫০টি লেবুর গাছ লাগিয়েছিলাম। যখন দেখলাম ১০০ বস্তা লেবু বিক্রি করে বস্তাপ্রতি ১০০ টাকাও পাই না, তখন আমি লেবুগাছ কেটে লটকনগাছ লাগিয়েছি। এখন আমি লাভবান হচ্ছি। এ বছর ইতোমধ্যে একটি গাছ থেকে ২০ কেজি লটকন নামিয়ে ২ হাজার টাকায় বিক্রি করেছি। আগামী ১৫ দিন পর পুরোদমে লটকন পাকা শুরু হবে।’
তিনি বলেন, ‘সাত বছর আগে নরসিংদী থেকে লটকনের চারা নিয়ে আসি। প্রথমে ১০০, পরের বছর আরও ১০০ এবং সর্বশেষ আরও ১০০টি চারা আনি। এ বছর ১ হাজার কেজি ফল বিক্রি করতে পারব। দিন যত যাবে, ফলন তত বাড়বে। গাছ পরিপক্ব করতে যত্ন নিতে হয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘এ পর্যন্ত আমাকে দেখে কমপক্ষে ১০০ লোক লটকনের বাগান করেছেন। অনেকে পরামর্শ নেন। তারা বেশির ভাগ নরসিংদী থেকে লটকনের চারা নিয়ে এসেছেন। পরিশ্রম কম হলেও শিডিউল মেনে বাগানের পরিচর্যা, সার ও কীটনাশক প্রয়োগ করলে ভালো ফলন আসে।’
শ্রীপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ সুমাইয়া সুলতানা বলেন, ‘শ্রীপুর লটকন চাষের জন্য উপযোগী। এবার উপজেলায় ৮ একর জমিতে লটকনের চাষ হয়েছে। কৃষকদের পরামর্শ ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে লটকন চাষে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। কলমের মাধ্যমে চারা রোপণের জন্য উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে।’ সূত্র: বাসস