![রাফায় আরও প্রাণহানি, দায় অস্বীকার ইসরায়েলের](uploads/2024/05/30/Lead-1717038166.jpg)
রাফায় এক শিবিরে ইসরায়েলি ট্যাংকের হামলায় অন্তত ২১ জন মারা গেছেন বলে জানিয়েছেন গাজার কর্মকর্তারা। নিহতদের মধ্যে ১৩ জন নারী ও কন্যাশিশু রয়েছে। তবে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী এরকম কোনো হামলা চালায়নি বলে দাবি করেছে।
বিবিসির প্রতিবেদন বলছে, যে এলাকায় হামলা হয়েছে বলে দাবি করা হচ্ছে, সে এলাকা বেসামরিকদের জন্য ‘নিরাপদ’ হিসেবে নির্দিষ্ট করা এলাকা।
এর আগে আন্তর্জাতিক ন্যায়বিচার আদালতের নির্দেশ অমান্য করে রাফায় প্রবেশ করে ইসরায়েলি ট্যাংক। বিষয়টি নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলের নিন্দার মুখে পড়তে হয় ইসরায়েলকে। অন্যদিকে স্পেন, আয়ারল্যান্ড ও নরওয়ে গত মঙ্গলবার রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেয় ফিলিস্তিনকে।
ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত ওই তিন দেশের এ পদক্ষেপের মধ্য দিয়ে কার্যত বিশ্বমঞ্চে আরও একাকি হয়ে গেল ইসরায়েল।
রাফা প্রশ্নে নিজ অবস্থান বারবারই স্পষ্ট করেছে ইসরায়েলের ঘনিষ্ঠ মিত্র যুক্তরাষ্ট্র। ইসরায়েল যাতে বেসামরিকদের সুরক্ষার ব্যবস্থা না করে রাফায় অভিযান শুরু না করে সে বিষয়ে একাধিকবার ইসরায়েলি নেতৃস্থানীয়দের সাবধান করেছে তারা।
তবে হোয়াইট হাউস মুখপাত্র জন কিরবি গত মঙ্গলবার বলছেন, দক্ষিণ গাজার রাফায় ইসরায়েল পূর্ণ মাত্রার অভিযান শুরু করেছে বলে মনে করছেন না তারা। তিনি আরও জানান, মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের ঠিক করে দেওয়া সতর্কসীমা অতিক্রম করেনি ইসরায়েলি বাহিনী।
ইসরায়েলের হামলায় অন্তত ৪৫ ফিলিস্তিনি মারা যাওয়ার বিষয়টি নিয়েও প্রশ্ন রাখা হয় কিরবির কাছে। নিহতদের বেশির ভাগই নারী, শিশু ও বয়োবৃদ্ধ। ইসরায়েল দাবি করছে, রবিবারের ওই হামলায় হামাসের দুই কর্মকর্তা মারা গেছেন। সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে ওই হামলা প্রসঙ্গে কিরবি বলেন, সেটি ‘দুঃখজনক’ ও ‘মর্মান্তিক’। হোয়াইট হাউস মুখপাত্র আরও বলেন, ‘এ সংঘাতের কারণে কোনো নির্দোষ ব্যক্তিরই প্রাণ হারানো উচিত নয়।’
কিরবি উল্লেখ করেন, হামলার বিষয়টি নিয়ে ইসরায়েলি বাহিনী দ্রুত ও যথাযথ তদন্ত করে কি না সে বিষয়টিতেও নজর রাখছে যুক্তরাষ্ট্র।
জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ রাফায় ইসরায়েলি স্থল অভিযান নিয়ে জরুরি বৈঠক করেছে। পাশাপাশি জাতিসংঘ জানিয়েছে, গত তিন সপ্তাহে তারা প্রায় ১৭০টি মানবিক সহায়তার ট্রাক পেয়েছে। অথচ প্রতিদিনের চাহিদা মেটানোর জন্য প্রয়োজন ৫০০ ট্রাক। তারা যা পেয়েছেন, তা ‘সমুদ্রে একবিন্দু পানির শামিল’।
ইসরায়েল মে মাসের শুরুতে রাফায় অভিযান শুরু করে। এর ফলে নতুন করে আবারও প্রায় ১০ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। ইসরায়েলি বাহিনীর নির্বিচার হামলায় গোটা গাজা পরিণত হয়েছে ধ্বংসস্তূপে। মানুষের নতুন করে আশ্রয় নেওয়ার মতো নিরাপদ কোনো জায়গা নেই।
গত বছরের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলি ভূখণ্ডে হামাসের হামলার মধ্য দিয়ে নতুন করে শুরু হয় সংঘাত। সেবার হামাসের হাতে প্রায় ১২০০ ইসরায়েলি প্রাণ হারায়। এ ছাড়া তারা সঙ্গে করে নিয়ে আসে প্রায় ২৫০ জিম্মিকে। পরে যুদ্ধ ঘোষণা করে ইসরায়েল। হামাসকে নির্মূলের লক্ষ্য নিয়ে মাঠে নামে। তাদের নির্বিচার হামলায় সাত মাসে ৩৬ হাজারেরও বেশি মানুষ মারা গেছেন, যাদের বেশির ভাগই নারী, শিশু ও বয়োবৃদ্ধ। আহত হয়েছেন ৮১ হাজার ১৩৬ জন।
৬ লাখ শিশু ঝুঁকিতে
রাফায় ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর আক্রমণে ৬ লাখ শিশু ঝুঁকির সম্মুখীন হয়েছে। এদের অনেকেই এখন অপুষ্টিতে ভুগছে। অনেকে আবার ভুগছে নানা ধরনের শারীরিক অক্ষমতায়। জাতিসংঘের শিশুবিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফ এ তথ্য জানিয়েছে।
ইউনিসেফের বেসরকারি তহবিল ও অংশীদারি বিষয়ক পরিচালক কার্লা হাদ্দাদ মার্দিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে লিখেছেন, ‘রাফা শিশুদের শহর। গাজার শিশুদের যুদ্ধবিরতি প্রয়োজন যাতে তারা বাড়তি কষ্টের হাত থেকে রেহাই পেতে পারে। সূত্র: বিবিসি, আল জাজিরা