আড়ত ভরা পেঁয়াজ। তার পরও সপ্তাহের ব্যবধানে দাম বেড়েছে। পাইকারিতেই ৯৬-৯৮ টাকা কেজি। সেই পেঁয়াজ খুচরা বাজারে ১০৫ টাকা হয়ে গেছে। আড়তে আলুর মজুত বাড়লেও আগের মতোই ৬০-৬৫ টাকা কেজি। মোটা চালের দামও কেজিতে ৩-৫ টাকা বেড়েছে। বেগুনসহ প্রায় সবজির দামও ঊর্ধ্বমুখী। কেজিতে ১০-২০ টাকা বেড়েছে। ভোক্তা অধিদপ্তর বলার পরও কমেনি ডিমের দাম। আগের মতোই ডজন ১৫০-১৬৫ টাকা। তবে পোলট্রি মুরগির কেজিতে ১০ টাকা কমে ১৭০ টাকা কেজিতে নেমেছে। আদা-রসুনেও কমেছে দাম।
ক্রেতারা বলছেন, বৃষ্টির অজুহাতে প্রায় সব জিনিসের দাম বেড়ে গেছে। জান ফেটে যাচ্ছে। টাকা ফুরালেও ব্যাগ ভরে না। বিক্রেতারা বলছেন, বন্যায় অনেক এলাকা ডুবে যাওয়ায় সরবরাহ কমে গেছে। এ জন্য বাড়তি দাম। দাম বেড়ে যাওয়ায় বিক্রি কমে গেছে।
বৃহস্পতিবার (৪ জুলাই) রাজধানীর কারওয়ান বাজারসহ বিভিন্ন বাজার ঘুরে এমনই তথ্য পাওয়া গেছে।
পেঁয়াজের কেজি ১০৫ টাকা
কারওয়ান বাজারের বিভিন্ন আড়তে পেঁয়াজের মজুত বাড়লেও দাম কমেনি। বরং দেখা গেছে উল্টো চিত্র। আড়তেই ৯৬-৯৮ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে বলে জানান মাতৃভান্ডার বাণিজ্যালয়ের শহিদুল আলম। তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের বেশি দামে কেনা। কয়েক দিন থেকেই চড়া বাজার। মনে হয় আর কমবে না।’ সেই পেঁয়াজই খুচরা পর্যায়ে ৫২০ টাকা পাল্লা বা ১০৫ টাকা কেজি।
এ ব্যাপারে খুচরা বিক্রেতা এরশাদ খবরের কাগজকে বলেন, ‘পেঁয়াজের দাম বেড়ে গেছে। কমার আর কোনো সম্ভাবনা নেই।’
এ সময় খোলশেদ নামে এক ক্রেতা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘কিনব কী? বুঝতে পারছি না। সব জিনিসের দাম বেশি। টাকা শেষ হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু ব্যাগ ভরে না। মনের দুঃখে বাজার করার ইচ্ছা হয় না। কিন্তু খেতে তো হবে। এ জন্য বাজারে আসতে হচ্ছে।’ অন্যান্য বাজারেও বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে পেঁয়াজ।
তবে ফরিদপুরের পেঁয়াজ পাইকারিতে কিছুটা কমে ৯২-৯৪ টাকা কেজি বিক্রি হতে দেখা গেছে। এ জন্য বিভিন্ন খুচরা বাজারেও ৯৫-১০০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। পাইকারি বাজার শ্যামবাজারেও পেঁয়াজের দাম বেশি বলে বিক্রেতারা জানান।
তবে রসুন ও আদার দাম কমেছে। সপ্তাহের ব্যবধানে ২২০-২৪০ টাকা কেজির রসুন ২০০-২২০ টাকা ও ৩০০-৩২০ টাকার আদা কমে ২০০-২৪০ টাকায় নেমেছে।
আলুর দাম ৬০-৬৫ টাকা কেজি
পেঁয়াজের মতোই আলুতেও কোনো সুখবর নেই। রাজধানীর কারওয়ান বাজারের পাইকারি বিক্রেতা বিক্রমপুর বাণিজ্যালয়ের সবুজ বলেন, ‘ঈদের পর কমবে মনে হলেও কমছে না দাম। বরং বাজারে উল্টো চিত্র দেখছি।’
