চলতি বছরের জুন মাসে রাশিয়া থেকে ভারতের তেল আমদানি ১৩ মাসের মধ্যে প্রায় সর্বোচ্চ স্তরে পৌঁছেছে। রাশিয়ার অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের প্রধান গ্রেড ‘ইউরালস’-এর রেকর্ড পরিমাণ আমদানির কারণে এমনটি হয়েছে।
মূলত, মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর থেকেও তুলনামূলক কম দামে সরবরাহ করায় রাশিয়া থেকে ভারতের জ্বালানি তেল আমদানি বেড়েছে। তেল ট্যাংকার ট্র্যাকিং ডেটা এবং শিল্প বিশেষজ্ঞরা এ তথ্য জানিয়ছেন। খবর ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের।
ভারতভিত্তিক ইংরেজি দৈনিকটির খবরে বলা হয়, রাশিয়ান পরিশোধনাগার অবকাঠামোতে ইউক্রেনের ড্রোন হামলা এবং প্রতিযোগী মধ্যপ্রাচ্যের অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের তুলনায় বড় ধরনের মূল্য পার্থক্যের কারণে রপ্তানি বাজারে রাশিয়ার অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের সরবরাহ বেড়েছে। এসব কারণে সাম্প্রতিক মাসগুলোতে ভারতে রাশিয়ান তেলের সরবরাহ বেড়েছে।
খবরে বলা হয়, গত কয়েক মাস ধরে ছাড় দেওয়া মূল্যে ভারতের রাশিয়ান তেল আমদানির ঊর্ধ্বগতি, সবচেয়ে বেশি প্রভাব ফেলেছে সৌদি আরব থেকে আমদানির ওপর। পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, জুন মাসে রিয়াদ থেকে আমদানি করা জ্বালানি তেলের পরিমাণ এক দশকেরও বেশি সময়ের মধ্যে মাসিক সর্বনিম্ন স্তরে নেমে এসেছে।
পণ্যবাজার বিশ্লেষক সংস্থা কেপলারের প্রাথমিক জাহাজ ট্র্যাকিং ডেটা অনুসারে, ভারতীয় পরিশোধনাকারীরা জুন মাসে মোট দৈনিক ২১ লাখ ৩০ হাজার ব্যারেল রাশিয়ান অপরিশোধিত তেল আমদানি করেছে। এটি গত বছরের মে থেকে সর্বোচ্চ, যে মাসটিতে রাশিয়ান অপরিশোধিত জ্বালানি তেল আমদানির পরিমাণ দৈনিক ২১ লাখ ৫০ হাজার ব্যারেলের রেকর্ড উচ্চতায় পৌঁছে ছিল। জুন মাসে ভারতের রাশিয়ান জ্বালানি তেল আমদানি তার আগের মাসের তুলনায় ৭ দশমিক ২০ শতাংশ বেশি ছিল এবং এই মাসে দেশটি থেকে ভারতের মোট জ্বালানি তেল আমদানির পরিমাণ ছিল ৪৫ শতাংশের মতো।
সৌদি আরব হলো ভারতের অশোধিত তেলের তৃতীয় বৃহত্তম উৎস বাজার। গত জুন মাসে দেশটি থেকে জ্বালানি তেল আমদানি ২৫ শতাংশের বেশি কমে দশমিক দৈনিক ৪ লাখ ১০ হাজার ব্যারেলে দাঁড়িয়েছে, যা গত ১০ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। সৌদি আরব থেকে আমদানি কমে যাওয়ার প্রাথমিক কারণ হিসেবে দেখা হয়, রাশিয়ান অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের পর্যাপ্ত প্রাপ্যতা এবং রিয়াদের তুলনায় রাশিয়া থেকে পাওয়া অব্যাহত মূল্য সুবিধা।
কেপলারের অপরিশোধিত জ্বালানি বিশ্লেষণ বিভাগের প্রধান ভিক্টর কাটোনা বলেছেন, ‘নিশ্চিত করে বলা যায়, রাশিয়া থেকে অধিক পরিমাণে জ্বালানি তেল আমদানির প্রভাবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সৌদি আরবের দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি (টার্ম ভলিউম) ভিত্তিক সরবরাহ। জুন মাসে সৌদি আরব থেকে আমদানি করা জ্বালানি তেলের পরিমাণ ছিল ২০১৪ সালের জানুয়ারি পর থেকে মাসিক হিসাবে সর্বনিম্ন। শিল্প পর্যবেক্ষকদের মতে, সৌদি আরবের ‘মিডিয়াম-সাওর’ গ্রেডের তুলনায় ইউরালের দামে ব্যারেলপ্রতি ৬ থেকে ৭ ডলারের মূল্য সুবিধা রয়েছে।
ইউরালস হলো একটি মাঝারি সলফারযুক্ত (মিডিয়াম সাওর) অপরিশোধিত জ্বালানি তেল। এটিকে রাশিয়ার প্রধান তেল হিসেবে বিবেচনা করা হয় এবং ভারতের রাশিয়ান তেল আমদানির প্রধান ভিত্তি। জুন মাসে ভারতীয় পরিশোধনাগারগুলো সম্মিলিতভাবে সর্বোচ্চ ১৬ লাখ ১০ হাজার বিপিডি ইউরালস ক্রুড (অপরিশোধিত জ্বালানি তেল) কিনেছে। জুন মাসে ভারতের মোট রাশিয়ান জ্বালানি তেল আমদানির মধ্যে ইউরালস ক্রুডের পরিমাণ ছিল তিন-চতুর্থাংশ। এটা স্পষ্ট যে, ভারতের ঐতিহ্যবাহী পশ্চিম এশীয় সরবরাহকারীদের ক্রুড গ্রেডের তুলনায় ইউরালসের দামের পার্থক্য এত বেশি ছিল যে, ভারতীয় পরিশোধনাগারগুলো রাশিয়ান গ্রেডকেই বেছে নিতে বাধ্য হয়েছে।
ইউক্রেনের যুদ্ধের আগে ভারতে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের শীর্ষ দুই সরবরাহকারী ছিল ইরাক ও সৌদি আরব। কিন্তু ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে মস্কোর আক্রমণের পর পশ্চিমারা যখন রাশিয়ান জ্বালানি সরবরাহ বন্ধ করা শুরু করে, তখন রাশিয়া তার অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের ওপর ছাড় দিতে শুরু করে। আর এই সুযোগে ভারতীয় পরিশোধনকারীরা ছাড় পাওয়া দামে ব্যারেলগুলো কিনে নিতে শুরু করে।