সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনারকে হত্যার ঘটনায় গ্রেপ্তার তিন আসামির রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।
শুক্রবার (২৪ মে) আদালত এই নির্দেশ দেন। আসামিদের রিমান্ড চেয়ে পুলিশের করা আবেদনের ওপর শুনানি নিয়ে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট দিলরুবা আফরোজ তিথির আদালত এ আদেশ দেন।
রাজধানীর শেরে বাংলা নগর থানা পুলিশের সাধারণ নিবন্ধন কর্মকর্তা (আদালতে দায়িত্বরত) এসআই জালাল উদ্দিন এই তথ্য নিশ্চিত করেন।তিনি জানান, রিমান্ড শুনানিতে কোনো আইনজীবী আসামিদের পক্ষে দাঁড়াননি।
রাষ্ট্রপক্ষে ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালতের অতিরিক্ত পিপি আব্দুস সাত্তার দুলাল বলেন, এই ঘটনাটি নৃশংস। কাউকে এভাবে হত্যা করা যায় ভাবলে গা শিউরে ওঠে। সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে অবশ্যই এ মামলায় রিমান্ড পাওয়া উচিৎ। আর কাঠগড়ায় দাঁড়ানো শিলাস্তি রহমান আদালতের কাছে দাবি করেন, এসব ঘটনার কিছুই তিনি জানেন না।
পুলিশের ১০ দিনের রিমান্ড আবেদনের ওপর শুনানি নিয়ে আদালত আসামিদের ৮ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। শুক্রবার (২৪ মে) তাদেরকে আদালতে হাজির করে রিমান্ড আবেদন করে পুলিশ। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও ডিবি পুলিশের ওয়ারী জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার মাহফুজুল ইসলাম আদালতে এই রিমান্ড আবেদন করেন। রিমান্ড মঞ্জুর হওয়া তিন আসামি হলেন- শিমুল ভূইয়া ওরফে শিহাব ওরফে ফজল মোহাম্মদ ভূইয়া ওরফে আমানুল্যা সাইদ, তানভীর ভূইয়া ও শিলাস্তি রহমান।
উল্লেখ্য এমপি আনার গত ১২ মে চিকিৎসার জন্য ভারতে যান। সেখানে পশ্চিমবঙ্গে বরাহনগর থানার মণ্ডলপাড়া লেনে গোপাল বিশ্বাস নামে এক বন্ধুর বাড়িতে। ১৩ মে ডাক্তার দেখানোর কথা বলে বাড়ি থেকে বের হন তিনি। এরপর থেকেই রহস্যজনকভাবে নিখোঁজ হন আনার।
পরে গত ১৮ মে বরাহনগর থানায় আনার নিখোঁজের বিষয়ে একটি জিডি করেন তার বন্ধু গোপাল বিশ্বাস। এরপরও খোঁজ মেলেনি তিনবারের এই সংসদ সদস্যের। তিনদিন পর গত ২২ মে গণমাধ্যমে খবর আসে, কলকাতার পার্শ্ববর্তী নিউটাউন এলাকায় বহুতল সঞ্জীবা গার্ডেনস নামে একটি আবাসিক ভবনের বিইউ ৫৬ নম্বর রুমে আনার খুন হয়েছেন। তবে এখনও তার মরদেহের সন্ধান মেলেনি।
এদিকে এমপি আনার নিখোঁজের পরিপ্রেক্ষিতে গত ২২ মে রাজধানী ঢাকার শেরেবাংলা নগর থানায় অপহরণ মামলা করেন তার মেয়ে মুমতারিন ফেরদৌস ডরিন। মামলায় তিনি কাউকে আসামি করেননি। পরে পুলিশ আটক এই তিনজনকে এই মামলায় আসামি করে।
মামলার এজাহারে ডরিন উল্লেখ করেন, ৯ মে রাত ৮টার দিকে আমার বাবা মানিক মিয়া অ্যাভিনিউর সংসদ সদস্য ভবনের বাসা থেকে গ্রামের বাড়ি ঝিনাইদহে যাওয়ার উদ্দেশ্যে রওনা হন। ১১ মে ৪টা ৪৫ মিনিটে বাবার সঙ্গে মোবাইলে ভিডিও কলে কথা বললে বাবার কথাবার্তায় কিছুটা অসংলগ্ন মনে হয়। এরপর বাবার মোবাইল ফোনে একাধিকবার ফোন দিলে বন্ধ পাই।
‘১৩ মে আমার বাবার ভারতীয় নম্বর থেকে হোয়াটসঅ্যাপে একটি মেসেজ আসে। মেসেজে লেখা ছিল- ‘আমি হঠাৎ করে দিল্লি যাচ্ছি, আমার সঙ্গে ভিআইপি আছে। আমি অমিত শাহের কাছে যাচ্ছি। আমাকে ফোন দেওয়ার দরকার নেই। পরে ফোন দেবো।’
‘এ ছাড়াও আরও কয়েকটি মেসেজ আসে। মেসেজগুলো বাবার মোবাইল ফোন ব্যবহার করে অপহরণকারীরা করে থাকতে পারে।’
মামলার এজাহারে আরও উল্লেখ করা হয়, আমরা বিভিন্ন জায়গায় বাবার খোঁজখবর করতে থাকি। আমার বাবার কোনো সন্ধান না পেয়ে বাবার বন্ধু গোপাল বিশ্বাস কলকাতার বারানগর পুলিশ স্টেশনে সাধারণ ডায়েরি করেন। বাবাকে খোঁজাখুজি অব্যাহত রাখি। পরবর্তীসময়ে বিভিন্ন গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জানতে পারি অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিরা পূর্বপরিকল্পিতভাবে বাবাকে অপহরণ করেছে। বাবাকে সম্ভাব্য সব স্থানে খোঁজাখুজি করেও পাইনি।
মাহমুদুল আলম/এমএ/