![তিন মাসের মধ্যে টয়ো নিটেক্সের উৎপাদন কার্যক্রম শুরুর নির্দেশ](uploads/2024/07/04/Toyo-Nitex-1720078832.jpg)
পুঁজিবাজারে বস্ত্র খাতের তালিকাভুক্ত টয়ো নিটেক্সের উৎপাদন কার্যক্রম তিন মাসের মধ্যে শুরু করার নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। একই সঙ্গে নতুন মালিকানা বা মালিকানা হস্তান্তরের পর যেকোনো অমীমাংসিত সমস্যার সমাধান করতে বলা হয়েছে।
দেনার দায়ে ২০১৯ সালে বন্ধ হয়ে যাওয়া মিথুন নিটিং অ্যান্ড ডায়িং লিমিটেডের নাম পরিবর্তন করে টয়ো নিটেক্স নামকরণ করা হয়। একই সঙ্গে মালিকানা পরিবর্তন করা হয়। নতুন মালিককে তিন মাসের মধ্যে আবার উৎপাদন কাজ শুরু করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
সম্প্রতি চীনভিত্তিক কোম্পানি ডেস্টিনেশন এক্সপ্রেস ইন্টারন্যাশনাল ডেক্স-আই কোম্পানিকে শর্ত সাপেক্ষে মিথুন নিটিংয়ের মালিকানা অধিগ্রহণের অনুমোদন দেয় বিএসইসি। বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষা এবং ব্যবসায়িক কার্যক্রম পুনরায় শুরু করার জন্য কমিশন এই অনুমোদন দিয়েছে। ডেস্টিনেশন এক্সপ্রেস ইন্টারন্যাশনাল (ডিইএক্স-১) লিমিটেড একটি চীনভিত্তিক কুরিয়ার পরিষেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান।
শর্তানুসারে প্রয়াত মো. মোজাম্মেল হকের কাছে থাকা ৫৪ লাখ ৪৯ হাজার ৫৮টি শেয়ার তার আইনি উত্তরাধিকারীদের মাধ্যমে এবং অন্যদের মাধ্যমে শেয়ার ক্রয় চুক্তি অনুযায়ী ডিইএক্স-১-এ হস্তান্তর করা হবে। আইনগত উত্তরাধিকারীদের মধ্যে রয়েছেন মিসেস রাবেয়া খাতুন, মো. রফিকুল হক, মো. মাহবুব-উল-হক, মো. আতিকুল হক, মো. রবিউল হক, মিসেস সৈয়দা হাসিনা হক, মাহবুবা হক, মাহমুদা হক, মাহফুজা হক ও মনসুরা হক।
জানা গেছে, কোম্পানি হস্তান্তরের জন্য নতুন মালিককে কোম্পানিতে ৩০ শতাংশ শেয়ার ধারণ করতে হবে। একই সঙ্গে বেসিক ব্যাংকের ঋণ পরিশোধের জন্য দায়ী থাকবেন, যা প্রথমে ৩ কোটি টাকা ছিল, এখন সেটা বেড়ে প্রায় ৫ কোটি টাকা হয়েছে। বিএসইসি কর্তৃক আরোপিত জরিমানাও তাদের পরিশোধ করতে হবে।
তথ্যে দেখা যায়, পরিচালক এবং বিনিয়োগকারীদের হাতে থাকা শেয়ারগুলো আরও তিন বছরের জন্য ব্লক মডিউলে লক করা হবে। সিকিউরিটিজ আইন অনুসারে এই শেয়ারগুলো আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণের জন্য জামানত বা বন্ধক হিসাবে ব্যবহার করা যাবে না।
শেয়ার স্থানান্তর নিষ্পত্তি অবশ্যই একটি ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে করতে হবে। ক্রেতা এবং বিক্রেতাদের হস্তান্তর সম্পাদনের সাত দিনের মধ্যে কমিশনের কাছে একটি কমপ্লায়েন্স রিপোর্ট জমা দিতে হবে।
ডিএসই থেকে প্রাপ্ত সর্বশেষ তথ্যমতে, টয়ো নিটেক্সের অনুমোদিত মূলধন ৮০ কোটি টাকা এবং পরিশোধিত মূলধন ৩২ কোটি ৪৯ লাখ টাকা। এর শেয়ার সংখ্যা প্রায় ৩ কোটি ২৫ লাখ। মোট শেয়ারের মধ্যে উদ্যোক্তা বা পরিচালকদের কাছে ১৭ দশমিক ২০ শতাংশ, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কাছে ১৫ দশমিক ৪৯ শতাংশ, বিদেশি বিনিয়োগকারীদের কাছে শূন্য দশমিক ১৬ শতাংশ এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে ৬৭ দশমিক ১৫ শতাংশ শেয়ার রয়েছে।
২০১৭ সাল থেকে লোকসানে থাকা কোম্পানিটির কাছে বেপজাসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের পাওনা ছিল প্রায় ২০ কোটি টাকা। বিদেশি ক্রেতাদের সংগঠন অ্যাকর্ডের নির্দেশনা অনুযায়ী সংস্কার করতে না পারায় কোম্পানিটিকে কালো তালিকাভুক্ত করা হয়। ফলে বিদেশি ক্রেতারা ক্রয়াদেশ বন্ধ করে দেন।
এরপর গ্যাস, বিদ্যুৎ, পানির বিল এবং প্লটের লিজ বাবদ বকেয়া কয়েক কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাওয়ায় ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে বেপজা টয়ো নিটেক্সের সব ধরনের সেবা সংযোগ বন্ধ করে দেয়। যার ফলে কোম্পানিটির কারখানা বন্ধ হয়ে যায়। এরপর শ্রমিকদের মজুরিসহ বেশ কিছু বকেয়া ঋণ আদায়ের জন্য বেপজা কারখানার সম্পদ নিলাম করে।
বস্ত্র খাতের এ কোম্পানিটি ১৯৯৪ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়ে বর্তমানে ‘জেড’ ক্যাটাগরিতে অবস্থান করছে। ৮০ কোটি টাকা অনুমোদিত মূলধনের বিপরীতে পরিশোধিত মূলধন ৩২ কোটি ৪৯ লাখ ১০ হাজার টাকা। রিজার্ভের ঘাটতির পরিমাণ ১৪ কোটি ৪৮ লাখ টাকা। কোম্পানিটির ৩ কোটি ২৪ লাখ ৯১ হাজার ১৬২টি শেয়ার রয়েছে।
টয়ো নিটেক্সের আর্থিক প্রতিবেদন বিশ্লেষণে দেখা যায়, ২০১৬ সালে ৬ কোটি ৯৯ লাখ ২০ হাজার টাকা কর-পরবর্তী মুনাফা করেছিল কোম্পানিটি। পরের বছর, অর্থাৎ ২০১৭ সালে ৫ কোটি ৯৭ লাখ ২০ হাজার টাকা লোকসান করে কোম্পানিটি। ২০১৮ সালে লোকসান আরও বেড়ে হয় ৭ কোটি ২৭ লাখ ২০ হাজার টাকা।
সর্বশেষ ২০১৯ সালের মার্চে তৃতীয় প্রান্তিকের যে অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়, তাতে কোম্পানিটির লোকসান দেখানো হয় ৩ কোটি ৯৯ লাখ ৩০ হাজার টাকা। এরপর আর কোনো আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশই করা হয়নি।