সৌদি আরবের গাড়ি নির্মাণশিল্প উল্লেখযোগ্য প্রবৃদ্ধি অর্জন করছে। সরকারি উদ্যোগ, কৌশলগত ভৌগোলিক অবস্থান এবং উৎপাদন কেন্দ্র হয়ে ওঠার উচ্চাভিলাষী পরিকল্পনায় ভর করে দেশটির অটোমোবাইল খাতের এই প্রবৃদ্ধি হয়েছে। এসব কারণ সৌদি আরবকে বিশ্ববাজারে গাড়ি নির্মাণশিল্পের একটি গুরুত্বপূর্ণ দেশে পরিণত করছে। খবর আরব নিউজের।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ব্যবস্থাপনা পরামর্শক সংস্থা বেইন অ্যান্ড কোম্পানির অংশীদার করিম হেনাইনের মতে, সৌদি আরবের এই প্রবৃদ্ধির পেছনের মূল কারণ হলো দেশটির একটি তরুণ জনসংখ্যা, বেশিসংখ্যক নারীচালক এবং প্রচুর প্রবাসীর আগমন। এর ফলে দেশটিতে বার্ষিক ৬ লাখের বেশি নতুন গাড়ি বিক্রি হয়।
হেনাইন আরব নিউজকে বলেন, বাজারটি দ্রুত বৃদ্ধির জন্য প্রস্তুত, অনেক পশ্চিমা প্রতিপক্ষকে ছাড়িয়ে গেছে। তিনি আরও বলেন, সৌদি আরবে যানবাহনের মালিকানার হার পশ্চিমা বাজারের তুলনায় বেশি। পরিবারের বৃহৎ আকার, কম উন্নত গণপরিবহন পদ্ধতি এবং ব্যক্তিগত গাড়ির ওপর নির্ভরতার মতো একটি শক্তিশালী সংস্কৃতির কারণে এই দেশটিতে গাড়িশিল্পের বিকাশ হচ্ছে।
অটোমোবাইলের আন্তর্জাতিক প্রদর্শনী অটোমেকানিকা রিয়াদ ও মেসে ফ্রাঙ্কফুর্ট মিডল ইস্টের শো ম্যানেজার অ্যালি হেফনির মতে, প্রধান বাণিজ্য রুটের সংযোগস্থলে সৌদি আরবের কৌশলগত ভৌগোলিক অবস্থান একটি আঞ্চলিক অটোমোবাইল হাব হিসেবে দেশটির মর্যাদাকে আরও বাড়িয়ে তুলছে। অ্যালি হেফনি আরব নিউজকে বলেন, সৌদি আরবের সরকার গাড়িশিল্পে সরাসরি বিনিয়োগের উদ্যোগ হিসেবে একটি অনন্য পদ্ধতি গ্রহণ করছে।
অ্যালি হেফনির মতে, সৌদি আরবের গাড়িশিল্পের অংশীজনেরা তাদের আন্তর্জাতিক সহযোগীদের মতো সক্রিয়ভাবে উদ্ভাবনী কার্যক্রম গ্রহণ, গবেষণা ও উন্নয়নে বিনিয়োগ এবং শিল্পের স্থায়িত্বকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে। বৈশ্বিক বাজারে দীর্ঘমেয়াদি কার্যকারিতা ও প্রতিযোগিতা নিশ্চিত করতে সৌদি সরকার এই গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপগুলো নিচ্ছে।
সৌদি আরবভিত্তিক সংবাদমাধ্যমটির খবরে বলা হয়, নকশা, উন্নয়ন ও উৎপাদন, সেই সঙ্গে বিতরণ, রক্ষণাবেক্ষণ ও মেরামত এবং কাস্টমাইজেশনকে অন্তর্ভুক্ত করে অটোমোবাইল খাত। খাতটি সৌদি আরবের উচ্চাভিলাষী লক্ষ্য ‘ভিশন ২০৩০’ অর্জনে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। হেনাইন উল্লেখ করেন, সৌদি আরব অটোমোবাইল উৎপাদন কেন্দ্র গড়ে তোলার একটি উচ্চাভিলাষী লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে। এই লক্ষ্যে মূল সরঞ্জাম প্রস্তুতকারকদের পাশাপাশি টায়ার-১ (গাড়ির প্রধান উপাদান) সরবরাহকারীদের স্থানীয়ভাবে কার্যক্রম শুরু করার ক্ষেত্রে কীভাবে সুবিধা দেওয়া যায় সে বিষয়ে ইতোমধ্যেই চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে।
হেনাইন বলেন, শিল্পটি এখনো নবজাতক এবং এটি অন্যান্য প্রতিষ্ঠিত অটোমোবাইল উৎপাদন ক্লাস্টারগুলোর পরিপক্ব হতে কিছুটা সময় নেবে। তিনি আরও বলেন, স্বচালিত যানবাহন প্রযুক্তিতে প্রচুর বিনিয়োগ করছে সৌদি আরব। অদূর ভবিষ্যতে রোবোট্যাক্সি ও রোবোশাটল চালু করার পরিকল্পনা রয়েছে।
বেইন অ্যান্ড কোম্পানির নির্বাহী আরও বলেন, এই উদ্যোগগুলো অত্যাধুনিক অটোমোবাইল প্রযুক্তি গ্রহণ এবং একীভূত করার জন্য সৌদি আরবের আত্মত্যাগের দৃষ্টান্ত প্রদর্শন করে। এই উদ্যোগ দেশটিকে গাড়িশিল্পের ভবিষ্যতে বিশ্বব্যাপী নেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করছে।
ফক্সওয়াগেন মিডল ইস্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ম্যাথিয়াস জিগলারের মতে, সৌদি আরবের মোটরগাড়িশিল্প উল্লেখযোগ্য পরিবর্তনের সম্মুখীন হচ্ছে। এই খাতের গতিশীলতাকে প্রভাবিত করে এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো বৈশ্বিক এসইউভি পছন্দের সঙ্গে সৌদি গ্রাহকদের বড় আকারের পরিবার কেন্দ্রিক সাত সিটের গাড়ির প্রতি আগ্রহের মিল।
আরও সহজ করে বলতে গেলে, এসইউভি গাড়িগুলো মধ্যপ্রাচ্যের অনেক দেশেই জনপ্রিয়, কারণ এগুলো বালুময় রাস্তায় চলার জন্য উপযুক্ত এবং বড় পরিবারের জন্য পর্যাপ্ত জায়গা থাকে এসব গাড়িতে।
জিগলার আরব নিউজকে বলেন, পারিবারিক পরিবহনের ওপর এই ফোকাসটি শক্তিশালী অবকাঠামো এবং বিস্তৃত সড়ক নেটওয়ার্ক দ্বারা আরও প্রসারিত হয়েছে। তিনি বিশদভাবে বলেন, আরামদায়ক বিষয়টি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিবেচনা হিসেবে গাড়ির গ্রাহকদের মধ্যে আবির্ভূত হয়। উন্নত আরাম ও সুরক্ষা বৈশিষ্ট্যগুলোর পাশাপাশি ইন-কার কানেক্টিভিটির কারণে মানুষের গাড়ি কেনায় আগ্রহ বাড়ে। প্রসঙ্গত, যাত্রীদের স্মার্টফোন, ট্যাবলেট ও অন্যান্য ডিভাইসের সঙ্গে সংযুক্ত হতে সুযোগ দেয় ইন-কার কানেক্টিভিটি।