মুন্সীগঞ্জের আলু ৫৫-৫৮ টাকা কেজি বিক্রি হয়। কমার কোনো লক্ষণ নেই। কারণ বর্ষাকালে অন্যান্য সবজি কম হওয়ায় আলুর চাহিদা বাড়ছে। অন্যান্য বাজারেও একই চিত্র। বাড়ছে আলুর দাম। ৬০ টাকা কমে পাওয়া যায় না।
কেজিতে ১০-২০ টাকা বেড়ে সবজির দাম
কয়েক দিন থেকে টানা বৃদ্ধির অজুহাতে বেড়ে গেছে সবজির দাম। খুচরা বিক্রেতারা জানান, আগের সপ্তাহের চেয়ে বৃষ্টির কারণে অনেক সবজির দাম কেজিতে ১০-২০ টাকা বেড়ে গেছে। বেগুন ৮০-১২০ টাকা, পটোল, ঝিঙে, ধুন্দুল ৫০-৬০ টাকা, করলা ৭০-৮০ টাকা, শসা ৮০-১০০ টাকা, লেবুর হালি ২০-৩০ টাকা, ঢ্যাঁড়স ৪০-৫০ টাকা, মিষ্টিকুমড়া ৩০-৪০ টাকা, লাউ ও চালকুমড়ার পিস ৭০-৯০ টাকা। কচুরলতির কেজি ৮০-১০০ টাকা, কচুরমুখী ৮০-১০০ টাকা, বরবটি ১০০ টাকা কেজি। এ ছাড়া পুঁইশাকের আঁটি ৩০ টাকা, লালশাক, পাট ও কচুশাকের আঁটি ১৫-২০ টাকা বলে বিক্রেতারা জানান।
চালের দামও উর্ধ্বমুখী
সম্প্রতি বোরো ধান উঠে গেছে। তার পরও কমছে না চালের দাম। বরং বর্ষার অজুহাতে সপ্তাহের ব্যবধানে আটাশ ও মোটা চালের খুচরা বাজারে কেজিতে ২-৩ টাকা বেড়েছে। তবে আগের মতোই মিনিকেট চালের দাম ৭০-৭২ টাকা।
খুচরা বিক্রেতারা জানান, মোজাম্মেলসহ অন্যদের চালের দাম ৭০-৭২ টাকা। তবে আগের সপ্তাহে আটাশ চাল ৫২-৫৫ টাকা বিক্রি হলেও গতকাল তা ৫৮ টাকা ও ৫০-৫২ টাকার মোটা চাল ৫৫ টাকা কেজি বিক্রি করা হচ্ছে বলে কারওয়ান বাজারের ইয়াসিন স্টোরের মো. ইয়াসিন জানান।
তিনি আরও বলেন, ‘ঈদের পরে আটাশ চাল ও মোটা চালের দামটা বেড়েছে।’
ফের বাড়ল জিরার দাম
বিক্রেতারা জানান, ঈদের পর জিরার দাম কিছুটা বেড়েছে। খুচরা বিক্রেতা ইয়াসিন জানান, আগে ৮০০ টাকা বিক্রি করলেও বর্তমানে ৯০০ টাকা কেজি জিরা।
তিনি বলেন, সব জিনিসের দাম বেড়ে যাওয়ায় কাস্টমার কমে গেছে। এর ফলে বিক্রিও কমে গেছে। আগের মতোই ছোলা ১১০ টাকা, বোতলজাত সয়াবিন তেলের লিটার ১৬৭ টাকা, পাঁচ লিটার ৭৯০-৮১০ টাকা, ২ কেজি আটা ১০০-১২০ টাকা কেজি, খোলা চিনি ১৩০ টাকা, প্যাকেট চিনি ১৩৫ টাকা, দেশি প্যাকেজজাত চিনি ১৭০ টাকা কেজি বিক্রি করতে দেখা গেছে।
পোলট্রির দাম কমে ১৭০ টাকা কেজি
গত সপ্তাহে পোলট্রি মুরগি ১৭৫ থেকে ১৮০ টাকা বিক্রি হলেও গতকাল ১০ টাকা কমে ১৬৫-১৭০ টাকা কেজি হয়েছে। তবে আগের মতোই সোনালি মুরগি ৩১০-৩২০ টাকা ও দেশি মুরগি ৬৫০ টাকা কেজি বলে খুচরা বিক্রেতারা জানান।
কারওয়ান বাজারের আদর্শ পোলট্রি হাউসের জহির বলেন, ‘চাহিদা কম থাকায় পোলট্রির দাম কমেছে। ১৭০ টাকা বিক্রি করা হচ্ছে।’ অন্যান্য খুচরা বিক্রেতারা জানান, ঈদের পর কোনো মুরগির দাম বাড়েনি।